কেন্দ্রের তরফে মৌখিক আশ্বাস পেয়ে অবশেষে ১৩১ দিন পর ‘আমরণ অনশন’ ভাঙলেন পঞ্জাবের কৃষক নেতা জগজিৎ সিংহ ডাল্লেওয়াল। গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে আন্দোলনরত কৃষকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে অনশনে বসেছিলেন তিনি, যার মধ্যে ছিল ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তার দাবিও। শনিবার ডাল্লেওয়ালকে আমরণ অনশন প্রত্যাহারের আবেদন করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এবং কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রবনীত সিংহ বিট্টু। পাশাপাশি, আগামী ৪ মে কৃষকদের সঙ্গে আরও এক বার আলোচনায় বসার প্রস্তাবও দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তার পরের দিনই পর অনশন ভাঙলেন কৃষক নেতা।
ডাল্লেওয়াল সংযুক্ত কিসান মোর্চা (অরাজনৈতিক) এবং কিসান মজদুর মোর্চা (কেএমএম)-র যৌথমঞ্চের বর্ষীয়ান নেতা। রবিবার পঞ্জাবের ফতেহগড় সাহিব জেলার সিরহিন্দে আয়োজিত ‘কিসান মহাপঞ্চায়েতে’ আমরণ অনশন ভাঙার কথা ঘোষণা করেছেন ডাল্লেওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা (কৃষকেরা) সকলেই আমাকে আমরণ অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। আন্দোলনের হাল ধরার জন্য আমি আপনাদের সকলের কাছে ঋণী। আমি আপনাদের অনুভূতিকে সম্মান করি। তাই আপনাদের আদেশই শিরোধার্য।’’
আরও পড়ুন:
গত জানুয়ারি মাসেও কেন্দ্রের তরফে আলোচনায় বসার আশ্বাস পেয়ে খনৌরি সীমানায় চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া শুরু করেছিলেন ডাল্লেওয়াল। কিন্তু তখনও পুরোপুরি অনশন থামাননি তিনি। শনিবার দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আলাদা আলাদা করে তাঁকে অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান। রেল প্রতিমন্ত্রী বিট্টু সমাজমাধ্যম এক্সে তাঁকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘‘আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবন পঞ্জাবের জনগণের কাছে মূল্যবান। কারণ, কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের এই সংগ্রামে আপনার নেতৃত্ব সর্বদা প্রয়োজন হবে।’’ তিনি আরও জানান, লোকসভা অধিবেশন চলাকালীনও সমস্ত বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা ডাল্লেওয়ালের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে খোঁজখবর নিতেন। এর পরেই অনশন ভেঙেছেন কৃষক নেতা।
তবে অনশন শেষ হলেও আন্দোলন এখানেই শেষ নয়। কৃষকেরা জানিয়েছেন, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র আইনি স্বীকৃতি না মেলা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ফসলের এমএসপি, কৃষিঋণ মকুব, পেনশনের ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতের বিল না-বৃদ্ধি করার মতো বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কৃষকদের আন্দোলন চলছে। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লি সংলগ্ন পঞ্জাব এবং হরিয়ানার শম্ভু এবং খানাউড়ি সীমানায় অবস্থানে বসেছেন কৃষকেরা। নভেম্বরের শেষ থেকেই কৃষকেরা শম্ভু সীমানা থেকে দফায় দফায় দিল্লির উদ্দেশে মিছিল করে এগোনোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে পুলিশ-প্রশাসনের বাধায় বার বারই কৃষকদের সেই ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর পর দাবি আদায়ে খানাউড়ি সীমান্তে গত ২৬ নভেম্বর ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেন ডাল্লেওয়াল। ক্রমে তাঁর শারীরিক অবস্থাও সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। সেই আবহেই কৃষকদের প্রতি সুর নরম করে কেন্দ্র। অথচ দফায় দফায় বৈঠক হলেও সমাধানসূত্র এখনও অধরাই।