সাংবাদিক বৈঠকে বিক্ষোভকারী কৃষকরা। ছবি: পিটিআই।
কৃষি আইন নিয়ে চাষিদের আশঙ্কা ও প্রশ্নের জবাব দিতে তাঁর সরকার তৈরি— ঘরে-বাইরে চাপের মুখে আজ বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলি জানিয়ে দিল, তাদের দাবি কৃষি আইন প্রত্যাহার। এ নিয়ে কোনও দর কষাকষি চলবে না।
তিন কৃষি আইনের বিরোধিতা করে শিরোমণি অকালি দল এনডিএ ত্যাগ করেছিল। আজ এনডিএ-র আর এক শরিক দল, রাজস্থানের রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টিও জানিয়েছে, কেন্দ্র চাষিদের সঙ্গে আলোচনায় না-বসলে এনডিএ-তে থাকার বিষয়টি তারা পুনর্বিবেচনা করবে। হরিয়ানায় বিজেপি শরিক দুষ্যন্ত চৌটালাও কেন্দ্রের উপরে চাপ তৈরি করছেন। সোমবার হরিয়ানার পশুধন উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সে রাজ্যের নির্দল বিধায়ক, খাপ নেতা সোমবীর সাঙ্গোয়ান।
কৃষকেরা হরিয়ানা-দিল্লি সীমানায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বসে থাকায় এমনিতেই চাপে মোদী সরকার। এনডিএ-র অন্দরে ক্ষোভের সুর সেই চাপ আরও বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় কৃষক সংগঠনগুলিকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য ফের উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। ৩ ডিসেম্বর দু’পক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কৃষকেরা ‘দিল্লি চলো’-র ডাক দিয়ে দিল্লি-সীমানা আটকে দেওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছেড়ে বুরারি ময়দানে সরে গেলে আগেও আলোচনা হতে পারে। কিন্তু রবিবার কৃষক নেতারা সেই শর্তাধীন আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করে দেন। আজ কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর মঙ্গলবার দুপুর তিনটেয় বৈঠক করতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠান। সেই ডাকে সাড়া দেওয়া হবে কি না, তা কাল সকালে আলোচনা করে ঠিক করবেন কৃষক নেতারা।
সরকারের রণকৌশল ঠিক করতে রবিবার গভীর রাতে হায়দরাবাদ থেকে দিল্লি ফিরে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার বাড়িতে যান অমিত শাহ। রাজনাথ সিংহ, কৃষিমন্ত্রী তোমরের উপস্থিতিতে প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক চলে। সোমবার সকালে ফের শাহের সঙ্গে তোমরের বৈঠক হয়। দুপুরে বারাণসী থেকে মোদী বলেন, ‘‘যে সব কৃষক পরিবারের এখনও কিছু চিন্তা রয়েছে, কিছু প্রশ্ন রয়েছে, সরকার নিয়মিত তার জবাব দিচ্ছে। আমার বিশ্বাস, আজ যে সব কৃষকের কিছু শঙ্কা রয়েছে, তাঁরাও ভবিষ্যতে কৃষি সংস্কারের ফায়দা তুলে আয় বাড়াবেন।’’
রবিবার শাহ বলেছিলেন, বিরোধী দলগুলি চাষিদের ভুল বোঝাচ্ছে, এমন কিছু তিনি বলছেন না। কিন্তু মোদী আজ বলেছেন, বিরোধীরাই মিথ্যে প্রচার করছে। চাষিদের ভুল বোঝাচ্ছে। কৃষক নেতাদের প্রশ্ন, চাষিরা কি পাঁচ বছরের শিশু, যে কেউ তাঁদের ভুল বোঝাবে? রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী আজ ফের কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস দিনের পর দিন ঋণ মকুবের মতো নানা প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাই চাষিরা শঙ্কিত। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য গঙ্গাজলের মতোই পবিত্র।’’ ‘পবিত্র গঙ্গাজল’-কে সাক্ষী রেখে মোদীর আশ্বাস, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) তুলে দেওয়া হবে না। মান্ডিতে ফসল বেচার পুরনো ব্যবস্থাও বজায় থাকবে। কেউ কর্পোরেটদের ফসল বেচার নতুন ব্যবস্থায় ভয় পেলে মান্ডিতেই এমএসপি-তে ফসল বেচতে পারেন।
মোদী এ কথা বললেও, ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (হরিয়ানা) সভাপতি গুরনাম সিংহ বলেন, ‘‘এই আইন কর্পোরেটদের জন্য তৈরি হয়েছে। মোদী সরকার চাষিদের কথা না-শুনলে তার রাজনৈতিক খেসারত দিতে হবে।’’ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কার্যত এই আশঙ্কাই করছেন। কারণ, হরিয়ানায় খাপ পঞ্চায়েতের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। হনুমান বেনীওয়ালের রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির মাত্র এক জন সাংসদ ও রাজস্থানে তিন জন বিধায়ক থাকলেও জাঠ কৃষকদের মধ্যে তাঁর প্রভাব যথেষ্ট। তবে আইন প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। তাঁদের মতে, খুব বেশি হলে আপত্তি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি তৈরি হতে পারে।
পঞ্জাব থেকে হরিয়ানা হয়ে দিল্লিতে ঢুকতে চাওয়া কৃষকরা টিকরী ও সিংঘু সীমানা অবরোধ করছেন। গাজিয়াবাদের দিক থেকে গাজিপুর সীমানাতেও অবরোধ চলছে। তাঁদের আটকাতে লোহা ও কংক্রিটের ব্যারিকেড বসেছে। সেই ব্যারিকেডে মোমবাতি জ্বালিয়ে আজ সন্ধ্যায় গুরুপুরব পালন করেন পঞ্জাবের চাষিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy