অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগের কোনও ব্যাখ্যা এখনও পশ্চিমবঙ্গ সরকার দেয়নি। তাই রাজ্যের টাকা আটকে আছে বলে আজ সংসদে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। লোকসভায় দাঁড়িয়ে তিনি অভিযোগ তোলেন, বিধানসভা নির্বাচনের পরে বঙ্গে হামলা, লুট, ধর্ষণ, বিজেপি কর্মীদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
সংসদের ভিতরে-বাইরে তৃণমূল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিল। বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার সময় লোকসভায় তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়ও ১০০ দিনের কাজে টাকা ছাড়ার দাবি তোলেন। আজ তার জবাবে সীতারামন বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সাংসদরা ১০০ দিনের কাজে টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তিদের থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই গত মার্চ থেকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। রোজগার গ্যারান্টি আইন অনুযায়ী, অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের থেকে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা না পাওয়া পর্যন্ত টাকা ছাড়া বন্ধ রাখবে।’’ এখানে না থেমে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলতে থাকেন, ‘‘সংবাদপত্রে টাকার অপব্যবহার নিয়ে রিপোর্টের মধ্যে যাচ্ছিই না। কিন্তু আমরা রাজ্য সরকারের কাছে ওই সব অভিযোগ পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। বঙ্গের থেকে এখনও তা পাওয়া যায়নি।’’
তৃণমূলের সুদীপ একাধিকবার যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন, সব বিতর্ক মিটে গিয়েছে। এ বার কেন্দ্রের টাকা ছাড়া উচিত। কিন্তু অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি সংশ্লিষ্ট গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তথ্যের ভিত্তিতেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ব্যাখ্যা মেলেনি বলেই টাকা আটকে রাখা হয়েছে।
গত অগস্টে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ১০০ দিনের কাজে বকেয়া নিয়ে দরবার করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, রাজ্যের এই খাতে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। সংসদে তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, এখন বকেয়া পাওনার পরিমাণ ৭,৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু সেই দাবি খারিজ করে কেন্দ্র গত কালই জানায়, রাজ্যের পাওনা ৩,২০০ কোটি টাকার মতো। এই প্রকল্পে যে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, তা-ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি জানান, ১০০ দিনের কাজে অভিযোগ পেয়ে রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার নয়ছয় হওয়া অর্থ উদ্ধার করেছে। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। ১১টি জেলা থেকে প্রায় ৫২ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা উদ্ধার হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে। ১৯ লক্ষ টাকার বেশি। তৃণমূল শিবিরের প্রশ্ন, রাজ্য সরকার তো অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকই। তা হলে অর্থমন্ত্রী কী ভাবে বলছেন রাজ্য ব্যাখ্যা দেয়নি।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র গত কাল মোদী সরকারকে বিঁধে প্রশ্ন তুলেছিলেন, অর্থনীতির পরিচালনায় কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থ হলে কাকে ‘পাপ্পু’ বলা উচিত? কে তা হলে পাপ্পু? আজ নির্মলার জবাব, ‘‘নিজের ঘরে তাকালেই উত্তর মিলবে, কে পাপ্পু। তৃণমূল সাংসদ পশ্চিমবঙ্গেই পাপ্পুর খোঁজ পাবেন। কারণ আমজনতার সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প থাকলেও রাজ্য সরকার তা নিয়ে বসে থাকে। সুবিধা বিলি করে না।’’
মহুয়া ভোটাদাতাদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, কার হাতে দেশের ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে, তা-ও ভাবতে হবে। কারণ বস্তিতে আগুন কে লাগাল, শুধু সেটা প্রশ্ন নয়। কে পাগলের হাতে দেশলাই দিয়েছে, সেটাও প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘‘হাতে দেশলাই বা ক্ষমতা পেয়ে তা কী ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপি গুজরাতে দারুণ ভাবে জিতে এলেও রাজ্যে শান্তি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের পরে কী হয়েছিল! আমরা হাতে দেশলাই পেয়ে উজ্জ্বলা যোজনা, স্বচ্ছ ভারত, পিএম-কিসান করেছি। আপনারা হাতে দেশলাই পেয়ে হামলা, লুঠতরাজ, ধর্ষণ, বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে আগুন লাগানোর কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরণের গাড়িতে হামলা হয়েছে। প্রচারের সময় জে পি নড্ডার গাড়িতেও হামলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy