সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে চলছে উদ্ধারকাজ। — ফাইল চিত্র।
উত্তরাখণ্ডে শুধু সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে নয়, তার পাশেও অপেক্ষা করছে বড় বিপদ! এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। সুড়ঙ্গের পাশে রয়েছে বর্জ্যের পাহাড়। সুড়ঙ্গ তৈরির সময় যে বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে, তা জমেই তৈরি হয়েছে পাহাড়টি। যে কোনও সময় তাতে ধস নামলে আশপাশের বসতি এলাকা মিশে যেতে পারে ধুলোয়।
চারধাম প্রকল্পের অধীনে তৈরি করা হয়েছে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ। পাহাড় কেটে তা তৈরির সময় যে বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে, সেগুলি সুড়ঙ্গের পাশে ফেলা হয়েছিল। তা জমতে জমতেই তৈরি হয়েছে পাহাড়। সেই ধুলো-বালির পাহাড়কে আটকানোর জন্য কোনও প্রাচীরও দেওয়া হয়নি। মনে করা হচ্ছে, ভারী বৃষ্টি হলে ওই পাহাড়ে ধস নামতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই বর্জ্য গড়িয়ে নামতে পারে পাশের জনবসতি এলাকায়।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে নির্মাণের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে বর্জ্য নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা করার কথা, যাতে কোনও ভাবেই পার্বত্য প্রকৃতি এবং পরিবেশ নষ্ট না হয়। অভিযোগ, সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের বর্জ্য নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু মানা হয়নি। উত্তরাখণ্ড কৃষি এবং অরণ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এসপি সতী বলেন, ‘‘বর্জ্যের পাহাড়ের গোড়ায় কোনও প্রাচীর নেই। এটা খুবই বিপজ্জনক। এই নির্মাণ-বর্জ্য গড়িয়ে যেতে পারে। বৃদ্ধি ঘটাতে পারে ঝর্না বা নদীর জলের ঘনত্ব।’’ সতীর মতে, পাহাড়ের নীচের দিকের অংশে বন্যা হলে এই বর্জ্য সেখানে গিয়ে জমবে। সে ক্ষেত্রে জনবসতি ডুবতে পারে কাদাজলে। তিনি স্পষ্টই বলেন, ‘‘এই বর্জ্য নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে কোনও নির্দেশিকা মানা হয়নি।’’
১২ নভেম্বর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামে। সেখানে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। তার পরেই অনেক পরিবেশবিদ এই অঞ্চলে পরিকল্পনাবিহীন নির্মাণ কাজকে দায়ী করেছেন। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব সুধীর কৃষ্ণ একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান, উত্তরকাশীর বর্তমান পরিস্থিতি সকলকে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রার্থনা করছি। সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করছে বলে আমি খুশি। কিন্তু উদ্বিগ্নও। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। আমরা যদিও দেরি করে ফেলেছি, তবে আর দেরি করা উচিত নয়।’’
সুড়ঙ্গের পাশে এই ‘বিপদ’-এর কথা জানার পর প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে উদ্ধারকাজ নিয়েই ব্যস্ত তারা। তবে এর পর অবশ্যই বিষয়টি দেখা হবে। ভারতীয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সদস্য বিশাল চৌহান জানিয়েছেন, ‘‘হিমালয়ের ভূতত্ত্ব অনেকটাই আলাদা। কী হবে, আগে থেকে বোঝা যায় না। তবে পরিবেশ সংক্রান্ত পরীক্ষার পরেই প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যে প্রশ্ন উঠেছে, তা অবশ্যই উদ্ধারকাজের পর বিবেচনা করা হবে। এখন আমাদের নজরে উদ্ধারকাজ।’’ সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে উদ্ধারকাজের তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন উপদেষ্টা ভাস্কর খুলবে। তিনিও জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজের নিষ্পত্তি হলে এই বিষয়টি দেখা হবে। উত্তরকাশীর এই প্রকল্প রূপায়ণে রয়েছে হায়দরাবাদের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা। ৮৫৩ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে এই প্রকল্পে। ওই সুড়ঙ্গে উদ্ধারকাজ পরিদর্শনে রবিবার পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিংহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy