ভোট-গণনার প্রস্ততি পরিদর্শনে ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) কিরণ গিত্যে। পাশে জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।
ভোটের দিন সম্মানের সঙ্গে উতরেছেন। এ বার সামনে আরও বড় পরীক্ষা! ভোট-গণনা এবং ফলপ্রকাশ ঘিরে ত্রিপুরায় যাতে অশান্তি না বাধে, সেই দিকে নজর রাখতে ছুটে বেড়াচ্ছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) কিরণ গিত্যে। এলাকা ধরে ধরে সব দলের প্রতিনিধিদের ডেকে এবং পুলিশ-প্রশাসনকে রেখে চলছে শান্তি-বৈঠক।
রাত পোহালে বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটের ফল গণনা। মোট ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে ২১টি জায়গায়। গণনা-কেন্দ্রে স্বাভাবিক ভাবেই থাকছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু ফল বেরোতে শুরু করার পরে গণনা-কেন্দ্র চত্বরের বাইরে অন্যত্র যাতে যুযুধান শিবিরের মধ্যে গোলমাল না বেধে যায়, সেটাই নির্বাচন কমিশনের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কমিশন সূত্রের খবর, পুরনো ঘটনার খতিয়ান বিবেচনায় রেখে কিছু এলাকাকে ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করে সে সব জায়গায় বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে। ঠিক কোন কোন জায়গা, তা আগাম ঘোষণা করা হচ্ছে না।
ভোট গণনার আগে সিইও সঙ্গে করে জেলাশাসক বা পুলিশ-কর্তাদের নিয়ে শান্তি-বৈঠক করতে যাচ্ছেন, এমন ছবি বাংলার মতো রাজনৈতিক হিংসার ইতিহাস-সম্পন্ন রাজ্যেও বিরল। মোহনপুর বিধানসভা এলাকায় মঙ্গলবারই এমন শান্তি-বৈঠক করতে গিয়ে গিত্যে সব দলের কাছে আবেদন করেছেন, ফল প্রকাশের পরে আগামী ২ ও ৩ মার্চ কেউ যেন বিজয় উৎসব না করে। আগরতলার উমাকান্ত অ্যাকাডেমির দু’টি কেন্দ্রের একটিতে ৯টি এবং অন্যটিতে ৫টি মিলিয়ে মোট ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে। তার প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখতে গিয়ে মহারাষ্ট্র ক্যাডারের এই আইএএস বলছিলেন, ‘‘ভোট এবং গণনার মাঝে দু’সপ্তাহ সময় আমরা পেয়েছি। সেই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছি না। ভোট যেমন শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে, সেই ভাবেই বাকি প্রক্রিয়াটাও সম্পূর্ণ করতে হবে।’’
বাংলায় রাজনৈতিক হিংসার পরম্পরা সম্পর্কে অবহিত গিত্যে। ত্রিপুরাতেও বিগত কয়েকটি নির্বাচনে অনিয়ম এবং অশান্তির অভিযোগের মোকাবিলা করতে হয়েছে কমিশনকে। গিত্যের মতে, ‘‘মানুষ শান্তিতেই ভোট চান। কিছু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর জন্য সমস্যা তৈরি হয়। এই কারণেই আমরা সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে আগাম আবেদন করছি, ফলাফল যা-ই হোক, কোনও অশান্তিতে পা দেবেন না।’’ সিইও-র পাশে বসে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ছেন পশ্চিমের জেলা শাসক দেবপ্রিয় বর্ধনও।
গণনার আগে উত্তেজনার বাতাবরণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থার বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল! সেখানে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত মিলতেই শাসক দলের তরফে বাজি ফাটিয়ে উল্লাসের খবর এসেছে, কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস। সিইও-র নির্দেশে কমিশনের প্রতিনিধিরা গিয়ে কিছু জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও এনেছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পবিত্র করের কথায়, ‘‘কমিশন যা যা ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার সঙ্গে আমরা সহমত। কিন্তু বিজেপি শাসনে কয়েক বছরে যা হয়েছে, তার ফলে কিছু আশঙ্কা থাকেই। আমরা সব রকম ভাবে তৈরি, কর্মী-সমর্থকদের বলেছি শান্তিরক্ষা করতেই হবে।’’ সিপিএম ইতিমধ্যেই দলীয় স্তরে নির্দেশিকা জারি করেছে, গণনা-কেন্দ্রের বাইরে জমায়েত হলেও ২-৩ তারিখ কোনও মিছিল করা যাবে না। পবিত্রবাবুর মতোই তিপ্রা মথা-র নেতা তাপস দে-ও নিজে প্রার্থী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বুথ-ফেরত সমীক্ষার পরে কিছু বাড়াবাড়ির চেষ্টা বিজেপি করেছে। তবু মনে করি, শান্তিতেই সবটা মিটে যাবে।’’ তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘বিজেপি এখানে যা করেছে, সবাই জানে বলেই আশঙ্কা থাকছে। কমিশনকে সেটাই দেখতে হবে।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যও এ বার প্রার্থী হয়েছেন। নিজের কেন্দ্রের কর্মীদের নিয়ে গণনার প্রস্তুতির ফাঁকেই তাঁর দাবি, ‘‘সন্ত্রাস, অশান্তি যা হত, সব কমিউনিস্ট আমলে! বিজেপি আসার পরে এ বার কোনও রকম গোলমাল ছাড়াই বিধানসভা ভোট হয়েছে। জয়ী বিজেপিই হবে। তবে আমরা কর্মীদের বলছি, ফল যা-ই হোক, আমরা শান্তির পক্ষেই থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy