অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ প্রিয়জন। অনন্ত অপেক্ষায় দিল্লির সঞ্জয় গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের বাইরে। শনিবার। পিটিআই
পূজাকে দেখেছেন কেউ? পূজার বাঁ চোখের নীচে কাটা দাগ। এই পোড়া বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরার অফিসে কাজ করতেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মেয়ে। বাড়িতে আছে স্কুলপড়ুয়া দুই বোন। পূজার খোঁজে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাগলের মতো ছুটছেন মা। পাচ্ছেন না মেয়েকে। গত কাল সন্ধেয় পশ্চিম দিল্লির মুন্ডকার চারতলা বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে পূজার কোনও খোঁজ নেই।
সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ২১ বছরের মণিকার হদিস পাননি দাদা অজিত তিওয়ারি। কাল বিকেল পাঁচটায় আগুনের কথা জানতে পেরেছিলেন অজিত। ধারণাই করতে পারেননি যে, সেই আগুন লেগেছে বোনের অফিসবাড়িতে। সন্ধে সাতটা পর্যন্ত মণিকা না ফেরায় খোঁজ শুরু করেন। এখনও শেষ হয়নি সেই খোঁজ। অজিত বিড়বিড় করেন, ‘‘মাত্র এক দিন আগে ও প্রথম মাইনেটা পেয়েছিল!’’
পূজার খোঁজ নেই, মণিকার খোঁজ নেই। গত কালের অগ্নিকাণ্ডের পরে মোট ২৯ জনের এখনও কোনও খোঁজ নেই। এই ২৯ জনের মধ্যে ২৪ জনই মহিলা। অগ্নিকাণ্ডের সময়ে ওই বাণিজ্যিক ভবনটিতেই তাঁরা ছিলেন বলে পরিজনেদের ধারণা। দুর্ঘটনাস্থলে, হাসপাতালে তাঁরা হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত মুন্ডকার বহুতল থেকে ২৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েই দিচ্ছে, সংখ্যাটা বাড়বে। কারণ আগুনে তেতে ওঠা বাড়ি জল ঢেলে ঠান্ডা করার সময়ে কিছু পোড়া দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, আরও অন্তত তিন জন যে পুড়ে মারা গিয়েছেন, তা এখনই মোটামুটি বলে দেওয়া যাচ্ছে। তবু আশঙ্কা, সংখ্যাটা তিনেই আটকে থাকবে তো?
আহতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১২। পুড়ে যাওয়া সাতাশটি মৃতদেহের মধ্যে মাত্র সাতটিকে শনাক্ত করা গিয়েছে। সেই সাত জনের মধ্যে পাঁচ জনই মহিলা। মৃত, আহত ও নিখোঁজদের অধিকাংশই অতি সাধারণ পরিবারের মানুষ। অনেকেরই টানাটানির সংসার, কাজ করতেন মজুরির বিনিময়ে। মৃতের তালিকায়রয়েছেন কুড়ির কোঠার দুই তরুণী, যাঁরা চাকরিটা করছিলেন নিজেদের বিয়ের টাকা জমাবেন বলে।
পুলিশের ধারণা, আগুন লাগার সময়ে চারতলা বাড়িটিতে ছিলেন অন্তত ১০০ জন। অথচ ঢোকা-বেরোনোর পথ বলতে একটি মাত্র সরু সিঁড়ি! দিল্লির চিফ ফায়ার অফিসার অতুল গর্গ বলেন, ‘‘এই জন্যই এতগুলো মৃত্যু। বেরোনোর পথই ছিল না। সম্ভবত এসি মেশিনে বিস্ফোরণ থেকেই আগুনটা লাগে। যে পোড়া দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, সেগুলো এক জন মানুষের না একাধিক মানুষের, এখনই বলা সম্ভব নয়।’’ ১৯৯৭ সালে উপহার সিনেমা হল এবং ২০১৯ সালে আনাজ মান্ডির আগুন বাদ দিলে সাম্প্রতিক অতীতে দিল্লির আর কোনও অগ্নিকাণ্ডে এত বেশি মানুষ মারা যাননি।
এর আগে দিল্লি-সহ নানা শহরে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পরে অগ্নি-সুরক্ষা বিধি না-মানা কিংবা বেআইনি নির্মাণের মতো কারণ উঠে এসেছে। মুন্ডকাও ব্যতিক্রম নয়। জানা যাচ্ছে, বাণিজ্যিক ভবনটির অগ্নি-সুরক্ষার শংসাপত্র ছিল না। বাড়িটির মালিক মণীশ লাকড়া পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (আউটার) সমীর শর্মা জানিয়েছেন, দোতলায় সিসিটিভি ও রাউটার নির্মাতা একটি সংস্থার অফিস থেকেই প্রথম আগুন ছড়ায় বলে মনে করা হচ্ছে। বাড়িটির প্রতিটি তলাই এই সংস্থা ব্যবহার করত। সংস্থাটির দুই মালিক হরিশ ও বরুণ গোয়েলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত খুন-সহ বিভিন্ন ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। হরিশ-বরুণের বাবা অমরনাথ গোয়েল গত কালের অগ্নিকাণ্ডেই প্রাণ হারান বলে খবর।
রোহিণীর ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর দীপা বর্মা জানান, তাঁদের দু’টি দল ঘটনাস্থলে নমুনা সংগ্রহ করছে। পোড়া দেহাংশ মেলায় মৃতদের পরিচয় জানতে ডিএনএ পরীক্ষা হবে। অনেকগুলি দেহ এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করার সম্ভাবনাও
প্রায় নেই। আর খোঁজই মিলল না যাঁদের? অজানা আশঙ্কা পাক খাচ্ছে পোড়া বাতাসে।
এ দিকে, শনিবার রাতে উত্তর দিল্লির নারেলায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে। শেষ পাওয়া খবরে, দমকলের ২৫টি ইঞ্জিন গিয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত কারও আটকে থাকার খবর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy