Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
ভুল বার্তায় ভোট হারানোর আশঙ্কা
CPM-Congress

‘ইন্ডিয়া’ রাখি না বাংলা, দোটানা কংগ্রেস-বামের

কংগ্রেস ও সিপিএম, দুই দলের নেতারাই বুঝতে পারছেন— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের কিছুটা সিপিএম বা কংগ্রেসে চলে যাক, তা তিনি চাইছেন না।

An image of CPM and Congress Flags

—প্রতীকী চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ০৮:১৫
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে রাজ্য স্তরে কংগ্রেসের বোঝাপড়া হলে আখেরে বিজেপির লাভ হতে পারে। কারণ পুরো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তথা তৃণমূল-বিরোধী ভোট সে ক্ষেত্রে বিজেপির ঝুলিতে গিয়ে পড়তে পারে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কংগ্রেস হাইকমান্ডও এ বিষয়ে একমত। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতা, না কি রাজ্য স্তরে কংগ্রেসের স্বার্থ— কোনটা অগ্রাধিকার পাবে, তা নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন ধন্দে।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের দল কোনও ভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যাবে না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি এক টেবিলে বসার ফলে রাজ্যের বাম সমর্থকদের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে এ কে গোপালন ভবনও। অথচ জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-বিরোধিতার বাধ্যবাধকতায় সিপিএমের পক্ষে ইন্ডিয়া-জোট এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন— বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেস, সিপিএমের উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যে সহযোগিতা করা। কিন্তু তাতে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লাভ দেখছেন। বিজেপি মনে করছে, কংগ্রেস-সিপিএম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকলে, তৃণমূল-বিরোধী যে ভোট বিজেপি থেকে সিপিএম-কংগ্রেসের দিক সরে গিয়েছিল, তা আবার বিজেপির কাছে ফিরে আসবে। সব মিলিয়ে বিরোধীদের ইন্ডিয়া-জোটে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম এক মেরুতে চলে আসায় লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে তার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে সব দলই নিজের মতো করে অঙ্ক কষছে। বেঙ্গালুরুতে বিজেপি-বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ সম্মেলনের পরে অগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের গোড়ায় মুম্বইয়ে ফের জোটের বৈঠক বসবে। সেখানে রাজ্য স্তরে বিরোধী দলগুলির মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে।

এআইসিসি-র এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু তরুণ কংগ্রেস নেতা চাইছেন, এখন থেকে লোকসভা নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট আসন বেছে নিয়ে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হোক। তবে তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। কারণ তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।’’ কংগ্রেসের একটি সূত্র বলছে, নতুন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের সঙ্গে যদি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অধীর চৌধুরীকে সরিয়ে এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তেমন সরব নন, তা হলে তৃণমূলের প্রতি প্রথম ইতিবাচক বার্তা হবে।

তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে তাদের দু’টি জেতা আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা তাঁরা ভাবতে পারেন। কিন্তু কংগ্রেস ও সিপিএম, দুই দলের নেতারাই বুঝতে পারছেন— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের কিছুটা সিপিএম বা কংগ্রেসে চলে যাক, তা তিনি চাইছেন না। পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই কংগ্রেস-সিপিএমের নিচুতলার কর্মীদের দল ছেড়ে বেরিয়ে এসে আলাদা মঞ্চ করে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্ব পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা নিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ডের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল হোক বা আম আদমি পার্টি, দলের মধ্যে এখন দু’টি ভাবনা চলছে। ২০২৪-এর দিকে তাকিয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে হটানোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে কি না? সে ক্ষেত্রে রাজ্য রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জমি দখলের লড়াই কিছুটা ধাক্কা খাবে। তেমন পরিস্থিতিতে দলের দুর্দশায়ও যাঁরা দলে রয়েছেন, তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে চলে যেতে পারেন।’’ একই সমস্যায় রয়েছে সিপিএমও। সিপিএমের পলিটবুরোর নেতারা বলছেন, ইয়েচুরি ও মমতা প্রথমে পটনা, তার পরে বেঙ্গালুরুতে এক টেবিলে বসায় অনেকেই সমালোচনা করছেন। তৃণমূলের প্রতি ক্ষুব্ধ যে সব ভোটার সিপিএমের দিকে আসছিলেন, তাঁরা ফের বিজেপিতে চলে যেতে পারেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Opposition Parties CPM Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy