প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে দেশের রাজধানী। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই এই বিষয়ে সর্বদল বৈঠকে আলোচনার দাবি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
খাস দিল্লিতে তুঙ্গে উঠেছে কৃষক বিক্ষোভ। এই প্রেক্ষিতে কৃষি আইন নিয়ে অবিলম্বে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একগুঁয়েমি ছেড়ে যত দ্রুত সম্ভব সব বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলা উচিত কেন্দ্রের।
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, মমতার দাবি মেনে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলে কৃষি আইন নিয়ে বিরোধী শিবিরের যুক্তি কেন্দ্রকে চাপে ফেলে দেবে। আবার বৈঠক না-ডাকলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুর আরও চড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে বঙ্গ বিধানসভার ভোটের আগে মমতার কৌশলকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। প্রসঙ্গত, সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে প্রথামতো ৩০ জানুয়ারি সর্বদল বৈঠক হওয়ার কথাই ছিল। যা ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিরোধীদের কথায় কর্ণপাত না-করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মানুষের উপরে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ‘চাপিয়ে’ দেওয়ার বিরোধিতায় মমতা বরাবরই সরব। তিন কৃষি আইন প্রসঙ্গেও তিনি মনে করছেন, একগুঁয়ে অবস্থান এবং অহংসর্বস্বতা ছেড়ে কেন্দ্রের উচিত বাকিদের বক্তব্যকেও মান্যতা দেওয়া। ‘‘এটা ইগো বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ব্যাপার নয়। নম্বর রয়েছে বলেই গায়ের জোর দেখানোটা গণতন্ত্রের শর্ত হতে পারে না। অন্যদের কথাও শুনতে হবে,’’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
৬৫ দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন চালাচ্ছেন কৃষকেরা। মঙ্গলবার, প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে দেশের রাজধানী। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন এই বিষয়ে সর্বদল বৈঠকে আলোচনার দাবি তোলেন। তাঁর বক্তব্য, আন্দোলনকারীরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও ময়দান ছাড়ছেন না। কৃষকদের আন্দোলন সমর্থন করছে বেশির ভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দল। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সমর্থনও পাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। ফলে কেন্দ্রের অবস্থানের উল্টো দিকে একটা জোরালো মতামত তৈরি হচ্ছে। তাই সংসদে প্রথাগত আলোচনার বাইরে সব দলের সঙ্গে এ বিষয়ে কেন্দ্রের কথা বলা জরুরি। ‘‘কেন্দ্রকে বুঝতে হবে, এই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক দল পরিচালনা করছে না। ফলে এই আন্দোলনের গায়ে দলীয় রং লাগিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়,’’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধীদের অভিযোগ, তিন কৃষি আইন আনার আগে কৃষকদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি কেন্দ্র। আইনের ‘সুফল’ সম্পর্কে কোনও কৃষক সংগঠনকে কিছু জানানো হয়নি। বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা এড়িয়েই সংসদে বিল পাশ করিয়ে নেয় সরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় কৃষি বিলগুলি বিনা বাধায় পাশ হয়ে যায়। তার পর থেকেই কৃষক আন্দোলন ক্রমশ সংগঠিত হয়েছে। কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে কেন্দ্র একাধিক বার বৈঠক করলেও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। অভিযোগ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এখনও বিরোধীদের বৈঠকে ডাকছে না কেন্দ্র।
মঙ্গলবার কৃষকদের লালকেল্লা অভিযান ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল দিল্লির রাজপথ। লালকেল্লার প্রাচীরে পতাকা লাগানোর ছবি চর্চার কেন্দ্রে এসে গিয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বুধবার আন্দোলনকারীদের একাংশের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, যে-ব্যক্তি লালকেল্লায় পতাকা লাগানোর চেষ্টা করছিলেন, তাঁকে অতীতে কয়েক জন বড় মাপের বিজেপি নেতার সঙ্গে একাধিক বার দেখা গিয়েছে। ফলে আন্দোলনের প্রকৃত অভিমুখ গুলিয়ে দেওয়ার কারণেই মঙ্গলবারের ওই গোলমাল সংগঠিত হয়েছিল কি না, এ দিন সেই প্রশ্নও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy