ফাইল ছবি
এখনও তিস্তার জল ভাগাভাগির জটই ছাড়ানো যায়নি। এরই মধ্যে চার বছর পরে গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। ২০২৬-এ চুক্তির পুনর্নবীকরণ করতে হবে। ১৯৯৬-এ যখন ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি হয়েছিল, সে সময় ঢাকায় এখনকার মতোই শেখ হাসিনার সরকার ছিল। দিল্লিতে ছিল এইচ ডি দেবগৌড়ার যুক্তফ্রণ্ট সরকার। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সে সময় গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তিতে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছিল। ভারত ও বাংলাদেশের কূটনীতিকদের আশা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তিস্তা চুক্তি বিশ বাঁও জলে চলে গেলেও, গঙ্গার জলবণ্টনের ক্ষেত্রে তিনি সদর্থক ভূমিকা নেবেন।
নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার আমলে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের এখন ‘সোনালি অধ্যায়’ চলছে বলে দুই দেশই একমত। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সাক্ষী হতে এ বার বাংলাদেশে পৌঁছনোর পর থেকেই ঢাকার কূটনীতিক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, বিশিষ্ট জনেরা একটা কথা বারবার বলছেন। তা হল, যদি বাংলাদেশের দরকার মতো তিস্তার ‘পানি’ মিলত, তা হলে সোনায় সোহাগা হত। আগামী বছর বাংলাদেশে নির্বাচন। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর। কিন্তু মমতা এখনও নিজের আপত্তিতে অনড়।
বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “সম্প্রতি বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বকেয়া বিষয় দ্রুত সমাধানে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সেপ্টেম্বরে ভারত সফরের প্রস্তুতিও চলছে।” কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই জলবণ্টনের প্রসঙ্গও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
তিস্তা নিয়ে এখনই জট কাটার সম্ভাবনা নেই দেখে ভারত সম্প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর জলের ভাগাভাগি নিয়ে একটি সামগ্রিক বোঝাপড়া হোক। মোমেন বলেন, “৫৪টি নদী নিয়ে সামগ্রিক বোঝাপড়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, ২০২৬-এ গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির পুনর্নবীকরণের সময় আসছে। তাই আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, যৌথ নদী কমিশনের নিয়মিত বৈঠক জরুরি।” মোমেনের মতে, যে সব ক্ষেত্রে দ্রুত ঐকমত্য সম্ভব, সে দিকে নজর দিতে হবে। তিস্তাকে অবশ্য বাংলাদেশের কূটনীতিকরা এই তালিকায় রাখছেন না।
২০১১-তে মনমোহন সিংহর ভারত সফরের সময়ই তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মমতা তাতে সায় দেননি। তাঁর আপত্তির কারণ ছিল, তিস্তার জলচুক্তি হলে শুখা মরসুমে উত্তরবঙ্গের আধ ডজন জেলায় জলের অভাব দেখা দেবে। গত এক দশকে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। অন্য দিকে বহু ঝড়ঝাপটা সামলে ১৯৯৬-এ সই হয়েছিল গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি। তার আগে, ১৯৭৭-এ মোরারজি দেশাই ও জিয়াউর রহমানের সময়ে গঙ্গার জল নিয়ে পাঁচ বছরের জন্য সাময়িক চুক্তি হলেও ১৯৮২-তে পুননর্বীকরণ ছাড়াই তার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। স্থায়ী চুক্তির পরে গত ২৫ বছরে বারবারই অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ ঠিকমতো জল পাচ্ছে না। কারণ ঐতিহাসিক ভাবে গঙ্গায় যে জলপ্রবাহের মাপের ভিত্তিতে জল বণ্টন হয়েছিল, নদীর উজানে অর্থাৎ ভারতের অংশে সেই পরিমাণ জলপ্রবাহ বজায় রাখা যায়নি। জলপ্রবাহ কমায় বাংলাদেশের জলের ভাগ কমেছে। দুই দেশের কূটনীতিকরাই মনে করছেন, গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে নতুন করে অঙ্ক কষতে বসা হলে এই সমস্ত স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ উঠে আসবে। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ গঙ্গা বা ভাগীরথীর জল পশ্চিমবঙ্গের কাছে তিস্তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy