পুলিশের মারের এই ভিডিয়োই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পুলিশের বিরাট বাহিনী ভয়ানক আক্রোশে পেটাচ্ছে এক দলিত কৃষক দম্পতিকে। স্বামীর দেহের উপরে আছড়ে পড়ে উর্দিধারীদের লাঠির ঘা থেকে তাঁকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মহিলা। কয়েক জন মহিলা পুলিশ তাঁকে টেনে সরাতে না-পেরে পরনের কাপড়টা বেমালুম খুলে দিল এক টানে! আর সে সবই আতঙ্কিত শিশুসন্তানের চোখের সামনে। গ্লানিতে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করলেন দম্পতি। গুনায় মঙ্গলবারের এই ঘটনার ভিডিয়ো-ছবি নেটে ছড়িয়ে পড়ার পরে মধ্যপ্রদেশ সরকারের সমালোচনায় ফেটে পড়েন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা কমলনাথ বলেন ‘জঙ্গলরাজের আরও এক নমুনা’। এই পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। বৃহস্পতিবার একই সঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গুনার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে।
গুনার ঘটনার পরে জাতীয় মহিলা কমিশন মধ্যপ্রদেশ সরকাকে নোটিস দিয়ে বলেছে, উপযুক্ত তদন্ত করে দোষী পুলিশদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু কংগ্রেস, বামেরা এবং বহুজন সমাজ পার্টির নেতা-নেত্রীরা পুলিশের এই আক্রোশের মধ্যে দলিত-বিরোধিতার প্রকাশই দেখছেন। রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘এই মনোভাবের বিরুদ্ধে, এই অসাম্যের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।’ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার মন্তব্য আরও সবিস্তার— ‘গরিবের উপরে আক্রমণ, দলিতের উপরে আক্রমণ, কৃষকের উপরে আক্রমণ, গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ— এই তো বিজেপির কৌশল, তাদের চরিত্র। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই কংগ্রেস প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করছে।’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ‘মনুবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপি-সঙ্ঘী প্রশাসনের দলিত-বিদ্বেষ’ বলে মন্তব্য করেছেন গুনার ঘটনাকে। বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও ক্ষুব্ধ। তাঁর কথায়, গুনার দম্পতির দেহে পুলিশের প্রতিটি মার ভারতের দলিত সম্প্রদায়কে রক্তাক্ত করেছে। দোষী পুলিশদের শাস্তি চেয়েছেন সবাই।
মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটলেও বুধবার পর্যন্ত বিষয়টিকে হাল্কা করেই দেখিয়েছে শিবরাজ সরকার। পুলিশ সুপার তরুণ নায়কের মন্তব্য ছিল, দম্পতি নাটক করছিলেন। কীটনাশক খাওয়াও তারই অঙ্গ। কিন্তু, দম্পতির শারীরিক পরিস্থিতি কী করে সঙ্কটাপন্ন হল, সে প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, “দম্পতির আত্মীয়-স্বজন তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছিলেন। তাতেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে চিকিৎসার পরে দম্পতি এখন বিপন্মুক্ত।” পুলিশ-কর্তারা বলেন, সরকারি জমি দখল করে চাষ করেছিলেন এই আহিরওয়ার দম্পতি। পুলিশ বহু বার তাদের জমির দখল ছেড়ে দিতে বলেছে, কারণ সেখানে একটি কলেজ তৈরির কাজ থমকে রয়েছে। মঙ্গলবার বুলডোজার ও জেসিবি গাড়ি নিয়ে পুলিশ জমিটির দখল নিতে যায়। সেই সময়ে আহিরওয়ার দম্পতি পুলিশের কাজে বাধা দিতে আসেন, সরকারি কর্মীদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ পুলিশের। বলপ্রয়োগ করে তখন সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। কিন্তু দম্পতির অভিযোগ, তাঁরা বহু বছর ধরে এই জমিতে চাষাবাদ করেন। পুলিশ বিনা নোটিসে জেসিবি নিয়ে তাঁদের ফসল নষ্ট করতে এলে তাঁরা হাত জোড় করে কটা দিন সময় চান। বলেন, নিজেরাই ফসল কেটে জমি খালি করে দেবেন। এখন ফসল ধ্বংস করে দিলে তাঁদের না-খেতে পেয়ে মরতে হবে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিলেও, মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস তাতে খুশি নয়। নেতৃত্বের দাবি, শেষ পর্যন্ত হয়তো পুলিশকে নির্দোষ প্রমাণে গিয়ে দাঁড়াবে সেই তদন্ত। মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস তাই ৭ সদস্যের একটি দলীয় তদন্ত কমিটিও তৈরি করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy