Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
gunjan saxena

পাক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার করতেন ভারতীয় সেনাদের, ‘কার্গিল কন্যা’ গুঞ্জন এখন গৃহবধূ

১৯৯৯-এ কার্গিল যুদ্ধে ‘অপারেশন বিজয়’ মিশনে সামিল হলেন ফ্লাইট লেফ্টেন্যান্ট গুঞ্জন সাক্সেনা। তাঁর দায়িত্ব ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে ওষুধ ও রসদ পৌঁছে দেওয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০৯:৩০
Share: Save:
০১ ১৫
এক পাইলট আত্মীয়ের সুবাদে পাঁচ বছর বয়সে প্রথম ককপিট-দর্শন গুঞ্জনের। তখন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এক দিন এই ককপিটের সঙ্গেই জড়িয়ে যাবে তাঁর নাম। যাত্রিবাহী সাধারণ বিমান নয়। তাঁর তরুণী-হাত বশে রাখবে ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ‘চিতা’-কে।

এক পাইলট আত্মীয়ের সুবাদে পাঁচ বছর বয়সে প্রথম ককপিট-দর্শন গুঞ্জনের। তখন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এক দিন এই ককপিটের সঙ্গেই জড়িয়ে যাবে তাঁর নাম। যাত্রিবাহী সাধারণ বিমান নয়। তাঁর তরুণী-হাত বশে রাখবে ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ‘চিতা’-কে।

০২ ১৫
বাবা ভারতীয় সেনার লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল। দাদাও কর্মরত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। এ রকম এক সেনা-পরিবারে গুঞ্জনের জন্ম ১৯৭৫ সালে, লখনউ শহরে।

বাবা ভারতীয় সেনার লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল। দাদাও কর্মরত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। এ রকম এক সেনা-পরিবারে গুঞ্জনের জন্ম ১৯৭৫ সালে, লখনউ শহরে।

০৩ ১৫
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন গুঞ্জন সাক্সেনা। স্নাতক স্তরে পড়ার সময়েই তিনি সফদরজং ফ্লাইং ক্লাবে যোগ দেন, উড়ানশিক্ষার খুঁটিনাটি শিখতে। পরে সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড বা এসএসবি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন ভারতীয় বায়ুসেনায়।

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন গুঞ্জন সাক্সেনা। স্নাতক স্তরে পড়ার সময়েই তিনি সফদরজং ফ্লাইং ক্লাবে যোগ দেন, উড়ানশিক্ষার খুঁটিনাটি শিখতে। পরে সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড বা এসএসবি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন ভারতীয় বায়ুসেনায়।

০৪ ১৫
১৯৯৪ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় পাইলট হিসেবে প্রথম বার যোগ দিলেন মহিলারা। ২৫ জন শিক্ষার্থী পাইলটের মধ্যে গুঞ্জন ছিলেন এক জন। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরে গুঞ্জনের প্রথম পোস্টিং ছিল জম্মু কাশ্মীরের উধমপুরে।

১৯৯৪ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় পাইলট হিসেবে প্রথম বার যোগ দিলেন মহিলারা। ২৫ জন শিক্ষার্থী পাইলটের মধ্যে গুঞ্জন ছিলেন এক জন। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরে গুঞ্জনের প্রথম পোস্টিং ছিল জম্মু কাশ্মীরের উধমপুরে।

০৫ ১৫
১৯৯৯-এ কার্গিল যুদ্ধে ‘অপারেশন বিজয়’ মিশনে সামিল হলেন ফ্লাইট লেফ্টেন্যান্ট গুঞ্জন সাক্সেনা। তাঁর দায়িত্ব ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে ওষুধ ও রসদ পৌঁছে দেওয়া। সেইসঙ্গে আহত সেনাদের উদ্ধার করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে আসাও ছিল তাঁর কাজের মধ্যে অন্যতম।

১৯৯৯-এ কার্গিল যুদ্ধে ‘অপারেশন বিজয়’ মিশনে সামিল হলেন ফ্লাইট লেফ্টেন্যান্ট গুঞ্জন সাক্সেনা। তাঁর দায়িত্ব ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে ওষুধ ও রসদ পৌঁছে দেওয়া। সেইসঙ্গে আহত সেনাদের উদ্ধার করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে আসাও ছিল তাঁর কাজের মধ্যে অন্যতম।

০৬ ১৫
দুর্গম পাহাড়ের খাঁজে শত্রুপক্ষের আক্রমণের মধ্যে নিহত সেনাদের দেহ উদ্ধার করে আনার দায়িত্বও গুঞ্জনকে দিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। সেইসঙ্গে আকাশে চক্কর দেওয়ার সময় শত্রপক্ষের গতিবিধির উপর জারি থাকত নজরদারিও।

দুর্গম পাহাড়ের খাঁজে শত্রুপক্ষের আক্রমণের মধ্যে নিহত সেনাদের দেহ উদ্ধার করে আনার দায়িত্বও গুঞ্জনকে দিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। সেইসঙ্গে আকাশে চক্কর দেওয়ার সময় শত্রপক্ষের গতিবিধির উপর জারি থাকত নজরদারিও।

০৭ ১৫
যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে তাঁর কি আপত্তি আছে? কার্গিল যুদ্ধের আগে জানতে চাওয়া হয়েছিল ২৪ বছর বয়সি গুঞ্জনের কাছে। তরুণী উত্তর দিয়েছিলেন, আপত্তির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এ রকম সুযোগ পেয়ে তিনি গর্বিত।

যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে তাঁর কি আপত্তি আছে? কার্গিল যুদ্ধের আগে জানতে চাওয়া হয়েছিল ২৪ বছর বয়সি গুঞ্জনের কাছে। তরুণী উত্তর দিয়েছিলেন, আপত্তির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এ রকম সুযোগ পেয়ে তিনি গর্বিত।

০৮ ১৫
দ্রাস, বাটালিক, টোলোলিংয়ের আকাশে তাঁর বাহন ‘চিতা’ নিয়ে উড়ে যেতেন গুঞ্জন। শত্রপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র হানার মধ্যেই তাঁকে হেলিকপ্টার থেকে ফেলতে হত ওষুধ এবং রসদ। কার্গিল যুদ্ধে গুঞ্জনের মতো সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন ফ্লাইট লেফ্টেন্যান্ট শ্রীবিদ্যা রাজনও।

দ্রাস, বাটালিক, টোলোলিংয়ের আকাশে তাঁর বাহন ‘চিতা’ নিয়ে উড়ে যেতেন গুঞ্জন। শত্রপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র হানার মধ্যেই তাঁকে হেলিকপ্টার থেকে ফেলতে হত ওষুধ এবং রসদ। কার্গিল যুদ্ধে গুঞ্জনের মতো সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন ফ্লাইট লেফ্টেন্যান্ট শ্রীবিদ্যা রাজনও।

০৯ ১৫
প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই দুঃসাহসিক কাজে তৃপ্তি দিত যখন দেখতেন পাহাড়ের ঢালে পড়ে থাকা সেনার দেহে তখনও রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গুরুতর আহত সেনাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা পরিষেবা অবধি পৌঁছে দেওয়া সবথেকে বেশি আনন্দ দিত গুঞ্জনকে।

প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই দুঃসাহসিক কাজে তৃপ্তি দিত যখন দেখতেন পাহাড়ের ঢালে পড়ে থাকা সেনার দেহে তখনও রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গুরুতর আহত সেনাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা পরিষেবা অবধি পৌঁছে দেওয়া সবথেকে বেশি আনন্দ দিত গুঞ্জনকে।

১০ ১৫
প্রাণহানির আশঙ্কাকে প্রতি মুহূর্তে সঙ্গী করেই কার্গিল যুদ্ধে কাজ করে গিয়েছেন গুঞ্জন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আকাশে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র কান ঘেঁষে চলে গিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে আহত সেনাদের উদ্ধার করে এনেছেন গুঞ্জন।

প্রাণহানির আশঙ্কাকে প্রতি মুহূর্তে সঙ্গী করেই কার্গিল যুদ্ধে কাজ করে গিয়েছেন গুঞ্জন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আকাশে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র কান ঘেঁষে চলে গিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে আহত সেনাদের উদ্ধার করে এনেছেন গুঞ্জন।

১১ ১৫
ভারতে প্রথম মহিলা হিসেবে ‘শৌর্যচক্র সম্মান’-এ ভূষিত হন গুঞ্জন সাক্সেনা। কিন্তু লখনউয়ের রাজপথ থেকে এই সম্মান অবধি পৌঁছনো ছিল বন্ধুর। উধমপুর সেনা ক্যাম্পে  মহিলাদের জন্য উপযুক্ত শৌচাগার পর্যন্ত ছিল না তখন।

ভারতে প্রথম মহিলা হিসেবে ‘শৌর্যচক্র সম্মান’-এ ভূষিত হন গুঞ্জন সাক্সেনা। কিন্তু লখনউয়ের রাজপথ থেকে এই সম্মান অবধি পৌঁছনো ছিল বন্ধুর। উধমপুর সেনা ক্যাম্পে মহিলাদের জন্য উপযুক্ত শৌচাগার পর্যন্ত ছিল না তখন।

১২ ১৫
এখন অবশ্য সেই পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গিয়েছে। মহিলা সেনা অফিসারদের জন্য সেনাবাহিনীর ক্য়াম্পে পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এখন অবশ্য সেই পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গিয়েছে। মহিলা সেনা অফিসারদের জন্য সেনাবাহিনীর ক্য়াম্পে পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৩ ১৫
আরও পরিবর্তন এসেছে। গুঞ্জনের সময় মহিলা বায়ুসেনা আধিকারিকদের স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে কাজ করতে হত। সেনাবাহিনীর পরিভাষায় ‘শর্ট সার্ভিস কমিশনড’ অফিসার। অর্থাৎ মহিলা আধিকারিকরা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কাজ করতে পারতেন না।

আরও পরিবর্তন এসেছে। গুঞ্জনের সময় মহিলা বায়ুসেনা আধিকারিকদের স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে কাজ করতে হত। সেনাবাহিনীর পরিভাষায় ‘শর্ট সার্ভিস কমিশনড’ অফিসার। অর্থাৎ মহিলা আধিকারিকরা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কাজ করতে পারতেন না।

১৪ ১৫
এখন সেই বৈষম্য দূর হয়েছে। সেনাবাহিনীতে মহিলারাও ‘পার্মান্যান্ট কমিশনড অফিসার’ হিসেবে কাজ করতে পারেন। কিন্তু গুঞ্জন সে সুযোগ পাননি। তিনি সাত বছর কর্মরত ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনায়। ২০০৪-এ শেষ হয় তাঁর চপার পাইলটের জীবন।

এখন সেই বৈষম্য দূর হয়েছে। সেনাবাহিনীতে মহিলারাও ‘পার্মান্যান্ট কমিশনড অফিসার’ হিসেবে কাজ করতে পারেন। কিন্তু গুঞ্জন সে সুযোগ পাননি। তিনি সাত বছর কর্মরত ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনায়। ২০০৪-এ শেষ হয় তাঁর চপার পাইলটের জীবন।

১৫ ১৫
এখন গুঞ্জন গৃহবধূ। গুজরাতের জামনগরে তাঁর সংসার। তাঁর স্বামীও ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট। চালান মূলত এমআই-১৭ হেলিকপ্টার। তাঁদের একমাত্র মেয়ে প্রজ্ঞার জন্ম হয়েছে ২০০৪-এ। স্বামী ও কিশোরী কন্যাকে ঘিরে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই দিন কাটে ‘কার্গিল গার্ল’ গুঞ্জনের।

এখন গুঞ্জন গৃহবধূ। গুজরাতের জামনগরে তাঁর সংসার। তাঁর স্বামীও ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট। চালান মূলত এমআই-১৭ হেলিকপ্টার। তাঁদের একমাত্র মেয়ে প্রজ্ঞার জন্ম হয়েছে ২০০৪-এ। স্বামী ও কিশোরী কন্যাকে ঘিরে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই দিন কাটে ‘কার্গিল গার্ল’ গুঞ্জনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE