মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে আগামিকাল সংসদের প্রথম অধিবেশন। তাই বিষয়টি সংসদে জানানোর পাশাপাশি, লোকসভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী মণিপুরের বাজেটও পেশ হওয়ার কথা। ফলে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্য নিয়ে আগামিকাল দফায় দফায় লোকসভা উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছে বিরোধী দলগুলি।
সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পরে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছিল। ফলে বিষয়টি সংসদকে জানাতে দায়বদ্ধ সরকার। সূত্রের মতে, আগামিকাল লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির বিষয়টি জানানোর কথা। তিনি অনুপস্থিত থাকলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোনও প্রতিমন্ত্রী ওই দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলেও হিংসা থামার লক্ষণ নেই সেখানে। রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রের নির্দেশে শনিবার থেকে মণিপুরে বাস পরিষেবা চালু হয়েছিল। কিন্তু কুকি সম্প্রদায় পথ অবরোধে নামলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা বাস লক্ষ করে পাথর, ইট ছোড়েন। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বাসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ গুলি চালালে এক কুকি যুবক প্রাণ হারান। যা নিয়ে আজ দিনভর থমথমে ছিল রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। কুকি এলাকায় ডাকা হয়েছে অনির্দিষ্টকালীন বন্ধ।
এই তপ্ত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি শাসনাধীন মণিপুরের বাজেট আগামিকাল লোকসভায় পেশ করার কথা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের। বিষয়টি নিয়ে যদি লোকসভায় আলোচনার পরিস্থিতি থাকে, সে ক্ষেত্রে মণিপুরের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে বলেই জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘গত দু’বছর ধরে বীরেন সিংহ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মণিপুরে শান্তি ফেরাতে ব্যর্থ। এখন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে, সেনা দিয়ে মুড়ে দিয়েও মণিপুরে শান্তি ফেরার কোনও লক্ষণ নেই। কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত দু’বছরে একবারও শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে মণিপুরে গেলেন না, সেই প্রশ্নও তোলা হবে।’’
বিজেপি নেতারা ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন, মণিপুর নিয়ে মোদী সরকার রীতিমতো অস্বস্তিতে। গেরুয়া শিবিরের মতে, কোন পথে সমাধান সূত্র মিলবে সেই প্রশ্নে একেবারেই দিশাহীন কেন্দ্র। অতীতে অশান্ত মণিপুর নিয়ে বিরোধীরা বারবার সংসদে আলোচনার দাবি জানালেও, তা এড়িয়ে গিয়েছে সরকার। এখন মণিপুরের বাজেট পেশ হলে তা নিয়ে সংসদে আলোচনা করতেই হবে সরকারকে। বিরোধীদের আশঙ্কা, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার দাবিতে ইতিমধ্যেই নোটিস দিয়েছেন বিরোধীরা। তা নিয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা, হট্টগোলের সুযোগে কেবল বিবৃতি পেশ করেই মণিপুর নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিতে পারে শাসক শিবির।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)