—প্রতীকী ছবি।
রত্নভান্ডারের গোপন কুঠুরিতে কী আছে, তা নিয়ে আষাঢ়ে গল্প প্রচার বন্ধ করতে জগন্নাথ-ভক্তদের আকুল অনুরোধ করলেন প্রাক্তন বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তখন সবে টানা সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরে ভিতর ভান্ডারের সম্পদ স্থানান্তরিত করার কাজ সেরে সহযোগীদের সঙ্গে তিনি শ্রী মন্দিরের বাইরে এসেছেন।
মন্দিরের সিংহদ্বারে রথারূঢ় জগন্নাথের কাছে দাঁড়িয়েই রত্নভান্ডার সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শক কমিটির অধ্যক্ষ প্রাক্তন বিচারপতি রথ, মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক অরবিন্দ পাঢ়িরা কথা বলছিলেন। তার আগে দিনভর রত্নভান্ডারের অজানা অদেখা আশ্চর্য সম্পদ নিয়ে প্রবীণ সেবায়েতদেরই বিচিত্র জল্পনা চলছিল শ্রীক্ষেত্রে। জগন্নাথদেবের প্রথম সেবায়েত বলে খ্যাত, পুরীর গজপতি রাজা দিব্যসিংহদেব নিজে এ দিন রত্নভান্ডার পরিদর্শনের সময়ে ভিতরে গিয়েছিলেন। বাইরে এসে গজপতি রাজা বলেন, “ভিতর ভান্ডারের গভীরে কোনও সুড়ঙ্গ আছে কি না, তা লেজ়ার স্ক্যানিং করে বোঝা যাবে।” এতে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা দানা বাঁধে। এমনও রটে যায়, সুড়ঙ্গের গভীরে রত্নভান্ডার রক্ষক প্রলয়ঙ্কর শিব লোকনাথের সঙ্গী সাপেদের খিচুড়ি ভোগ নিবেদন করে তুষ্ট করতে হবে।
সন্ধ্যায় প্রাক্তন বিচারপতি রথ কিন্তু নিজে এসে বললেন, “দয়া করে রত্নভান্ডার নিয়ে মনগড়া গল্পকথা ছড়াবেন না। আমরা শুধু সিন্দুক খুলতে ইলেকট্রিক কাটার ব্যবহার করেছি। আর কারও সাহায্য ছাড়াই ভিতর ভান্ডার খালি করার কাজ সম্পূর্ণ করেছি।” এ দিন ‘শুভ মুহূর্ত’ সকাল ৯টা ৫১ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রত্ন সরানোর কাজ চলে।
পরিদর্শকদের সঙ্গে যথারীতি ওড়িশা সরকারের স্নেক হেল্পলাইন-এর দলবলও ভিতরে যায়। কিন্তু তাঁদের সাহায্য লাগেনি। প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা পূর্ব নির্দিষ্ট এসওপি বা আদর্শ কর্তব্যবিধি মেনে কাজ করেছি। তিনটে কাঠের আলমারি, দুটো লোহার সিন্দুক, একটি স্টিলের আলমারি, দুটো কাঠের সিন্দুক ভিতর ভান্ডারে ছিল। ভিতরের সব সামগ্রী যথাযথ ভাবে সুরক্ষার সঙ্গে উপযুক্ত বাক্স, আলমারিতে স্থানান্তরিত করেছি। শ্রীমন্দিরের খটসাজ ঘরে অস্থায়ী রত্নভান্ডারে সব সরানো হয়েছে। চাবি পুরীর কালেক্টরের কাছে রাখা হয়েছে।” পাঢ়িরাও বলেন, “ভিতর ভান্ডারের সব অলঙ্কার অস্থায়ী গুপ্ত ভান্ডারে সরানো হয়েছে। এ এক অলৌকিক অভিজ্ঞতা!”
মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দয়িতাপতি দুর্গা দাস মহাপাত্রও ভিতরে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সব অলঙ্কার ছোট ছোট বাক্সে রাখা ছিল। এসওপি মেনে কোনও বাক্স খুলে দেখা যায়নি। বাক্সগুলি গুনে গুনে ভিডিয়োগ্রাফি করে সরানো হয়।” ১৯৭৮-এর পরে ভিতর ভান্ডারের সম্পদ জরিপ করার কাজ কবে সারা হবে, ভিতর ভান্ডারে গোপন সুড়ঙ্গের খোঁজে লেজ়ার স্ক্যানিং বা অন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে কি না, তা ওড়িশা সরকারই ঠিক করবে বলে এ দিন প্রাক্তন বিচারপতি রথ জানান।
ভিতর ভান্ডার খালি হতে এ বার ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই) রত্নভান্ডারের অবস্থা পরিদর্শন করতে পারবে। দুর্গা দাস মহাপাত্র প্রমুখও এ দিনও জরাজীর্ণ ভিতর ভান্ডারে বেশ কয়েকটি প্লাস্টারের প্রলেপ দেওয়া ভাঙা পাথরখণ্ড দেখেছেন। দ্বাদশ শতকীয় মন্দিরে রত্নভান্ডারটি কিছু পরের তৈরি বলে মনে করা হয়। কলিঙ্গরাজাদের জয় করা ধনসম্পদ তাতে গচ্ছিত। সম্ভবত বহিঃশত্রুর নজর এড়াতেই কুঠুরিটি পরে নির্মিত। এখন শ্রী মন্দিরের স্থাপত্যের স্বার্থে রত্নভান্ডারে কী ভাবে সংস্কার হবে, তা খতিয়ে দেখবেন
বিশেষজ্ঞেরা। দিনভর রত্নভান্ডার নিয়ে ব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় রথারূঢ় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার সামনে অধরপানার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। আজ, শুক্রবার নীলাদ্রী বিজে। আচার-অনুষ্ঠান সেরে সন্ধ্যার মধ্যে দাদা ও বোনকে নিয়ে রত্নবেদিতে ফিরবেন জগন্নাথদেব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy