মঙ্গল গ্রহ। —ফাইল চিত্র।
মঙ্গলে মরুভুমি আছে, আছে নদীখাতও। কিন্তু পৃথিবীর মতো সেখানেও কি সাগর কিংবা
মহাসাগর ছিল?
অতীতে এক বার এমন সম্ভাবনার কথা তুলেছিলেন কয়েক জন বিজ্ঞানী। কিন্তু ‘প্রমাণের অভাবে’ সেই তত্ত্ব খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এ বার ফের সেই তত্ত্বকে উস্কে দিয়েছেন চার জন। তার মধ্যে আছেন দু’জন বাঙালিও। সম্প্রতি ‘মেরিন অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম জিয়োলজি’ পত্রিকায় তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তাঁরা দেখিয়েছেন যে, মঙ্গলে জেজেরো গহ্বরের কাছে যে ব-দ্বীপ ভূমিরূপ আছে তার গঠনের সঙ্গে জোয়ার-ভাটার সম্পর্ক আছে। মঙ্গলের উত্তর মেরুর কাছে থাকা মহাসাগরের অবস্থানের ফলেই সেই জোয়ার-ভাটা হত এবং তার ফলেই পলি জমে ওই ব-দ্বীপ তৈরি হয়েছিল।
এই গবেষণার অন্যতম শরিক তথা জার্মান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ইন ওমান-এর ফলিত ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক রজত মজুমদার বলছেন, ২০২১ সালে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পার্সিভারেন্স রোভার যে ছবি তুলেছে তা বিশ্লেষণ করেই এই সম্ভাবনা উঠে এসেছে। এই গবেষণায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব অ্যালবার্টার বিজ্ঞানী অক্টাভিয়ান ক্যাটুনিয়ান। আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অব প্রিটোরিয়ার
বিজ্ঞানী প্যাট্রিক জি এরিকসনও। গবেষণাপত্র লেখার সঙ্গে রজত যুক্ত করেছেন তাঁর মেয়ে, বর্তমানে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার পড়ুয়া সৃজনী মজুমদারকেও।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলের উত্তর মেরুর কাছে সমুদ্রের কথা আগে বলা হয়নি। তা ছাড়া, বিজ্ঞানীদের বড় অংশেরই মতামত ছিল যে মঙ্গলের উপগ্রহ আকারে অনেক ছোট হওয়ায় তার টানে জোয়ার-ভাটা হওয়া সম্ভব নয়। তাই ওই অঞ্চলে সাগরের বদলে হ্রদ ছিল বলেই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু জেজেরো-র কাছে যে ভূমিরূপ নাসার রোভারের চোখে ধরা পড়েছে তার স্তরীভবন প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে রজতেরা ভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছেন। তাঁদের মতে, জোয়ার-ভাটা না হলে ওই ধরনের পলির অধঃক্ষেপ পড়তে পারে না। ওই অঞ্চলের যে ভূমিরূপ দেখা গিয়েছে তার সঙ্গেও সমুদ্রের যোগ খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।
এই তথ্য বিশ্লেষণ করেই চার জনের ওই বিজ্ঞানীদল মনে করছেন যে বহু কোটি বছর
আগে মঙ্গলের জেজেরো বেসিনের সঙ্গে সমুদ্রের যোগ ছিল এবং ওই অঞ্চলকে ভূমিরূপের দিক থেকে সামুদ্রিক চরিত্রের বলেই দাবি করেছেন তাঁরা।
প্রায় দেড় বছর ধরে এই গবেষণাপত্র লেখার পরে সেটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকায়
গৃহীত হয়েছে। রজত বলছেন, ‘‘মঙ্গলে সমুদ্র থাকতে পারে না, এই বিশ্বাস যেন বিজ্ঞানীদের অনেকের মনেই গেঁথে গিয়েছে। ভিন্ন যুক্তি কিংবা সম্ভাবনার কথা অনেকেই মানতে চান না। তবে আমাদের প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পরে বিজ্ঞানীদের একাংশের কাছে প্রশংসাও পাচ্ছি।’’ তবে এই তত্ত্বকে আরও প্রামাণ্য করতে জেজেরো থেকে যে পাথরের নমুনা নাসা নিয়ে আসছে তারও নিবিড় ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলেও রজত জানিয়েছেন।
সমুদ্রের সঙ্গে যেহেতু প্রাণের সম্পর্ক আছে তাই মঙ্গলে সমুদ্রের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে লাল গ্রহে প্রাণ ছিল কি না, সেই গবেষণাও নতুন মাত্রা পেতে পারে মনে করছেন এই বিজ্ঞানীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy