ফাইল চিত্র।
সে দিন ভোর সাড়ে তিনটেয় তাঁরা বেরিয়েছিলেন বালতালের বেস ক্যাম্প থেকে। ভাবতেও পারেননি, কী অঘটন অপেক্ষা করছে সামনে।
দু’দিন কেটে গিয়েছে। শুক্রবার অমরনাথ থেকে ফেরার পথে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে চোখের সামনে দেখা দুর্ঘটনার কথা এখনও ভুলতে পারছেন না দক্ষিণ দিনাজপুরের ওই সাত জন। শিক্ষক শুভ্রনীল মুন্সি ও তাঁর বন্ধুরা। ফোনের ও পারে শিউরে উঠছিলেন কথা বলতে বলতে।
শুভ্রনীলের কাছ থেকে জানা গেল, শুক্রবার অমরনাথ দর্শন করে সবে লঙ্গরখানা পর্যন্ত এসেছেন তাঁরা। এমন সময় বৃষ্টি শুরু হয়। তার পরে হঠাৎই মেঘভাঙা গর্জন এবং মানুষের আর্তনাদ। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে উপর থেকে জলের সঙ্গে ধেয়ে আসতে থাকে বড় বড় পাথরের চাঁই। শুভ্রনীল ও তাঁর বন্ধু তোতোন হালদার বলছিলেন, মুহূর্তে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণভয়ে যে যে-দিকে পারে, ছুট দেয়। আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন আশপাশে। তাঁদের সামনেই এক মহিলার মাথায় পাথর এসে পড়ে। অনেকেই অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন।
ফোনে কথা বলতে বলতে এখনও যেন গলা কেঁপে উঠছে বালুরঘাটের কাছে পাগলিগঞ্জের শুভ্রনীলের। তিনি বলেন, ‘‘তখন আমাদের কিছু দেখার কথা মাথায় আসেনি। মাথার মধ্যে ঘুরছিল কেদারনাথে বিধ্বংসী মেঘভাঙা বৃষ্টির কথা। সেই আতঙ্কে যে যে দিকে পেরেছি, ছুটেছি। আমরা সকলে মিলে গিয়ে একটা বড় পাথরের আড়ালে লুকোতে পেরেছিলাম। যদিও তার উপর দিয়েও জলস্রোত বয়ে যেতেই পারত।’’
শুভ্রনীলের বন্ধু তোতোন বলেন, ‘‘তখন মাথা কাজ করছিল না। জলস্রোতের থেকেও ভয় হচ্ছিল বড় বড় পাথর নেমে আসতে দেখে।’’ কী ভাবে যে শেষ পর্যন্ত বেঁচে ফিরে এসেছেন, তা নিজেরাও জানেন না ওঁরা। শুভ্রনীল বলেন, ‘‘ঘণ্টা দেড়েক এমন চলে। তার পরে আচমকাই আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়।’’ একটু পরে রাস্তাও পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়। সেনাবাহিনীর লোকজন আসে। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় পাঁচ কিমি দুরের পঞ্চতরণী বেস ক্যাম্পে। পুরো ভিজে গিয়েছিলেন সকলে। সেই ভাবেই রাত কাঁটান তাঁরা। শনিবার তাঁদের বালতালে ফেরত আনা হয়।
ওই দলেই রয়েছেন পুষ্পজিত চক্রবর্তী। তাঁর স্ত্রী টুসি বলেন, ‘‘শুক্রবার টিভিতে অমরনাথের খবর দেখার পর থেকে বাড়িতে রান্না-খাওয়া বন্ধ। ফোনেও যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। দুশ্চিন্তায় কেটেছে গোটা রাত।’’ আর এক সদস্য মুকুল সরকারের স্ত্রী সীমার কথায়, ‘‘শনিবার বিকেলে ফোনে কথা হওয়ার পরে স্বস্তি পায় সবাই।’’
রবিবার শ্রীনগর থেকে বিমানে দিল্লি পৌঁছে তাঁরা বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy