ফাইল চিত্র।
ঋণের বিপুল বোঝা। শুধু তার সুদ গুনতেই বেরিয়ে যায় বিরাট অঙ্কের অর্থ। অথচ কর ছাড়া অন্যান্য খাতে আয় তুলনায় বেশ কম। পশ্চিমবঙ্গের কোষাগারের এই হাঁড়ির হাল ফেরাতে সার্বিক আর্থিক সংস্কার প্রয়োজন বলে মত দিল পঞ্চদশ অর্থ কমিশন। তাদের সুপারিশ, স্থায়ী পরিকাঠামোয় আরও বেশি খরচ করে দীর্ঘমেয়াদি আয়ের রাস্তা তৈরি করুক রাজ্য।
কমিশনের বক্তব্য, সামাজিক মাপকাঠিতে জাতীয় গড়ের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে। কিন্তু রাজ্যের রাজধানী কলকাতা লগ্নি টানার ক্ষেত্রে অন্যান্য মেট্রো শহরের তুলনায় পিছিয়ে। সারা দেশে যে বিদেশি লগ্নি আসে, তার মাত্র ১ শতাংশ আসে কলকাতায়! রাজ্যকে আরও বেশি বিদেশি লগ্নি টানতে হবে। বিশেষত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিংয়ের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ক্ষেত্রে। পর্যটনেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, যা এখনও কাজে লাগানো যায়নি। ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিদেশি পর্যটকদের মোটে ৫.৩ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছেন। অথচ পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে, রাজ্যে বহু কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে। ত্বরান্বিত হতে পারে বৃদ্ধির গতি।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম জমানার ঋণের বোঝা নিয়ে সরব। কেন্দ্রের কাছে তিনি বারবার রাজ্যের জন্য আর্থিক প্যাকেজের সওয়াল করেছেন। কমিশনের বক্তব্য, গত দু’দশকে প্রায় প্রতিটি অর্থ কমিশনই রাজ্যে বিভিন্ন রকম আর্থিক সংস্কারের সুপারিশ করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ নিজের কোষাগারের অবস্থার উন্নতি করেনি। এ বার অন্তত তারা সার্বিক আর্থিক সংস্কার করুক।
কী ভাবে? কমিশনের পরামর্শ, ইতিমধ্যেই মমতা-সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে ‘স্বচ্ছ, কার্যকর ও দক্ষ’ ব্যবস্থা চালু করেছে। যেমন, ই-নথিকরণ বন্দোবস্ত চালু হয়েছে। স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি থেকেও রাজ্যের আয় বিপুল বেড়েছে। কিন্তু তেমনই কর ছাড়া অন্যান্য খাতে রাজ্যের আয় বেশ কম। এ বার সেখানেও আয়ের রাস্তা তৈরি হোক। বিভিন্ন আর্থিক ও সামাজিক পরিষেবার খরচ তুলতে পদক্ষেপ করুক রাজ্য। যদিও অনেকের মতে, রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীল হওয়ার কারণেই এই ক্ষেত্রটিতে হাত দেওয়া এখনও এড়িয়ে গিয়েছে নবান্ন।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের ব্যাখ্যা, কোভিডের সময়ে রাজ্যকে বাড়তি ঋণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র শর্ত রেখেছিল, জল সরবরাহ ও নিকাশির মতো পরিষেবার বিনিময়ে ফি আদায় করতে হবে। কিন্তু তারা সেই শর্তে রাজি হয়নি। এখন অর্থ কমিশনও কার্যত সেই কথাই বলছে। উল্টো দিকে, রাজ্য সরকারের কর্তারা পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষের বেহাল দশার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করছেন। অভিযোগ, মোদী সরকার কেন্দ্রীয় করের ভাগ বাবদ পাওনা ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বকেয়া অর্থ মেটায়নি।
মমতা-সরকারের অভিযোগ, বামফ্রন্ট সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের বোঝায় নতুন পরিকাঠামোয় খরচ করার জন্য রাজ্যের হাতে টাকা থাকে না। অর্থ কমিশনও বলেছে, ২০১১ সালে রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের সাপেক্ষে পরিকাঠামোয় খরচ পশ্চিমবঙ্গেই সব থেকে কম ছিল। মাত্র ০.৬ শতাংশ। গত কয়েক বছরে সেখানে চোখে পড়ার মতো উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তারপরেও রাজ্যের রাজস্ব খাতে খরচের বড় অংশ সুদ মেটাতেই চলে যায়। ২০১২-১৩ থেকে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে সুদ গুনতে রাজস্ব খাতে খরচের ১৮-২৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে রাজ্যকে পরিকাঠামোয় আরও বেশি খরচ করে সেখান থেকে আয়ের পথ তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামাজিক ক্ষেত্রে লগ্নি করলে, ৫ বছরে আর্থ-সামাজিক মাপকাঠিতে প্রভূত উন্নতি হতে পারে।
এন কে সিংহের অর্থ কমিশনের কাছে রাজ্যের সুপারিশ ছিল, কেন্দ্রীয় করের ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে বিলি করা হোক। কমিশন অবশ্য ২০২১ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় করের ৪১ শতাংশ রাজ্যগুলিকে দিতে বলেছে। তবে কমিশনের কর্তাদের বক্তব্য, করের ভাগের সঙ্গে অনুদান যোগ করলে, প্রায় ৫০ শতাংশই রাজ্যগুলির মধ্যে বিলি হবে। ২০১১-২২ সালে কেন্দ্রীয় করের ভাগ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ আনুমানিক ৫০,০৭০ কোটি টাকা পাবে। চলতি বছরের তুলনায় প্রায় ৮,৭১৭ কোটি টাকা বেশি। তবে নতুন অর্থবর্ষে কেন্দ্রের কর আদায় কমলে, রাজ্যের প্রাপ্যও কমবে।
২০২১ থেকে ২০২৬— এই পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় করের ভাগ হিসেবে রাজ্য প্রায় ৩.১৭ লক্ষ কোটি টাকা পাবে। অনুদান মিলিয়ে কোষাগারে আসবে প্রায় ৪.০৪ লক্ষ কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy