Advertisement
E-Paper

‘জয় হিন্দ’, অশ্রু মুছে গর্জে উঠলেন হিমাংশী

‘ভেলপুরি খাচ্ছিলাম। ও পাশে দাঁড়িয়েছিল। একটা লোক এসে গুলি করে দিল! বলল, মনে হয় মুসলিম নয়। বলে, গুলি করে দিল!’

বিয়ের ছ’দিন পরে সেনা অফিসার স্বামীকে জঙ্গিদের গুলিতে চোখের সামনে খুন হতে দেখেছেন মধুচন্দ্রিমায় কাশ্মীরে যাওয়া হিমাংশী নারওয়াল।

বিয়ের ছ’দিন পরে সেনা অফিসার স্বামীকে জঙ্গিদের গুলিতে চোখের সামনে খুন হতে দেখেছেন মধুচন্দ্রিমায় কাশ্মীরে যাওয়া হিমাংশী নারওয়াল। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪৪
Share
Save

মাটিতে পড়ে থাকা মৃতদেহের সামনে তাঁর নিথর বসে থাকার ছবি দেখে স্তব্ধ গোটা দেশ। সমাজমাধ্যমে ছড়ানো একটি ভিডিয়ো ক্লিপে তাঁকে উদ্‌ভ্রান্তের মতো বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘ভেলপুরি খাচ্ছিলাম। ও পাশে দাঁড়িয়েছিল। একটা লোক এসে গুলি করে দিল! বলল, মনে হয় মুসলিম নয়। বলে, গুলি করে দিল!’

বিয়ের ছ’দিন পরে সেনা অফিসার স্বামীকে জঙ্গিদের গুলিতে চোখের সামনে খুন হতে দেখেছেন মধুচন্দ্রিমায় কাশ্মীরে যাওয়া হিমাংশী নারওয়াল। আর তার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই কফিনে লুটিয়ে পড়া সেই হিমাংশী ধনুকের ছিলার মতো টানটান হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, হঠাৎ। চিৎকার করে বললেন, ‘জয় হিন্দ’।

নৌসেনার লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল (২৬) ও হিমাংশী নারওয়াল হরিয়ানার নবদম্পতি। দু’বছর আগে নৌসেনায় চাকরি পান বিনয়। কর্মরত ছিলেন কোচিতে। গত ১৬ এপ্রিল বিয়ে হয় ২৪ বছর বয়সি গবেষিকা হিমাংশীর সঙ্গে। মধুচন্দ্রিমায় যাবেন ইউরোপে, এমনটাই ঠিক ছিল। কিন্তু ভিসার জটিতায় সেটা হয়ে ওঠেনি। ১৯ এপ্রিল সামাজিক অনুষ্ঠান সেরে সোমবার গিয়েছিলেন ‘ছোটখাট সুইৎজ়ারল্যান্ড’ নামে খ্যাত পহেলগামে। মঙ্গলবার বিকেলে জঙ্গিদের তিনটি গুলিতে বিদ্ধ হয়ে নিহত হলেন বিনয়। প্রথম গুলিটা মাথায়। তার পরে কানের কাছে। শেষে পিছনে। ছিটকে আসা রক্তে ভিজল হিমাংশীর পোশাক। এটা যখন ঘটছে, হরিয়ানার কার্নালে তখনও বিনয়ের মা পাড়ায় মিষ্টি বিলি করে চলেছেন।

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিংহ সাইনি আজ বিনয়ের পরিবারের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেন। বিনয়ের বাবা রাজেশ কুমার সরকারি কর্মচারী। মা আশা গৃহস্থালি সামলান। বোন সৃষ্টি পড়াশোনা করছেন। সাইনিকে ফোনে বিনয়ের ঠাকুরদা হাওয়া সিংহ বলেন, “আজ আমার নাতিকে হারালাম। কাল অন্য কারও সঙ্গেও এটা হতে পারে।” জঙ্গিদের চরম শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। হাওয়া সিংহ এক সময়ে কাজ করেছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে। তার পরে হরিয়ানা পুলিশে। বৃদ্ধ জানান, ছেলেবেলায় রাস্তায় সেনার গাড়ি চোখে পড়লে বিনয়ের প্রশ্ন আর শেষ হত না। দেশরক্ষা ছিল তাঁর স্বপ্ন। বারণ করলে ক্ষুব্ধ হতেন। ঠাকুরদার মতো তিনিও কেন খাস সীমান্তে কাজ করতে পারেন না, আক্ষেপও করতেন প্রায়ই।

হাসিখুশি এবং নিষ্ঠাবান এই তরুণ অফিসারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে নৌবাহিনী। বিনয়ের কফিন আজ শ্রীনগর থেকে পৌঁছয় নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে। উপস্থিত ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত। স্ত্রী ও স্বজনেরা নৌসেনার গাড়িতে দেহ নিয়ে যান কর্নালে। সেনার পূর্ণ মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী সাইনি ও পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিংহ চিমা। ঢল নামে মানুষের। মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছিল, ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’। কফিন আঁকড়ে হিমাংশী বার বার বলছিলেন, “আমাদের উচিত সমস্ত ভাবে ওর জন্য গর্বিত হওয়া। আমরা ওকে সব রকম ভাবে গর্বিত করব।”

অন্ধ্রের দম্পতি জে এস চন্দ্রমৌলি ও নাগমণিও গিয়েছিলেন পহেলগামে বেড়াতে, আরও দুই বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে। দুই মেয়েই বিদেশে থাকেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে অবসরপ্রাপ্ত চন্দ্রমৌলি গত সপ্তাহেই ৬৮ ছুঁয়েছিলেন। হামলার সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া চন্দ্রমৌলির দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় পরে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়া কেরল হাই কোর্টের তিন বিচারপতি ও রাজ্যের প্রতিনিধিদলের চার বিধায়ক।


(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

terror attack Pahelgam Terror Attack

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}