চিত্তরঞ্জন পার্ক দুর্গাপুজো সমিতি, বি ব্লকের পুজোয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি। —নিজস্ব চিত্র।
ক’দিন আগেই ধুমধাম করে কাজকর্ম শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন সংসদ ভবনে। যার জন্য বিশেষ অধিবেশনও ডেকেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার সেই সংসদ ভবনকেই থিম করেছেন চিত্তরঞ্জন পার্ক দুর্গাপুজো সমিতি, বি ব্লকের উদ্যোক্তারা।
এ বার ৪৮ বছরে পা দিয়েছে বি ব্লকের ওই পুজো। প্রতি বছর সমসাময়িক কোনও না কোনও বিষয়কেই থিম করে থাকে ওই পুজো কমিটি। গত বছর স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে থিম ছিল ‘আজ়াদি কি অমৃৎ মহোৎসব’। এ বছর নতুন সংসদ ভবনকেই নিজেদের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। পুজো কমিটির সভাপতি অমিত রায় বললেন, ‘‘কাজটি খুব কঠিন ছিল। এত বড় সংসদকে আয়তনে ছোট করে ফুটিয়ে তোলা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। কিন্তু বাংলার কারিগরেরা অসাধ্য সাধন করেছেন।’’ সংসদের মতোই এই মণ্ডপে রয়েছে দু’টি কক্ষ। রাজ্যসভা এবং লোকসভা। দুর্গার প্রতিমা সাবেকি। তিনি অধিষ্ঠান করছেন সংসদ ভবনের উচ্চ কক্ষ অর্থাৎ রাজ্যসভায়। আর আমজনতার প্রতিমা দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে নিম্ন কক্ষ বা লোকসভা। রাজ্যসভার ছাদ ও দেওয়ালে নতুন সংসদের ধাঁচেই পদ্মের থিমে হয়েছে। লোকসভার ছাদ ও দেওয়ালের থিম হল জাতীয় পাখি ময়ূর। ষষ্ঠীর সকালে ওই মণ্ডপ দর্শনে এসেছিলেন স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি।
চিত্তরঞ্জন পার্কের আর একটি পুরনো পুজো হল পকেট ৪০-এর নবপল্লি পুজো সমিতি। তাদের এ বারের থিম হল আদিশক্তি। মা দুর্গাই যে সকল শক্তির উৎস, জগতের চালিকাশক্তি তা বোঝাতেই ওই থিমকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপ পরিবেশবান্ধব। প্রকৃতিকে বাঁচানোর বার্তা দিতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বস্তু দিয়ে তৈরি হয়েছে গোটা মণ্ডপটি। পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে কোনও ক্ষতিকর রং-ও ব্যবহার করা হয়নি। কমিটি সদস্য সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোর চার দিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকে। যাতে অংশ নেন স্থানীয়েরা। রোজই ভোগ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই, বাইরে থেকেও অনেকে ভোগ খেতে আসেন। একেবারেই ঘরোয়া পরিবেশে হওয়া এই পুজো তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে।’’
আঠাশ বছর ধরে পুজো করার পরে পুজোর জায়গা বেহাত হয়ে গিয়েছে পকেট-৫২-এর দক্ষিণ পল্লি দুর্গাপুজো সমিতির। সরকার ওই জমি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ করে দেওয়ায় চরম সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল পুজো কমিটিকে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার দরবার করেও, সরকারের নির্লিপ্ত মনোভাবে প্রবল ক্ষুব্ধ পুজো কমিটির সদস্যেরা।
ওই পুজোর সঙ্গে গোড়া থেকেই যুক্ত, বর্তমানে পুজোর প্রধান পরামর্শদাতা পি কে পাল বলেন, ‘‘ওই জমি হঠাৎ করে একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দিয়েছে সরকার। তার ফলেই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। তাই প্রায় তিন দশক ধরে যেখানে পুজো করছিলাম, সেখান থেকে সরে গিয়ে চন্দ্রলোক সিনেমার কাছাকাছি একটি জমি ভাড়া নিয়ে পুজো করতে হচ্ছে। জমির ভাড়াই পড়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা। বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে লড়াইতে নামার কথা ভাবছেন
কমিটি সদস্যরা।’’ পুজোর প্রতিমা সাবেকি।
নিজের প্রাচীন গৌরবকে ধরে রেখে এ বার ৪৮ বছরে পা দিল চিত্তরঞ্জন পার্কের কালীবাড়ির পুজো। কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে হওয়া ওই পুজোর মূর্তি সাবেকি। একচালার প্রতিমা, ডাকের সাজ। কমিটির সদস্য প্রদীপ সমাদ্দার বলেন, ‘‘প্রথম বছর থেকে এ ভাবেই মা পূজিতা হয়ে আসছেন। সেই ঐতিহ্য আজও পরিবর্তন করা হয়নি। ভোগ হয় তিন দিন। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে। ভোগ পান প্রায় দশ হাজার লোক। এ ছাড়া আলাদা করে দেওয়া হয় থালি ভোগও। পুজোয় মন্দির চত্বরে মেলা বসে।’’ উদ্যোক্তাদের দাবি, পুজোর চার দিনে রোজ লক্ষাধিক দর্শনার্থী ভিড় করেন চিত্তরঞ্জন
পার্কের সবচেয়ে বড় কালীবাড়ির
পুজো প্রাঙ্গণে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy