গঙ্গাধর প্রামাণিক
কোনও একটা রোজগারের উপায় বেরোবে এই আশায় অসমে পাড়ি দিয়েছিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের যুবক গঙ্গাধর প্রামাণিক। কাজ জোটেনি, বদলে জোটে কারাবাস! ২০১৭ সালে অসমের সীমান্ত শাখার পুলিশ গঙ্গাধরের নাম সন্দেহজনক বিদেশি হিসেবে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে পাঠায়। নিজের দেশের মধ্যেই পড়শি রাজ্যে যে তাঁকে হঠাৎ ‘বাংলাদেশি’ হিসাবে কাঠগড়ায় তোলা হবে ভাবতে পারেননি গঙ্গাধর। তাই সঙ্গে রাখেননি ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের অরিজিনাল। ফরেনার্স ট্রাইবুনালে শুধু নথিপত্র দেখালেই হয় না, সাক্ষী হাজির করিয়ে ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে হয়। তা সম্ভব হয়নি গঙ্গাধরের পক্ষে। তাই ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে, আদালতের একতরফা রায়ে বিদেশি ঘোষিত গঙ্গাধর গোয়ালপাড়া ডিটেনশন শিবিরে বন্দি ছিলেন। গঙ্গাধরের কোনও খোঁজ না পেয়ে বাবা-মা ধরেই নেন ছেলে হারিয়ে গিয়েছে।
ডিটেনশন শিবির ছেড়ে মুক্তি পাওয়া দুই আবাসিকের কাছে গঙ্গাধরের খবর পেয়ে ‘সিটিজ়েনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ সংগঠন তাঁর হয়ে মামলা লড়তে নামে। ইতিমধ্যে করোনা-পর্ব আসে। সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের নির্দেশে দুই বছরের মেয়াদ পার করা ডিটেনশন শিবিরের আবাসিকদের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হতে থাকে। কিন্তু আবশ্যিক শর্ত ছিল নিটকবর্তী থানায় হাজিরা, দুই জামিনদারের ব্যবস্থা করা।
সিজেপির কো-অর্ডিনেটর নন্দ ঘোষ জানান, তাঁরা গঙ্গাধরের বাড়িতে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, ইতিমধ্যে তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। মা থাকেন বোনের বাড়িতে। গঙ্গাধরের বেঁচে থাকার খবর পেয়ে কেঁদে আকুল হন মা ও বোন। সিজেপির তরফেই জামিনদারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন জামিনদারও খুঁজতে হয় তিন জন। ফরেনার্স ট্রাইবুনালে দরবার করে এই অনুমতি আদায় করা হয় যে, এ বার থেকে গঙ্গাধর বিষ্ণুপুর থানায় নিয়মিত হাজির হবেন। জামিনে মুক্তির পথে সব বাধা কাটবার পরে আজ ডিটেনশন সেন্টার থেকে বেরোলেন ৩৩ বছর বয়সি গঙ্গাধর।
নন্দ ঘোষই তাঁকে সঙ্গে করে বাঁকুড়া পৌঁছে দিচ্ছেন। আগামিকাল গঙ্গাধরকে রাধানগরের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পরে বিষ্ণুপুর থানার সঙ্গে কথা বলে অসমের আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাপ্তাহিক হাজিরার বিষয়টি চূড়ান্ত করে আসবেন নন্দ। অবশ্য বাড়ি যাওয়ার আনন্দে বিভোর গঙ্গাধরকে জানানো হয়নি যে তাঁর বাবা আর নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy