জয়শঙ্কর সংসদে বলেছেন, “ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে ভারতের অবস্থান ধারাবাহিক ভাবেই এক। তা হল, রাষ্ট্রপুঞ্জে আমরা অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করার জন্য ডাক দিয়েছি। নিরাপত্তা পরিষদ এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে আর্জি জানানো হয়েছে, সংঘর্ষবিরতি এবং নিরাপদ করিডর তৈরি করার জন্য যাতে সাধারণ নাগরিকরা দেশ ছাড়তে পারেন।”
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর —ফাইল চিত্র।
সংসদে দেওয়া দীর্ঘ বিবৃতিতে ইউক্রেন থেকে সাড়ে বাইশ হাজার ভারতীয়কে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার বিস্তারিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বার বার উল্লেখ করলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকার কথা। তাঁর বক্তব্য, মোদী নিজে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সংঘর্ষবিরতি করিয়েছেন। তা না হলে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফেরানোর জন্য নিরাপদ করিডর পাওয়া যেত না। আজ ‘অপারেশন গঙ্গা’ নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের তথাকথিত ‘ভারসাম্যের কূটনীতির’ ব্যাখ্যা করতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে।
সংসদে যখন উদ্ধারকাজ নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর, সেই সময়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘অপারেশন গঙ্গা’-র সঙ্গে যুক্ত সব আধিকারিক ও বিভিন্ন দেশে থাকা ভারতীয় সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যে ভারতীয়রা বিপদের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধারকাজে সাহায্য করেছেন, তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদী।
জয়শঙ্কর সংসদে বলেছেন, “ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে ভারতের অবস্থান ধারাবাহিক ভাবেই এক। তা হল, রাষ্ট্রপুঞ্জে আমরা অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করার জন্য ডাক দিয়েছি। নিরাপত্তা পরিষদ এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে আর্জি জানানো হয়েছে, সংঘর্ষবিরতি এবং নিরাপদ করিডর তৈরি করার জন্য যাতে সাধারণ নাগরিকরা দেশ ছাড়তে পারেন।” তাঁর কথায়, “সমস্ত পক্ষকে আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে কূটনীতি এবং আলোচনার পথে ফিরে আসা ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের সমস্ত সদস্য দেশকে আমরা জানিয়েছি, আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ, সার্বভৌমত্ব এবং দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করতে হবে।”
ঘটনা হল, পর পর দু’বার ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রুপুঞ্জে ভোটাভুটি হলে, দু’বারই ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে নয়াদিল্লি। কিন্তু হিংসার সমালোচনা করে এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা অক্ষুণ্ণ রাখার কথা বলে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নরম ভাবে হলেও সমালোচনা করেছে তারা। আজ সংসদেও বিষয়টির উল্লেখ করে, যুদ্ধবিরোধিতার বার্তা দিয়ে রাখলেন বিদেশমন্ত্রী—- এমনই মনে করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যান্য প্রভাব নিয়েও ভারত যে দুশ্চিন্তায় রয়েছে, সে কথাও আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘ইউক্রেন সংঘাতের বিপুল অর্থনৈতিক অভিঘাত রয়েছে। তার প্রভাব যে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানির দামের উপর পড়ছে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক বাজারে জোগান ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দ্বিপাক্ষিক লেনদেন রয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ সমীক্ষা করছে সরকার। আশা করব, সবাই আজ সহমত হবেন আত্মনির্ভর ভারত গড়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।”
তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় বার বারই প্রধানমন্ত্রীর কূটনীতির প্রসঙ্গ তুলেছেন বিদেশমন্ত্রী। বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা না বলতেন, তা হলে নিরাপদে ভারতীয়দের দেশে ফেরানো যেত না। তিনি সুনির্দিষ্ট ভাবে ভারতীয় নাগরিকদের সুমি এবং খারকিভ থেকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন, রোমানিয়া, স্লোভাক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি-র প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে। পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও কথা হয় তাঁর। ওই দেশগুলির মধ্যে দিয়ে ভারতীয়দের ফেরানোর জন্য সাহায্য চাওয়া হয়।”
এই কুড়ি হাজার ছাত্রের পাঠ্যক্রম অর্ধসমাপ্ত রেখে ফিরিয়ে আনার পর তাঁদের কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী গতকালই জানিয়েছিলেন, তাঁদের পড়াশুনো শেষ করার সব রকম ব্যবস্থা সরকার নেবে। আজও বিষয়টি নিয়ে বিদেশমন্ত্রীকে বিরোধীরা প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা সবে ফিরেছেন। এর পর তাঁদের বাকি পড়াশুনো অনলাইনের মাধ্যমে করা যায় কি না, এ বার সেটা দেখা হবে।” এত দিন সরকারের নজর ছিল ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার উপর। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, এ বার পুরোপুরি কূটনীতিতে জোর দেওয়া হবে। যে সামান্য সংখ্যক ভারতীয় ইউক্রেনে থেকে গিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছাতেই রয়েছেন বলে জানান বিদেশমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বলেন, তাঁদেরও ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy