জল আনতে রোজ এ ভাবেই বহু দূর পাড়ি দিতে হয়। রাজস্থানের বেওয়ারে। পিটিআই
তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে ধরিত্রীর। কিন্তু ভারতভূমিতে এখনও বর্ষার দেখা নেই! তরতরিয়ে বেড়ে চলেছে খরাকবলিত এলাকার আয়তন। গোটা দেশেই গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টি-ঘাটতি এলাকার তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। দিল্লির মৌসম ভবনের খবর, বুধবার রাত পর্যন্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ২০টি এলাকায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২৪! গ্রীষ্মে বৃষ্টির ঘাটতিতে ইতিমধ্যেই খরার
কবলে পড়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত এবং ওড়িশার বহু এলাকা। তবে পশ্চিমবঙ্গে ৪১ শতাংশ বৃষ্টি-ঘাটতি সত্ত্বেও সে-ভাবে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনও।
লোকসভা ভোটের আগে কৃষি ও কৃষকের সমস্যা বড় আকার নিয়েছিল। এ বার খরার প্রভাবে সেই সমস্যা আরও বড় হতে পারে বলে আশঙ্কা। বিভিন্ন রাজ্যে চাষ-আবাদের অবস্থা খুব খারাপ। সংবাদ সংস্থার খবর, গত বছরের তুলনায় এ বছর মহারাষ্ট্রে ৩৬ শতাংশ গ্রীষ্মকালীন ফসল কম রোপণ হয়েছে। টানা চার বছরের খরায় কর্নাটকের চাষিরা হাহাকার করছেন। সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানাতেও। দ্বিতীয় মোদী সরকারের কাছে তাই এই সমস্যা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন অনেকে। খরা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
খরা-সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর প্রথম সরকারের বর্ষপূর্তির সময় থেকেই। গত চার বছরের মধ্যে একমাত্র ২০১৭ সালেই সে-ভাবে খরা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বর্ষা এসে গেলে সমস্যা কমতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কিন্তু মৌসম ভবনের সূত্র জানাচ্ছে, এ বার জোরালো বর্ষার আশা কম। অথচ বর্ষা থেকেই দেশে গোটা বছরের ৮০ শতাংশ বৃষ্টি পাওয়া যায়।
নির্ঘণ্ট অনুযায়ী কেরলে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুন। মৌসম ভবনের খাতায় বর্ষা সমাগম ধরা হয় সে-দিন থেকেই। কিন্তু এ বার বর্ষা এখনও আরব সাগরেই রয়েছে। কাল, শনিবার কেরলে ঢুকতে পারে সে। তার ফলে মৌসম ভবনের খাতায় বর্ষার শুরুতেই ঘাটতি বাড়ছে তরতরিয়ে। ১ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত যা হিসেব, তাতে গোটা দেশে বৃষ্টির ঘাটতি ৪১ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। আইআইটি-গাঁধীনগরের ‘খরা পূর্বাভাস কেন্দ্র’-এর মতে, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই ঘাটতি আরও বাড়তে পারে। একটি বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থার হিসেব অনুযায়ী এ বছর যে-গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টি পাওয়া গিয়েছে, গত ৬৫ বছরের মধ্যে সেটা সর্বনিম্ন।
মধ্যপ্রদেশে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শহরে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গ্বালিয়র, ভোপাল, উজ্জয়িনীর মতো শহরে পানীয় জল পৌঁছচ্ছে এক দিন অন্তর। কর্নাটকের নৌসেনা ঘাঁটিতে জলসঙ্কটের দরুন কয়েকটি যুদ্ধজাহাজকে মুম্বই উপকূলের দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। মহারাষ্ট্র, বিশেষত বিদর্ভ এলাকায় পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নিয়েছে। কেন্দ্রীয় জল কমিশনের সূত্র বলছে, পশ্চিম ভারতে বহু জলাধারের জল মোট ধারণক্ষমতার ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। অনাবৃষ্টির ফলে ক্রমশ কমছে ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারও।
মৌসম ভবনের এক কর্তা জানান, এ বার গ্রীষ্মে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কম ছিল। তার ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতে শুকনো গরম হাওয়া ঢোকে। তার জেরেই বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢোকায় ওই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ তুলনায় বেশি বৃষ্টি পেয়েছে। এক আবহবিদের কথায়, ‘‘বর্ষা শেষ পর্যন্ত কেমন হতে পারে, শনিবার মৌসুমি বায়ু কেরলে ঢোকার পরেই সেটা বোঝা সম্ভব।’’
গোটা দেশ তাই আপাতত তাকিয়ে আছে শনিবারের দিকেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy