(বাঁ দিক থেকে) রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে, সনিয়া গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
মধ্যপ্রদেশের ২৩০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র ছ’টি চেয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়া’র শরিক সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা দিতে রাজি হননি রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গেরা। ৭১টি আসনে প্রার্থী দিয়ে (আরও ৯টি আসনে ছোট দলগুলিকে সমর্থন করে) অখিলেশ ঘোষণা করেছিলেন, কংগ্রেসের ‘বেইমানির’ জবাব তিনি দেবেন। ভোটের ফল বলছে, উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া বুন্দেলখণ্ড-বাঘেলখণ্ডের পাশাপাশি বিন্ধ্য অঞ্চলেও কংগ্রেসের ভোট কেটেছেন সমাজবাদী প্রার্থীরা।
ভোটের ফলপ্রকাশের পরে মধ্যপ্রদেশের এক কংগ্রেস নেতার আক্ষেপ, ‘‘২০১৮-য় মাত্র একটি আসনে জিতলেও আমাদের রাজ্যে যাদব ভোটার ৪ শতাংশের বেশি। সামগ্রিক ভাবে ওবিসি জনগোষ্ঠীগুলির ভোট ৫০ শতাংশের বেশি। তা মাথায় রাখা উচিত ছিল।’’ শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, হিন্দি বলয়ের অন্য দুই রাজ্য ছত্তীসগঢ় এবং রাজস্থানে কংগ্রেসের ভরাডুবির ‘কারণ’ হিসাবেও উঠে আসছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা, প্রচারের দিশাহীনতার পাশাপাশি ‘একলা চলো’র প্রবণতার কথা।
বিজেপি বিরোধী ছোট আঞ্চলিক দল, কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হওয়া দল এমনকি, বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদেরও ভোটের ময়দানে এক ছটাকও জায়গা দিতে চায়নি কংগ্রেস। ভোটপণ্ডিতদের একাংশের মতে, গণনার ফলে সেই ‘প্রভাব’ পড়েছে। অনেক আসনেই ভোট কাটাকাটিতে বাজিমাত করেছে বিজেপি। বস্তুত, জোট রাজনীতিতে কংগ্রেসের ‘দাদাগিরির দিন শেষ’ বলেই হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের ভোট বার্তা দিয়েছে। যে বার্তা বলছে, অন্তত হিন্দি বলয়ে ধর্ম ও জাতপাতভিত্তিক রাজনীতির আখড়ায় বিজেপির মোকাবিলা করা একার শক্তিতে কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব নয়।
মধ্যপ্রদেশের মতোই ছত্তীসগঢ় লাগোয়া জনজাতি এলাকায় সক্রিয় ‘গন্ডোয়ানা গণতন্ত্র পার্টি’ (জিজিপি)-র সঙ্গে অতীতের মতোই কংগ্রেসের আসন সমঝোতার সম্ভাবনা তৈরি হলেও তা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ফলে মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি একক শক্তিতে ছত্তীসগঢ়েও ভোটে লড়েছে জিজিপি। তার ফল ভুগেছে কংগ্রেস। আম আদমি পার্টি, সিপিএম, সিপিআই মায় নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ)-ও এ বার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ তুলে আলাদা ভাবে লড়েছিল হিন্দি বলয়ে।
গুজরাতের প্রভাবশালী জনজাতি নেতা তথা বিধায়ক ছোটু বাসবের দল ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি (বিটিপি) অতীতে কংগ্রেসের সহযোগী ছিল। ২০১৮ সালে রাজস্থানের বিধানসভা ভোটে একক শক্তিতে লড়ে দু’টি আসনেও জিতেছিল তারা। দক্ষিণ রাজস্থানের দুঙ্গারপুর, বঁসওয়াড়া, উদয়পুরের মতো জনজাতি প্রভাবিত জেলাগুলিতে সক্রিয় বিটিপি এবং ওই দল ভেঙে তৈরি হওয়া ‘ভারতীয় আদিবাসী পার্টি’ (বিএপি) এ বার কংগ্রেসের কাছে গোটা কয়েক আসন চেয়েও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। তাই বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিয়ে অশোক গহলৌতের ‘যাত্রাভঙ্গ’ করেছে তারা। মায়াবতীয় বিএসপি এবং চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণের আজাদ সমাজ পার্টিও তিন রাজ্যে কংগ্রেসের দলিত ভোটে ‘সিঁধ’ কেটেছে বলে প্রাথমিক ফলাফলে অনুমান।
ছত্তীসগঢ়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রভাবশালী আদিবাসী নেতা অরবিন্দ নেতম কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল ‘হামার রাজ পার্টি’ গড়ে জনজাতি প্রভাবিত অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দেওয়ায় সুবিধা পেয়েছে বিজেপি। তা ছাড়া, মূলত আদিবাসী খ্রিস্টানদের সংগঠন সর্ব আদি দল এই প্রথম বার ভোটে লড়তে নামায় বস্তার অঞ্চলের সাতটি জেলায় বিপাকে পড়তে হয়েছে কংগ্রেসকে। অথচ, ভোটের আগে একটু চেষ্টা করলেই এই দুই দলকে কংগ্রেস পাশে পেতে পারত।
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত জোগীর দল ‘জনতা কংগ্রেস ছত্তীসগঢ়’ (জেসিসি)-এর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য বলে তাঁদের দাবি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কংগ্রেস হাইকমান্ড নয়, ভূপেশ বঘেলের ব্যক্তিগত অসূয়াকেই দায়ী করছেন তাঁরা। ওবিসি নেতা ভূপেশের কারণে প্রভাবশালী দলিত সতনামী সংগঠনের ভোটও কংগ্রেসের হাতাছাড়া হয়েছে। এক সময় সামাজিক ভাবে অস্পৃশ্য দলিতদের নিয়েই সতনামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রয়াত গুরু ঘাসীদাস। সেই সতনামী সমাজের হাতে এখন রাজ্যের ১৬ শতাংশ ভোট। অন্তত এক ডজন আসনে সতনামী ভোটারেরাই নির্ণায়ক শক্তি। ২০১৮ সালে সেই সমাজের অবিসংবাদী গুরু মহন্ত বালদাস প্রকাশ্যে কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিলেন। যা রমন সিংহের ১৫ বছরের সরকারের পতনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বলে মনে করা হয়। এ বার কংগ্রেসের ‘ব্যবহারে’ ক্ষুব্ধ সতনামী গুরু প্রকাশ্যেই সমর্থন করেছিলেন বিজেপিকে।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির রাজ্য তেলঙ্গানাতেও কংগ্রেসের দাদাগিরিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে আলাদা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশের বৃহত্তম বামপন্থী দল। সে রাজ্যের ১১৯টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটি চেয়েছিল সিপিএম। তীব্র প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় কংগ্রেস তেলঙ্গানায় মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দলকে হারালেও লোকসভা ভোটে একলা লড়লে রাহুল-খড়্গেদের রাজনৈতিক মাশুল দিতে হতে পারে। ঘটনাচক্রে, ভোটগণনার ফলের আভাস পেয়েই রবিবার ‘সহযোগী’ দলগুলির নেতাদের ফোন করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে। আগামী ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে নিজের বাংলোয় ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ডাকার বার্তাও দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কি বরফ গলবে আর?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy