Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Union Budget 2024-25

নির্মলার বাজেট-দাঁড়িপাল্লায় রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতিও, ভারসাম্য রক্ষাই চ্যালেঞ্জ অর্থমন্ত্রীর

নির্মলা সীতারামন মোরারজি দেশাইকে টপকে টানা সাত বার বাজেট পেশের রেকর্ড করতে চলেছেন। অবশ্য এ বার অর্থমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ, আর্থিক সংস্কার ও জনমোহিনী রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্য রেখে বাজেট পেশ করা।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৪
Share: Save:

‘মধুচন্দ্রিমা পর্ব’ তাঁর কপালে নেই! দশ বছর আগে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হয়েই আফশোস করে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসতেই সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। থিতু হয়ে বসারও সময় মেলেনি।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপট নিয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদীর মুখে সে ছিল নিছক কথার কথা! কিন্তু দশ বছর পরে সেই ‘কথার কথা’ই এখন তাঁর রাজনৈতিক বাস্তব। মোদী তৃতীয় বার কেন্দ্রে সরকার গড়েছেন। মঙ্গলবার তাঁর তৃতীয় সরকারের প্রথম বাজেট পেশ হতে চলেছে। সাধারণত যে কোনও সরকারের প্রথম একশো দিনের সময়কালকে ‘মধুচন্দ্রিমা পর্ব’ বলা হয়। যাবতীয় সাহসী সিদ্ধান্ত এই সময়েই হয়ে যায়। কিন্তু এ বার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের আসল চিন্তা হল, বাজেটে রাজনৈতিক বাস্তব ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা।

কেন? কারণ তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরলেও বিজেপি এ বার একার জোরে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে মোদী সরকার শরিক-নির্ভর হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই তেলুগু দেশম পার্টি ও জেডিইউ— সরকারের দুই প্রধান শরিক অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহারের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ আদায় করে নিতে মরিয়া। গ্রামীণ অর্থনীতিতে দুর্দশা, কৃষকদের অসন্তোষের খেসারত দিয়ে বিজেপির আসন কমেছে। বাজেটে সেই ক্ষতে প্রলেপ জরুরি। লোকসভা ভোটে বেকারত্বের সমস্যা বিজেপিকে বেগ দিয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে মোদী জমানায় ধনী-গরিবের ক্রমবর্ধমান অসাম্য নিয়ে। বাজেটে বেকারত্ব ও আর্থিক অসাম্যের সমাধানে কী দিশা থাকে, বিরোধী শিবির তার উত্তর খুঁজবে। এর সঙ্গে মাথাব্যথা, আগামী ছ’মাসের মধ্যে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড ও দিল্লির বিধানসভা ভোট। সব মিলিয়ে ‘মধুচন্দ্রিমা পর্ব’ কার্যত পরীক্ষার মরসুম হয়ে উঠেছে মোদী সরকারের।

মোদী সরকার বেকায়দায় পড়ায় মধ্যবিত্তের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, এ বার চাকুরিজীবীদের সুরাহা দেওয়া হবে আয়কর ছাড়ে; চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে হাতে বাড়তি কিছু নগদ টাকা যাতে থাকে। তা সে আয়করের হার কমিয়েই হোক বা আয়করের হিসেবে ‘স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন’-এর পরিমাণ বাড়িয়েই হোক। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে ইঙ্গিত, ভোটের ফলের থেকে শিক্ষা নিয়ে ও ভবিষ্যতের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে এ বার বাজেটে কর্মসংস্থান, গ্রাম ও কৃষক এবং শ্রমিক-নির্ভর শিল্পের দিকে নজর থাকবে।

ধনী-গরিবের অসাম্য কমাতে মোদী সরকার কোটিপতিদের উপরে সম্পদ কর বসানো বা বাড়তি আয়কর চাপানোর পথে হাঁটে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল তুঙ্গে। জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিতে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর ছেলের বিয়ের ধুমধাম চলাকালীন কংগ্রেস কোটিপতিদের উপরে সম্পদ কর বসানোর দাবি তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন হল, নরেন্দ্র মোদী কি সেই সাহস দেখাতে পারবেন?

বাজেট অধিবেশনের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী আজ মনে করান, ষাট বছর পরে কোনও সরকার তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় ফিরে বাজেট পেশ করতে চলেছে। এ এক ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’। তাঁর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মোরারজি দেশাইকে টপকে টানা সাত বার বাজেট পেশের রেকর্ড করতে চলেছেন। অবশ্য এ বার অর্থমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ, আর্থিক সংস্কার ও জনমোহিনী রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্য রেখে বাজেট পেশ করা। তাঁকে বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য কিছু আর্থিক সাহায্য দিতেই হবে। তার সঙ্গে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডে ভোটের কথা ভেবেও টাকার ঝুলি খুলতে হবে। মোদী সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য— পরিকাঠামো-সহ মূলধনী খাতে বিপুল খরচও চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে তাঁকে রাজকোষ ঘাটতি কমাতে হবে।

মোদী আজ বলেন, এই বাজেট দেশের স্বাধীনতার শতবর্ষপূর্তির বছর ২০৪৭-এর ‘বিকশিত ভারত’ বা উন্নত রাষ্ট্রের লক্ষ্যপূরণের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবে। আগামী পাঁচ বছরে সরকারের কাজের রূপরেখা ঠিক করে দেবে। কারণ তাঁরা পাঁচ বছর সরকার চালানোর জন্য ‘জনাদেশ’ পেয়েছেন। তবে বিরোধীদের দাবি, মোদী সরকার এখন ২০৪৭-এর স্বপ্ন না দেখিয়ে বাস্তব পরিস্থিতির দিকে মন দিক। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, “ভারত গত কয়েক বছর ধরেই অনিশ্চয়তা ও সঙ্কটের মুখোমুখি। আর্থিক সমীক্ষা সরকারের মনের মতো করে অর্থনীতির ছবি তুলে ধরতে পারে। কিন্তু আমাদের আশা হল, আগামিকালের বাজেট দেশের বাস্তব পরিস্থিতির অনুরূপ হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Union Budget 2024-25 Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE