Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকায় বাবা আছেন, ছেলে নেই!

শনিবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশের কথা জেনে তাঁদের অনেকেই ছোটগুমার এনআরসি সেবাকেন্দ্রের সামনে জড়ো হন। তালিকায় নাম নেই জানার পরে উদ্বেগের ছবিও স্পষ্ট হয়েছে অনেকের চোখেমুখে। 

উদ্বিগ্ন: কোচবিহার লাগোয়া অসমের ছোটগুমায় এনআরসি সেবাকেন্দ্রের সামনে ভিড়। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

উদ্বিগ্ন: কোচবিহার লাগোয়া অসমের ছোটগুমায় এনআরসি সেবাকেন্দ্রের সামনে ভিড়। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ছোটগুমা (অসম) ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৭
Share: Save:

কোনও পরিবারে স্বামীর নাম রয়েছে, বাদ গিয়েছেন স্ত্রী। কারও আবার নিজের নাম রয়েছে, কিন্তু ছেলেদের নাম তালিকায় নেই। শনিবার অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এমনই অভিযোগ উঠেছে। যার জেরে উদ্বেগ বেড়েছে অসমের কোকরাঝাড় জেলার ছোটগুমার বাসিন্দা বেশ কিছু পরিবারেরও। শনিবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশের কথা জেনে তাঁদের অনেকেই ছোটগুমার এনআরসি সেবাকেন্দ্রের সামনে জড়ো হন। তালিকায় নাম নেই জানার পরে উদ্বেগের ছবিও স্পষ্ট হয়েছে অনেকের চোখেমুখে।

ছোটগুমার বাসিন্দা আসিনা বেওয়া বলেন, “তালিকায় আমার নাম আছে, অথচ তিন ছেলে, দুই বৌমা ও তিন নাতির নাম তালিকায় নেই। অথচ প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিয়েছিলাম। শুনানিও হয়।” এলাকার আরেক বাসিন্দা আক্কেল শেখ বলেন, “কলকাতা থেকে নথি জোগাড় করে জমা দিয়েছিলাম। তা-ও তালিকায় নাম ওঠেনি।” সইদুল হক বলেন, “আমার নাম আছে, কিন্তু স্ত্রীর নাম তালিকায় নেই।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারে আদি বাড়ি, এমন বাসিন্দাদের অনেকেও সমস্যায় পড়েছেন।

এখন পরিস্থিতি ঘোরালো হলে অসম থেকে লাগোয়া কোচবিহারের আত্মীয় পরিজনদের কাছে বাসিন্দাদের অনেকে ফিরতে পারেন এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের কোচবিহারের নেতৃত্বও ওই আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। পরিষদ নেতৃত্বের দাবি, কোচবিহারের বাসিন্দাদের অনেকে বিয়ে, ব্যবসা বা নানা কাজের প্রয়োজনে দীর্ঘদিন ধরে অসমে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, অসমে আত্মীয়-পরিজন রয়েছেন, কোচবিহারে এমন পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার। ওই আত্মীয়দের অনেকের নাম তালিকায় নেই বলে পরিবারগুলি সূত্রে দাবি। সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের নেতা, সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “রাজ্য সরকার আবেদনকারীদের অনেকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগান দিতে পারেনি। তাই তাদের নাম বাদ যাবে এটাই স্বাভাবিক। আতঙ্কিত হয়ে অনেকে জেলায় ফিরতে পারেন।” ওই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রশাসনের সতর্ক থাকা দরকার। বাতিল করা দরকার এনআরসি।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তবে কেউ অসম থেকে ফিরেছেন, এমন খবর নেই। অসম-কোচবিহার সীমানার বক্সিরহাট থানার একাধিক এলাকায় নাকা তল্লাশি চলছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “নজর রাখা হচ্ছে।” তুফানগঞ্জের এসডিপিও জ্যাম ইয়াং জিম্বা জানিয়েছেন, অসম সীমানার জোড়াই মোড়, সঙ্কোশে নাকা তল্লাশ হচ্ছে।

অসমের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বিষয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, তাঁদের দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই বিষয়ে প্রথম প্রতিবাদ জানান। তৃণমূল নেতা, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “অসমে বিজেপির ওই কর্মকাণ্ড দেখে মানুষ ওদের চেহারাটা চিনতে পারছেন।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “এনআরসি নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। এটা নাগরিকদের সবার্থেই দরকার।”

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE