ছবি: পিটিআই।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ মামলার শুনানি। রবিবার বিক্ষোভকারী কৃষকদের রোষে চুরমার হয়েছে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের মঞ্চ। তার মধ্যেই দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমানায় আত্মঘাতী হলেন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল আরও এক চাষি। এই নিয়ে মোট চার জন।
একের পর আত্মহত্যা যেমন কেন্দ্রের রক্তচাপ বাড়াচ্ছে, তেমনই বিতর্ক দানা বেঁধেছে বিজেপি-শাসিত কর্নাটকে রিলায়্যান্সের চুক্তি চাষের খবরে। প্রথমত, নতুন আইনে চুক্তি চাষ ছাড়পত্র পাওয়ার পরে এই প্রথম ওই রাজ্যে চাল কেনার চুক্তি করল কোনও বড় সংস্থা। তার উপরে কোনও রকম চুক্তি চাষে জড়িত না-থাকার কথা গত সপ্তাহেই পঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল রিলায়্যান্স গোষ্ঠী!
শনিবার সন্ধ্যায় সিংঘুতে কৃষকদের প্রতিবাদ মঞ্চের সামনেই বিষ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন পঞ্জাবের অমরেন্দ্র সিংহ। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ফতেগড় সাহিবের ৩৯ বছর বয়সি এই কৃষকের বন্ধুদের দাবি, মৃত্যুর আগে অমরেন্দ্র বলেছেন, কেন্দ্র কৃষি আইন প্রত্যাহার, ফসলের দামের আইনি গ্যারান্টির দাবি মানছে না বলেই তিনি এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বার্ড ফ্লু সাত রাজ্যে, কেন্দ্রের সতর্কতা জারি
আরও পড়ুন: পুরীর মন্দিরে আর লাগবে না কোভিড রিপোর্ট, নয়া ব্যবস্থা ২১ জানুয়ারি থেকে
কৃষক নেতাদের অবশ্য আন্দোলনকারীদের কাছে আর্জি, তাঁরা যেন আত্মহত্যার পথ বেছে না-নেন। বক্তব্য, আত্মহত্যা নয়, লড়াইয়ের মাধ্যমেই সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে হবে। রবিবার তাঁদের ঘোষণা, ২০ জানুয়ারি গুরু গোবিন্দ সিংহের গুরুপরব পালন করে আন্দোলন সফল করার শপথ নেওয়া হবে। ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ট্র্যাক্টরের কুচকাওয়াজ হবে। রবিবার জম্মু-কাশ্মীরের কৃষকদের একাংশ দিল্লির সীমানায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। সোমবার পশ্চিমবঙ্গের এক দল কৃষকেরও যোগ দেওয়ার কথা।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ মামলার শুনানি। দিল্লির সীমানায় অবরোধ তুলে দেওয়ার দাবিতে একাধিক মামলা হয়েছে। তা-ও রয়েছে শুনানির তালিকায়। মামলাকারীদের যুক্তি, রাস্তা অবরোধ করে আমজনতার ভোগান্তি ডেকে এনে যে আন্দোলন চলতে পারে না, শাহিন বাগের সময়েই তা বলেছিল শীর্ষ আদালত। এর মধ্যে আবার রাজস্থানের বিজেপি বিধায়ক মদন দিলাওয়ারের অভিযোগ, কৃষক আন্দোলন থেকে বার্ড ফ্লু ছড়াতে পারে। যুক্তি, ‘‘বিক্ষোভকারীরা বিরিয়ানি খাচ্ছেন। কাজু-বাদাম খাচ্ছেন। এদের মধ্যে কত সন্ত্রাসবাদী, চোর, ডাকাত থাকতে পারে! সরকার কয়েক দিনের মধ্যে আন্দোলন তুলে না-দিলে, দেশে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়বে।’’
মোদী সরকার ও বিজেপি নেতারা কৃষি আইনে চাষিদের উপকারের অবস্থানে অনড়। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা কর্নাটকের রায়চূড়ে রিলায়্যান্স রিটেলের এক হাজার কুইন্টাল চাল কেনার চুক্তি তুলে ধরছেন। ‘স্বাস্থ্য ফার্মার্স প্রোডিউসিং কোম্পানি’ নামে সংস্থার থেকে সোনা মাসুড়ি চাল কেনার চুক্তি হয়েছে। এই সংস্থায় ১,১০০ চাষি নাম লিখিয়েছেন। দাবি, এমএসপি-র থেকে দর পেয়েছেন প্রতি কুইন্টালে ৮২ টাকা বেশি। অথচ গত সপ্তাহেই রিলায়্যান্স গোষ্ঠী পঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, তারা চুক্তি চাষে জড়িত নয়। রিলায়্যান্স চাষিদের দিয়ে চুক্তি-চাষ করায় না। কৃষক সভার নেতা কে কৃষ্ণপ্রসাদের কটাক্ষ, ‘‘অম্বানী-আদানিদের ফায়দার জন্যই কৃষি আইন এসেছে বলে কৃষকরা তাঁদের সংস্থার পণ্য ও পরিষেবা বয়কটের ডাক দিয়েছেন। সেই ক্ষোভ এড়াতেই ওই হলফনামা। এখন আসল ছবি স্পষ্ট।’’
কৃষক সভার আর এক নেতা বিজু কৃষ্ণন বলেন, ‘‘পুরোটাই প্রহসন। এমএসপি সাধারণ মানের চালের জন্য ঘোষিত হয়। সোনা মাসুড়ি চাল উন্নত মানের। তার দাম তো বেশি হবেই। এ যেন বলা হচ্ছে, রিলায়্যান্স গোবিন্দভোগ বা বাসমতী ৮২ টাকা বেশি দামে কিনছে।’’ হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে অস্বীকার করার পরেও রিলায়্যান্স কী ভাবে ধান কেনার চুক্তি করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সংস্থা সূত্রের ব্যাখ্যা, হলফনামায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, রিলায়্যান্স রিটেল সরাসরি চাষিদের থেকে চাল-ডাল কেনে না। সংস্থার সরবরাহকারীদের থেকে কেনে। রায়চূড়ে রিলায়্যান্সের সরবরাহকারী সংস্থাই চাষিদের থেকে চাল কিনছে। সরাসরি রিলায়্যান্স নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy