Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Supreme Court on Sexual Relation

বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভাঙা মানেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নয়, ধর্ষণে অভিযুক্তকে মুক্তি সুপ্রিম কোর্টের

অভিযোগকারিণীর উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলে, যিনি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, তিনি নিজে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।

supreme court acquits a person accused of raping a woman on the behest of promise to marry.

হাই কোর্ট এবং নিম্ন আদালতের রায় ভুল ছিল বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:২০
Share: Save:

কথা ছিল বিয়ে হবে। সেই ভরসাতেই ঘনিষ্ঠতা, কোনও ক্ষেত্রে সহবাসও। এর পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলেই কি ধরে নিতে হবে ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দেওয়া হয়েছিল? এমনও তো হতে পারে, যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং যখন দিয়েছিলেন, তখন তা পূরণ করবেন ভেবেই দিয়েছিলেন। পরে হয়তো কোনও পরিস্থিতির ফেরে কথা রাখতে পারেননি। এক ধর্ষণে অভিযুক্তের মামলার শুনানিতে এমনই যুক্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট। মামলাটিতে ধর্ষণে অভিযুক্তকে নিষ্কৃতি দিয়ে কোর্ট জানিয়েছে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভাঙা মানেই তা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি না-ও হতে পারে।

এ বিষয়ে দিল্লি হাই কোর্টের এবং এক নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রস্তোগি এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চে। বেঞ্চ মামলাটি শুনে জানিয়েছে, এই মামলায় অভিযুক্তকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে বড় ভুল করেছে হাই কোর্ট এবং নিম্ন আদালত। একই সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগকারিণীর উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলে, যিনি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, তিনি নিজেই বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে বরং তিনিই তাঁর পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং জেনেবুঝেই আরও পছন্দের জীবনসঙ্গীকে বেছে নিয়ে নতুন সম্পর্কে প্রবেশ করেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট যে মামলায় এই নির্দেশ দিয়েছেন, সেই মামলা প্রথম দায়ের হয় ২০১৫ সালে। তবে ঘটনার সূত্রপাত তারও বেশ কয়েক বছর আগে। অভিযোগকারিণী তখন বিবাহিত মহিলা এবং তিন সন্তানের জননী। অভিযুক্ত তাঁর বাড়ির সামনেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। দু’জনেরই পরস্পরকে ভাল লাগে এবং সেই ভাল লাগা ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা এবং নিয়মিত যৌন সম্পর্কে পৌঁছয়।

২০১১ সালে অভিযুক্তের সন্তানের জন্ম দেন অভিযোগকারিণী। এর পর ২০১২ সালে সঙ্গীর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে হাজির হন ওই বিবাহিতা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর সঙ্গীও বিবাহিত এবং তাঁর সন্তানও রয়েছে। এর পরও অবশ্য আলাদা জায়গায় একসঙ্গেই থাকছিলেন দু’জন। ২০১৪ সালে অভিযোগকারিণী তাঁর স্বামীর থেকে পরস্পরের সম্মতিক্রমে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। স্বামী এবং তিন সন্তানের দায়িত্ব পুরোপুরি ছেড়ে থিতু হন। কিন্তু ২০১৫ সালে পরিস্থিতি পাল্টায়। নতুন সঙ্গীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ওই মহিলা। তাঁর যুক্তি ছিল, অভিযুক্ত তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলেই তিনি যৌন সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযুক্ত শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিয়ে করতে চাননি। প্রতিশ্রুতি ভেঙেছেন।

এই মামলায় নিম্ন আদালত এবং দিল্লি হাই কোর্ট অভিযুক্তকে ধর্ষণের দায়েই দোষী সাব্যস্ত করেছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে আসে মামলাটি। তার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, ‘‘অভিযোগকারিণী বিবাহিতা এবং তিন সন্তানের জননী। তাই বলা যায়, তিনি যথেষ্ট পরিণত বোধ এবং বুদ্ধিসম্পন্ন। তিনি কী করতে চলেছেন এবং তার পরিণাম কী হতে পারে, সে ব্যাপারে যথোচিত অবগত। এই সিদ্ধান্তের নৈতিকতা এবং অনৈতিকতা বিষয়েও অবগত। যদি তা না-ও হয়, তা হলেও দেখা যাচ্ছে তিনি নিজের স্বামী এবং তিন সন্তানের সঙ্গে প্রতারণা করে নতুন বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। বিবাহিত থাকাকালীন নতুন সঙ্গীর সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং আরও ভাল জীবনের আশায় পরিবার ছেড়ে নতুন সঙ্গীর সঙ্গে ঘর ছেড়েছেন।’’

আদালতের রায়, ‘‘এই মামলায় সমস্ত দিকে নজর রেখে এবং ঘটনা পরম্পরা বিচার করে এ কথা কোনও ভাবেই বলা যায় না যে, অভিযোগকারিণী না বুঝে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। ফলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ভাবেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধরায় মামলা দায়ের করা যায় না। এই মর্মেই তাঁকে ধর্ষণের মামলা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy