মৃত সন্তানের দেহ কোলে সুনীল ধুরভে। ছবি: সংগৃহীত।
সদ্যোজাত সন্তানের দেহ ব্যাগে ভরে বাসে চেপে ১৪০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে বাড়ি ফিরলেন অসহায় বাবা। তাঁর অভিযোগ, সরকারি হাসপাতাল থেকে মৃতদেহবাহী গাড়ি চেয়েও পাননি। নিজের টাকায় ওই গাড়ি ভাড়া করার ক্ষমতা নেই তাঁর। অগত্যা ভরসা ভিড়ে ঠাসা বাস।
গত মে মাসে উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মাকেও ঠিক এমনই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়। মৃত ছেলেকে ব্যাগে ভরে বাসে চেপে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জ পৌঁছন পুত্রহারা অসীম। তাঁর অভিযোগ ছিল, শববাহী গাড়ি চেয়েও পাননি। এই ঘটনার পর তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল বাংলায়। বিরোধী বিজেপি তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিল বাংলার মমতা সরকারের দিকে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরা সরব হয়েছিলেন। অসীমের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছিল বিজেপি। মুখ খুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। ঘটনা নিয়ে নবান্ন রিপোর্টও তলব করে। এ বার বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ঘটে গেল অনুরূপ ঘটনা। বাংলা থেকে মধ্যপ্রদেশের দূরত্ব প্রচুর হলেও দু’ই ঘটনা একসূত্রে গেঁথে দিয়েছে দুই জনপদকে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৫ জুন। মধ্যপ্রদেশের দিনদোরি জেলার সহজপুরি গ্রামের বাসিন্দা সুনীল ধুরভে। তাঁর স্ত্রী যমনা বাই গত ১৩ জুন সন্তানের জন্ম দেন সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু জন্মের পর থেকেই শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে জবলপুরের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। ১৫ জুন সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুর। সুনীল বলেন, ‘‘বাচ্চাকে জবলপুরের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৫ তারিখ সেখানে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু হাসপাতাল আমাকে শবদেহবাহী শকট দেয়নি। আমার নিজের কাছে অত টাকা ছিল না। তাই দেহ নিয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরেছি।’’
যদিও সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম ডিরেক্টর সঞ্জয় মিশ্র জানিয়েছেন, জবলপুরের হাসপাতাল থেকে যখন শিশুটিকে ছাড়া হয় তখন সে জীবিতই ছিল। তিনি দাবি করেছেন, সরকারি হাসপাতালে শবদেহবাহী শকটের কোনও ব্যবস্থাই নেই।
বাংলা হোক বা সুদূর মধ্যপ্রদেশ, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার যে সর্বত্রই একই অবস্থা, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এই ধরনের ঘটনা। বাংলার ক্ষেত্রে সরকারি পরিকাঠামোর অভাব এবং সরকারি কর্তাদের উদাসীনতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন শুভেন্দু, সুকান্তরা। বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ দেখিয়ে দিল, খামতি আসলে সর্বত্র বিরাজমান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy