ভারত মনে করে, ভুটানের ওই জমি বেআইনি ভাবে দখল করেছে চিন। তাই তাদের এই নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না। ছবি: প্রতীকী
ডোকলামে ভারত-চিন মুখোমুখি অবস্থানের পর ছ’বছর কেটে গিয়েছে। এ বার ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাবি করলেন, এই সংঘাতের নিষ্পত্তির বিষয়ে চিনেরও মত দেওয়ার অধিকার রয়েছে। যদিও ভারত মনে করে, ভুটানের ওই জমি বেআইনি ভাবে দখল করেছে চিন। তাই তাদের এই নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না।
ডোকলামের ঝাম্পেরি শৈলশিরা থেকে সরাসরি ভারতের ‘শিলিগুড়ি করিডর’-এর উপরে নজর রাখা যায়। ওই করিডরের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বাকি দেশের। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ডোকলাম দখলে রাখতে চায় চিন। এ বার সেই নিয়ে চিনের হাতই কিছুটা শক্ত করল ভুটান। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেন, ‘‘এই সমস্যার সমাধান শুধু ভুটানের উপরেই নির্ভর করে না। আমরা তিন পক্ষই রয়েছি। কোনও দেশ ছোট বা বড় নয়। তিন দেশই সমান। তাদের সমান ভাগ।’’
ডোকলামে চিনের অংশীদারিত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য চাপে ফেলেছে নয়াদিল্লিকে। ডোকালম সমস্যার সমাধান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেরিং আরও বলেন, ‘‘আমরা প্রস্তুত। বাকি দুই পক্ষ রাজি হলে আমরা আলোচনায় বসতে পারি।’’ এর থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ডোকলাম নিয়ে ভারত এবং চিনের মধ্যে মধ্যস্থতারও চেষ্টা করছে ভুটান।
বাতাং লা-তে রয়েছে ত্রিদেশীয় সীমান্ত। এই বাতাং লা-র উত্তরে চিনের চুম্বি উপত্যকা। দক্ষিণে ভুটান আর পূর্বে ভারতের সিকিম। এই ত্রিস্তরীয় সীমান্ত আরও ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে গিপমোচি পর্বতে নিয়ে যেতে চায় চিন। সে রকম হলে গোটা ডোকলাম চিনের অধীনে চলে আসবে। তাতে লাভ চিনের। ‘শিলিগুড়ি করিডর’-এর উপরে নজর রাখা সহজ হয়ে যাবে। ২০১৬-র ১৬ জুন থেকে ত্রিদেশীয় সীমান্তের ডোকলামে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল ভারত ও চিনের সশস্ত্র বাহিনী। ভুটানের এলাকায় ঢুকে চিন রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল। ভারত ওই এলাকায় বাহিনী পাঠিয়ে সে কাজ আটকে দেয়। তার পরই দু’দেশের বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। ক্রমাগত কূটনৈতিক প্রয়াস পরিস্থিতি প্রশমিত করে। ২৮ অগস্ট দু’দেশ বাহিনী ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে।
বাহিনী ফিরিয়ে নেওয়ার সময় ডোকলামের পূর্বে ভুটানের আমো চু নদী উপত্যকার কিছু অংশ দখল করে চিন। সেখানে নিজেদের বাহিনী মোতায়েন করে। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, সেখানে কিছু গ্রামও তৈরি করেছে চিন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এ কথা মানেননি। জানিয়েছেন, সংবাদ মাধ্যমে ভুল খবর পরিবেশিত হয়েছে। ভুটান এবং চিন জানে, কার কতটা জমি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিনের দখলদারি নিয়ে ভুটান অসহায়। তাদের কিছু করার নেই বলেই প্রধানমন্ত্রী এ সব বলছেন। ভারত-চিন সম্পর্ক বিশারদ ব্রহ্ম চেল্লানি বলেন, ‘‘নিজের মুখ বাঁচাতে ভুটান দাবি করছে, চিন যে জমি দখল করেছে, তা তাদের নয়।’’ তাঁর আশঙ্কা, এর ফলে চিনা আগ্রাসন আরও বাড়বে। আন্তর্জাতিক নীতি বিশেষজ্ঞ জেনভিয়েভ ডনেল্লন মে বলেন, ‘‘ডোকলাম সমস্যা সমাধানে চিনের ভূমিকা মেনে নিয়ে বেজিংয়ের গুরুত্বই শুধু বাড়িয়ে দেয়নি ভুটান, পাশাপাশি বোঝাতে চেয়েছে, চিন অধিকৃত অন্যান্য এলাকার সঙ্গে এর ফারাক রয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ভুটানের উত্তরের কিছু এলাকাও দখল করে রেখেছে চিন। এই নিয়ে গত জানুয়ারিতে কুনমিংয়ে বৈঠকে বসেন দুই দেশের কর্তারা। সূত্রের খবর, এই সীমান্ত সংঘাত নিয়ে ২০ দফা বৈঠক করেও সুরাহা হয়নি। যদিও ভুটান বার বার মুখে বলে গিয়েছে, সমস্যা গুরুতর নয়। এ বার ডোকলাম সমস্যায় চিনকে একটি পক্ষ মেনে ভুটান তাদের হাত আরও শক্ত করল বলেই মনে করছে নয়াদিল্লির একটা অংশ। আর তাতে কিছুটা হলেও চাপে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy