এই বিমানেই ভারতে আসছে আটটি চিতা। পিটিআই
এ বারের জন্মদিন আফ্রিকার চিতাদের সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন থেকে বিজেপি দেশ জুড়ে ‘সেবা পক্ষ’ শুরু করছে। নরেন্দ্র মোদী নিজে ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিনে যাচ্ছেন মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে, নামিবিয়া থেকে আসা চিতাদের স্বাগত জানাতে। নামিবিয়া থেকে বিমানে উড়ে আসা আটটি চিতাকে তিনি নিজে হাতে অভয়ারণ্যে ছাড়বেন।
সাত দশক আগে ভারত ছিল এশীয় চিতাদের আস্তানা। রাজা-বাদশাদের শিকার ও নিরাপদ বাসস্থানের অভাবে ক্রমশ কমতে থাকে তাদের সংখ্যা। অধুনা ছত্তীসগঢ়ের অন্তর্গত সুরগুজার কোরিয়া অঞ্চলের রাজা রামানুজ প্রতাপ সিংহ দেও ১৯৪৭-এ তিনটি চিতা শিকার করেছিলেন। শিকার ও শিকারির সেই ছবিই এ দেশে চিতার শেষ অস্তিত্বের প্রমাণ। ১৯৫২ সালে চিতাকে সরকারি ভাবে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। সেই হিসেবে ৭৫ বছর পরে ফের ভারতের মাটিতে চিতার পুনরার্বিভাব হতে চলেছে। তবে এশীয় চিতা নয়, আফ্রিকান চিতা। প্রধানমন্ত্রী নিজেই চলেছেন তাদের স্বাগত জানাতে। বিরোধীদের কটাক্ষ—আসলে জন্মদিনে চিতাদের সঙ্গে নিজেও প্রচারের আলোয় থাকতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী।
বুধবারই এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছিলেন, গুরুতর বিষয়গুলি এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী চিতার থেকেও দ্রুতগামী। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বলা হয়েছে, কুনো জাতীয় উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর নিজে চিতা ছাড়তে যাওয়াটা তাঁর দেশের বন্যপ্রাণী ও তার আস্তানা বনাঞ্চলে প্রাণ সঞ্চার করার চেষ্টারই অঙ্গ। কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতা ছাড়ার ফলে খোলা জঙ্গল ও ঘাসজমি মিলিয়ে পরিবেশের ‘ইকোসিস্টেম’ ফিরে আসবে। জীববৈচিত্র্যর সংরক্ষণ হবে। সাধারণ মানুষও উপকৃত হবেন। ইকো-পর্যটনের উন্নতির ফলে বাসিন্দাদের রুটি-রুজির সুযোগও বাড়বে।
নামিবিয়া থেকে আটটি চিতাকে উড়িয়ে আনতে ইতিমধ্যেই বিশেষ বিমান সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। সেই বিমানের সামনের দিক বাঘের মুখের ছবিতে মোড়া রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে নামিবিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে ভারতের চুক্তি হয়েছিল। আটটি চিতার দলে রয়েছে পাঁচটি পুরুষ চিতা। তার মধ্যে রয়েছে দুই ভাইও, যারা জুটি বেঁধে শিকার করে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, গোটা বিশ্বে এই প্রথম এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে বড় আকারের মাংসাশী প্রাণী স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। ‘প্রজেক্ট চিতা’-র আওতায় এই কাজ হচ্ছে। কেন্দ্রের বন ও পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব আফ্রিকার চিন্তাদের ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘গোটা দেশ ফের এক বার চিতার গর্জন শুনতে অধীর আগ্রহেঅপেক্ষা করছে।’
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে এ দেশের জঙ্গলে অন্য দেশের প্রাণী ছেড়ে দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জিনগত ভাবে সেই প্রাণী ভারতীয় জন্তুর কাছাকাছি হলেও। গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। শেষে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি মেলে। তাই সরকারি খাতায়-কলমে একে চিতাদের ‘ইনট্রোডাকশন’ না বলে ‘রিইনট্রোডাকশন’ বলা হচ্ছে। কিন্তু আফ্রিকার পরিবেশ থেকে উড়ে এসে মধ্যপ্রদেশের পরিবেশে এই চিতারা খাপ খাইয়ে নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে। চিতার শাবকরা কুকুর বা লেপার্ডদের শিকার হতে পারে বলেও চিন্তা রয়েছে। তা ছাড়া চিতা জঙ্গলে নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে পড়লে, মানুষ-জন্তু সংঘাত তৈরি হতে পারে।
নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা আসার পরে অক্টোবর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরও ১২টি চিতা নিয়ে আসা হবে। তাদের প্রায় এক মাস নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যে রেখে দেওয়ার পরে কুনো অভয়ারণ্যের খোলা জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাদের মতে, কুনো জাতীয় উদ্যানকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রদেশে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। ভারতে চিতার সংখ্যা বাড়লে গোটা বিশ্বেই চিতার সংখ্যা বাড়বে। গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে চিতার সংখ্যা ৭ হাজারের মতো। আর যে এশীয় প্রজাতির চিতার গর্জন সাত দশক আগে এ দেশে শোনা যেত, শুধুমাত্র ইরানেই এখন তাদের দেখা মেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy