প্রতীকী ছবি
পশ্চিমবঙ্গের কৃষক পরিবারের গড় দৈনিক আয় মাত্র সাড়ে ২২ টাকা। মাসে মোট ৬,৭৬২ টাকা। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সংস্থা এনএসএসও-র সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, রাজ্যের কৃষক পরিবারের আয়ের সামান্য অংশই ফসল বেচে রোজগার হয়। অর্ধেকের বেশি রোজগারই আসে কোনও চাকরি, একশো দিনের কাজ বা অন্যের জমিতে কাজ করে।
কেন্দ্রীয় সংস্থা এনএসএসও (ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন) কোভিডের ধাক্কার আগে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দেশের কৃষকদের হালহকিকত নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল। সেই সমীক্ষার রিপোর্টই এ বার প্রকাশ্যে এসেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের কৃষক পরিবারের মাসে গড় আয় ১০,২১৮ টাকা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কৃষক পরিবারের গড় আয় মাত্র ৬,৭৬২ টাকা। অধিকাংশ রাজ্যেই কৃষক পরিবারের গড় আয় পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি।
২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২-এর মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিলেও রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে চাষিদের আয় দ্বিগুণের বেশিতে নিয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে বলেছিলেন, ২০১০ সালে রাজ্যের কৃষকদের আয় ছিল বছরে ৯১ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ২.৩৯ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে। যার অর্থ, রাজ্যের কৃষকদের মাসিক আয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এনএসএসও-র সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কৃষকদের আয় মাত্র ৬,৭৬২ টাকা।
নবান্নের হিসেবের সঙ্গে কেন্দ্রের হিসেবের এতখানি ফারাক নিয়ে প্রশ্নে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রের সমাীক্ষায় কী পাওয়া গিয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেব।” অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কৃষক পরিবারের আয় কম হওয়ার মধ্যে অবশ্য রাজ্যের কৃষি দফতরের কর্তারা কোনও আশ্চর্যের বিষয় দেখছেন না। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গে মাথা পিছু জমির মালিকানা অনেক কম। পঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যে জমির মালিকানার পরিমাণ অনেক বেশি। ওই সব রাজ্যে কৃষক পরিবারের গড় আয়ও অনেক বেশি।
যে সব পরিবার বছরে অন্তত ৪ হাজার টাকা মূল্যের ফসল উৎপাদন করে এবং পরিবারের অন্তত একজন চাষের কাজে যুক্ত, তাঁদেরই কৃষক পরিবার হিসেবে ধরা হয়। সরকারি সমীক্ষা বলছে, চাষাবাদ থেকে আয় কমে যাওয়ায় রাজ্যের অধিকাংশ কৃষক পরিবারই ফসল উৎপাদনের থেকে অন্য কাজে বেশি মন দিচ্ছেন। কৃষক পরিবারের তিন ভাগের মাত্র এক ভাগ মানুষ সরাসরি ফসল উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। ঠিক একই সংখ্যক মানুষ অন্যের জমির চাষে বা চাষবাস ছাড়া অন্যান্য কাজে ঠিকে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে রোজগারের চেষ্টা করছেন।
চাষের থেকে কৃষক পরিবারের আয় যে খুবই কম, তা-ও কেন্দ্রের সমীক্ষায় স্পষ্ট। মাসিক আয়ের মাত্র ২২.৮ শতাংশ ফসল চাষ থেকে আসে। ৬,৭৬২ টাকার মধ্যে মাত্র ১,৫৪৭ টাকা। অন্য কোথাও কাজ করে বেতন, একশো দিনের কাজ বা অন্যের জমিতে কাজের মজুরি থেকেই কৃষক পরিবারের আয়ের ৫৫ শতাংশ আসে। ৬,৭৬২ টাকার মধ্যে ৩,৭২১ টাকা। কৃষিকাজ ছাড়া অন্যান্য ব্যবসা থেকে মাসিক আয়ের ১৩.৮ শতাংশ আসে। অর্থনীতিবিদরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত দু’বছরে কোভিড-লকডাউনের ফলে পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে শহর থেকে গ্রামে ফিরেছেন। ফলে গ্রামের অর্থনীতিতে চাপ বেড়েছে। ফলে ২০১৮-১৯-এর তুলনায় চাষিদের হাল আরও খারাপ না হলেও ভাল যে হয়নি, তা বলাই বাহুল্য।
সমীক্ষা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে পরিবার পিছু জমির মালিকানা কম হওয়ার জন্য রাজ্যের কৃষক পরিবারের মাথায় দেনার বোঝাও জাতীয় স্তরের থেকে অনেক কম। সমীক্ষা বলছে, দেশের ৯.৩ কোটি কৃষক পরিবারের অর্ধেক মানুষই ঋণগ্রস্ত। পরিবার পিছু গড় ধারের অঙ্ক ৭৪,১২১ টাকা। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৬৬.৯ লক্ষ কৃষক পরিবারের মধ্যেও অর্ধেক পরিবার ঋণগ্রস্ত। কিন্তু গড়ে পরিবার পিছু দেনার পরিমাণ মাত্র ২৬,৪৫২ টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy