অজিত পাওয়ার এবং দেবেন্দ্র ফডণবীস। ছবি: পিটিআই
আচমকা অবসান ২৮ দিন ধরে চলতে থাকা একটা নাটকের। আর সেই মুহূর্ত থেকেই আর এক নতুন নাটকের শুরু। রাতারাতি মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ে ফেলল বিজেপি। ভোরের আলো ঠিক মতো ফোটার আগেই চুপচাপ প্রত্যাহার করা হল রাষ্ট্রপতি শাসন। তার সওয়া দু'ঘন্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। আরও বড় চমক দিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পওয়ার।
কোন পথে, কোন সূত্রে এবং কখন এই নতুন সমীকরণ তৈরি হল, এখনও গভীর ধোঁয়াশা তা নিয়ে। কিন্তু যে কোনও মূল্যে মুখ্যমন্ত্রী পদ দখল করার হুঙ্কার ছাড়তে থাকা শিবসেনার হাত থেকে যে বেরিয়ে গেল পুরো খেলাটাই, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের সংশয় কমই।
আক্ষরিক অর্থেই রাতারাতি বদলেছে ছবিটা। 'মধ্যরাতের রাজনীতি' বেশ পরিচিত শব্দ ছিল ভারতীয় রাজনীতিতে। এ বার সম্ভবত নতুন শব্দবন্ধ তৈরি হবে 'ভোররাতের রাজনীতি'। কখন মহারাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হল, কখন দেবেন্দ্র ফডণবীস সরকার গড়ার ডাক পেলেন, কখন শপথ গ্রহণ হয়ে গেল, জানলই না রাজনৈতিক শিবিরের বিরাট অংশ। কারণ যে সময় এই নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটা শুরু হল, তখন রাজনীতিদের অধিকাংশের ঘুমই ভাঙার কথা নয়। সব কিছু হয়ে যাওয়ার পরে নতুন সরকার গঠনের খবর সামনে এল। রাজনীতির দিকপালরা প্রথমে ভাবলেন ভুয়ো খবর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং নতুন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ারকে অভিনন্দন জানাতেই সব সংশয় কেটে গেল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোররাতে নয়, এ ক্ষেত্রেও আসল 'খেলাটা' মধ্যরাতেই হয়ে গিয়েছিল, স্কোরবোর্ডটাকে ভোরবেলা সামনে আনা হল।
আরও পড়ুন: ‘পিছন থেকে ছুরি মেরেছেন’, অজিত পওয়ারকে তীব্র আক্রমণে শিবসেনা
#WATCH Mumbai: Devendra Fadnavis takes oath as Maharashtra Chief Minister again, oath administered by Governor Bhagat Singh Koshyari at Raj Bhawan. pic.twitter.com/kjWAlyMTci
— ANI (@ANI) November 23, 2019
মহারাষ্ট্রে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে জোট গড়ে লড়েছিল বিজেপি-শিবসেনা। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশিত হতেই শিবসেনা জানিয়ে দেয়, মুখ্যমন্ত্রী পদ আড়াই বছরের জন্য শিবসেনাকে দিতে হবে। বিজেপি তাতে রাজি হয়নি। তাই এনসিপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সরকার গড়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে শিবসেনা। রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি প্রথমে বিজেপি-কে সরকার গড়তে ডাকেন। কারণ ১০৫ আসন পাওয়া বিজেপি-ই মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বৃহত্তম দল। কিন্তু জোটসঙ্গী শিবসেনার সমর্থন না পাওয়ায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা ছিল না বিজেপির। তাই রাজ্যপালকে ফডণবীস জানিয়ে দেন যে, তিনি সরকার গড়বেন না। এর পরে একে একে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শরদ পওয়ারের এনসিপি ডাক পায় সরকার গড়ার জন্য। কিন্তু শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস এক জায়গায় না এলে ম্যাজিক সংখ্যায় পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। আর সেই এক জায়গায় আসার ফর্মুলা কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা ক্রমশ প্রলম্বিত হচ্ছিল। তাই সরকার গড়ার ডাক পেয়ে দু'দলই কয়েক দিন করে সময় চায়। রাজ্যপাল আর অতিরিক্ত সময় দিতে রাজি হননি। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় মহারাষ্ট্রে।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে করমর্দন করছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস ও উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার। ছবি: পিটিআই।
রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরেও অবশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা থেমে যায়নি। শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দফায় দফায় কথা এবং বৈঠক চলতে থাকে। কখনও শোনা যাচ্ছিল সেনা এবং এনসিপি আড়াই বছর করে ভাগ করে নেবে মুখ্যমন্ত্রী পদ। কখনও শোনা যাচ্ছিল পাঁচ বছরই মুখ্যমন্ত্রী পদ থাকবে সেনার হাতে। কখনও শোনা যাচ্ছিল কংগ্রেস সরকারে যোগ না দিয়ে বাইরে থেকে সমর্থন করবে এবং স্পিকার পদ নেবে। কখনও খবর আসছিল কংগ্রেসও সরকারে শামিল হবে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী পদ নেবে। কিন্তু আলোচনা কিছুতেই চূড়ান্ত হচ্ছিল না, তিন দলের তরফ থেকে যৌথ ভাবে সরকার গড়ার দাবিও রাজ্যপালের কাছে পেশ করা হচ্ছিল না।
এ দিন ভোর ৫টা ৪৭ নাগাদ রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হয় মহারাষ্ট্র থেকে। সকাল ৮টা ৫ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী পদে দেবেন্দ্র ফডণবীস শপথ নেন, সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অজিত পওয়ার। ৯টার একটু আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী টুইট করে ফডণবীস এবং পওয়ারকে অভিনন্দন জানান।
আরও পড়ুন: ‘কিছুই জানতাম না, এটা অজিত পওয়ারের একার সিদ্ধান্ত’, টুইট করে দাবি শরদ পওয়ারের
#WATCH Mumbai: NCP's Ajit Pawar takes oath as Deputy CM, oath administered by Maharashtra Governor Bhagat Singh Koshyari at Raj Bhawan. pic.twitter.com/TThGy9Guyr
— ANI (@ANI) November 23, 2019
Ajit Pawar's decision to support the BJP to form the Maharashtra Government is his personal decision and not that of the Nationalist Congress Party (NCP).
— Sharad Pawar (@PawarSpeaks) November 23, 2019
We place on record that we do not support or endorse this decision of his.
শিবসেনা এবং কংগ্রেস তো বটেই, গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবির স্তম্ভিত হয়ে যায় মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতির এই আচম্বিত রং বদল দেখে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টাতেও যে শরদ পওয়ার সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন যে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেই হবেন, শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্তও যে শরদ পাওয়ার নিবিড় যোগাযোগে ছিলেন সেনা ও কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে, শনিবার সকাল হতেই সেই পওয়ারের দলের পরিষদীয় দলনেতা কী ভাবে ফডণবীস সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন! উত্তর খুঁজতে থাকে সব শিবির। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক বারই চমকে দেওয়া রাজনৈতিক ডিগবাজি দেখিয়েছেন যিনি, সেই পওয়ারকে আক্রমণ করে কংগ্রেস নেতারা টুইট করতেও শুরু করেন। কিন্তু বেলা একটু বাড়তেই পওয়ার জানান, ভাইপো অজিতের পদক্ষেপে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই, তিনি ভাইপোকে সমর্থনও করছেন না। সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে টুইট করে শরদ পওয়ার জানান, অজিত পওয়ার যা করেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, দলের সিদ্ধান্ত নয়।
এর পরেই শিবসেনা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে অজিতের বিরুদ্ধে। দলের অন্যতম প্রধান মুখ সঞ্জয় রাউত জানান, শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্তও অজিত পওয়ার তাঁদের সঙ্গে ছিলেন, তার পরে হঠাৎ গায়েব হয়ে যান। "অপরাধীরা যেমন চোখে চোখ রেখে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন, শুক্রবার রাতে অজিত পওয়ারও তেমনই করছিলেন। কথা বলছিলেন, কিন্তু চোখ নামিয়ে," বলেন রাউত। উল্টো দিকে, নতুন সরকার গঠিত হয়ে যাওয়ার পরেও এ দিন সকালে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে শরদ পওয়ার কথা বলছেন বলে শিবসেনা জানায়।
তা হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? শরদ পাওয়ারের সমর্থন যদি বিজেপির দিকে না থাকে, তা হলে এনসিপির ৫৪ জন বিধায়ককে কি ফডণবীস সঙ্গে পাবেন? মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এনসিপির দলনেতা অজিত পওয়ার ঠিকই? কিন্তু বিধায়করা কি সবাই তাঁর কথায় চলবেন? নাকি দলের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাণপুরুষ শরদের দিকেই থাকবেন? প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে তা নিয়ে। এনসিপির জনা ২০ বিধায়ক অজিতের সঙ্গে রয়েছেন বলে মুম্বই সূত্রের খবর। বিজেপির নিজের রয়েছে ১০৫। নির্দল এবং ছোটখাটো দল মিলিয়ে আরও ১৫ জনের সমর্থন ফডণবীস এর সঙ্গে রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৪০ হতে পারে সংখ্যাটা।
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হলে কিন্তু অন্তত ১৪৫ জনের সমর্থন লাগবে। আরও বেশ কয়েক জন নির্দল এবং ছোট দলের সঙ্গে বিজেপির কথা চলছে বলে খবর। শিবসেনার জনা ১৫ বিধায়কও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন বলে বিজেপির দাবি। অজিত পওয়ারও যত বেশি সম্ভব এনসিপি বিধায়ককে নিজের দিকে টানার জন্য তৎপর হয়েছেন। সব চেষ্টা সফল হলে ম্যাজিক সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বিধায়ককেই সঙ্গে পেয়ে জেনে পারেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। কতটা পারবেন, নাকি আদৌ পারবেন না, তা ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই স্পষ্ট হবে। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ফডণবীসকে ওই পর্যন্তই সময় দিয়েছেন রাজ্যপাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy