অনড়: নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত এক কৃষক। রবিবার নয়াদিল্লির সিংঘু সীমানায়। পিটিআই
কৃষি আইন প্রত্যাহার না-করার বিষয়টিতে কেন্দ্র অনড় থাকায় আগামিকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনশনে বসতে চলেছে সব ক’টি কৃষক সংগঠন।
জট কাটাতে আজ দুপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাড়িতে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সোম প্রকাশ। বৈঠকের পরে তোমর কৃষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানালেও নিজেদের অনশন চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে অনড় থাকেন কৃষক নেতারা। কৃষকদের ওই অনশনের সমর্থনে আগামিকাল তিনিও অনশন করবেন বলে জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। কৃষকদের সমর্থনে আজ ইস্তফা দিয়েছেন পঞ্জাব পুলিশের ডিআইজি (কারা) লখমিন্দর সিংহ জাখর।
গত ১৮ দিন ধরে দিল্লি সীমানা অবরোধ করে বসে রয়েছেন পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকেরা। কৃষি আইন প্রত্যাহারে সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে আগামিকাল ন’ঘণ্টার অনশনের ডাক দেন তাঁরা। আজ সিংঘু সীমানায় বসে কৃষক আন্দোলনের নেতা গুরনাম সিংহ চৌধুরি ফের জানিয়েছেন, আইন প্রত্যাহার না-করা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন প্রত্যাহারের কোনও প্রশ্নই নেই। যত দিন গড়াচ্ছে, ততই আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে আসছেন দেশের অন্যান্য প্রান্তের কৃষকেরা। গরুর পাল নিয়ে দিল্লি-জয়পুর হাইওয়ে দিয়ে কৃষকেরা এগিয়ে আসছেন, এমন একটি ছবি টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: আরএসএস দফতরে ফাইল হাতে প্রাক্তন ডিজি, সাক্ষাৎ ভাগবতের সঙ্গে
আজ রাজস্থান থেকে ট্র্যাক্টর মিছিল করে এক দল কৃষক দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। তাঁদের রাজস্থান-হরিয়ানা সীমান্তে শাহজাহানপুরের কাছে আটকে দিয়েছে মনোহরলাল খট্টরের প্রশাসন। সেখানেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন ওই কৃষকেরা। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দিল্লি-জয়পুর হাইওয়ে। কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পিত ভাবে তাঁদের দিল্লিতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে বলে সরব হন কৃষক নেতা শিবকুমার কাক্কা। এ দিকে, গত কাল আন্দোলনরত কৃষকদের একাংশ দিল্লি-নয়ডার চিল্লা সীমানার এক দিকের রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে নেন। গুরনাম সিংহদের দাবি, ওই কৃষকদের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। আন্দোলনে ফাটল ধরাতেই এই ধরনের কৌশল নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা আন্দোলনে কোনও রফাসূত্র বার না-হওয়ায় অস্বস্তিতে কেন্দ্রও। গত পাঁচ দিনে আইআরসিটিসি-র মাধ্যমে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে প্রায় দু’কোটি ই-মেল পাঠিয়েছে কেন্দ্র। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে শিখদের জন্য যে ১৩ দফা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন, তারই সবিস্তার খতিয়ান রয়েছে ওই ই-মেলে। এখনও পর্যন্ত তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। আজ ফের রফাসূত্রের খোঁজে অমিত শাহ ডেকে পাঠান কৃষিমন্ত্রী তোমরকে। কিন্তু বৈঠকের পরে তোমর আন্দোলনরত কৃষকদের উদ্দেশে নতুন কোনও প্রস্তাব রাখতে পারেননি। তিনি কেবল আন্দোলন প্রত্যাহারের পক্ষে সওয়াল করেন, যা খারিজ করে দিয়েছেন কৃষকেরা। আজ সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে মুখ খুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। যন্তরমন্তরে পঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদদের ধর্নায় আজ উপস্থিত ছিলেন তারুর। তিনি বলেন, “দেশ ও কৃষক, দু’টিকেই হতাশ করেছে সরকার। সব ক্ষেত্রেই সরকার ব্যর্থ।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ৭৫ লক্ষ চাকরি, প্রতিশ্রুতি বিজেপির, ‘ভাঁওতা’ বলছে তৃণমূল-বাম-কং
গোটা বিরোধী শিবির যখন কৃষকদের পাশে, তখন কৃষি আন্দোলনকে সামনে রেখে ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি আজ বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকার কৃষকদের সম্মান করে। কিন্তু স্পষ্ট করা দরকার, কৃষি আন্দোলনকে সামনে রেখে ফায়দা তুলতে নেমেছে টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং। তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ আন্দোলনে কৃষক নেতাদের অজানতেই মাওবাদীরা ঢুকে পড়েছে বলে আজ ফের অভিযোগ করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সোম প্রকাশ। সরকারের দুই মন্ত্রীর এ-হেন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। তিনি বলেন, “কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে যাঁরা সরব, তাঁদের খালিস্তানি, পাকিস্তান ও চিনের এজেন্ট, মাওবাদী আর এখন টুকড়ে টুকড়ে গ্যাংয়ের সদস্য বলা হচ্ছে। যত রকম ভাবে আন্দোলনকারীদের দাগিয়ে দেওয়া সম্ভব, তা করা হয়েছে। এর অর্থ হয়, ওই আন্দোলনে আর কৃষকেরা নেই। কিন্তু কৃষকেরাই না-থাকলে কাদের সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy