দেবেন্দ্র ফডণবীস। —ফাইল চিত্র।
গঙ্গাধরের পুত্র মুখ্যমন্ত্রী হলে, জানতে চাও সে কেমন ছেলে?
মুম্বইয়ের নরিম্যান পয়েন্টে মহারাষ্ট্র রাজ্য বিজেপির দফতর। সেখানে এই প্রশ্ন করলে সুকুমার রায়ের ‘সৎপাত্র’-এর সুরে উত্তর মিলবে, ‘মন্দ নয়। সে প্রশাসক ভাল। দল ভাঙাভাঙিতেও বেজায় ভাল। তার উপরে জাতীয় সভাপতি, হবেন না কি তিনিই শুনি!’
সৎপাত্রের নাম দেবেন্দ্র ফডণবীস। নাগপুরের ব্রাহ্মণ সন্তান। জনসঙ্ঘ, বিজেপির নেতা গঙ্গাধর ফডণবীসের পুত্র।
বিধানসভার ভোট যে কোনও দলের প্রধান নেতার কাছে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার লড়াই। নরিম্যান পয়েন্ট জানে, মহারাষ্ট্র নির্বাচনে দেবেন্দ্র ফডণবীসের পাখির চোখ একসঙ্গে তিনটি লক্ষ্য। এক, অতি অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর গদি। দুই, মুখ্যমন্ত্রী না হলে জে পি নড্ডার পরে বিজেপির জাতীয় সভাপতি। তিন, ভবিষ্যতে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার।
দশ বছর আগে নরেন্দ্র মোদীর ‘আশীর্বাদধন্য’ দেবেন্দ্র মহারাষ্ট্রে প্রথম বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার পরে তিনি মহারাষ্ট্রের সবথেকে ধুরন্ধর রাজনীতিক শরদ পওয়ারের হাতে তৈরি মহাবিকাশ আঘাড়ি জোট ভেঙে দিয়েছিলেন। প্রথমে শিবসেনা, তার পরে এনসিপি-তে ভাঙন ধরিয়ে বিজেপির জোটকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। নরিম্যান পয়েন্ট নিশ্চিত, এ বার ফের মহারাষ্ট্রে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে পারলে অমিত শাহের বদলে দেবেন্দ্র ফডণবীসকেই বিজেপির ‘নতুন চাণক্য’ বলা হবে।
মুম্বইয়ের বিখ্যাত ‘কালি-পিলি’ ট্যাক্সিতে উঠুন। চালকের সঙ্গে আলাপ জমলে প্রশ্ন করুন, মহায্যুতি জোট ফের ক্ষমতায় এলে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন? উত্তর মিলবে, দেবেন্দ্র ফডণবীস। কারণ ফডণবীস কাজ করেন। চলে আসুন দাদারের শিবসেনা ভবনে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সদর দফতর। প্রশ্ন করুন, মহায্যুতি সরকার ক্ষমতায় ফিরলে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন? একই উত্তর মিলবে— দেবেন্দ্র ফডণবীস। কারণ ফডণবীসের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক। শুধু শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে নয়। তিনি নিজের দলের নিতিন গডকড়ী, বিনোদ তাওড়ে থেকে একনাথ খাড়সে থেকে পঙ্কজা মুন্ডেদেরও টেক্কা দিতে জানেন।
উদ্ধব ঠাকরের মিডিয়া উপদেষ্টা হর্ষল প্রধান শিবসেনায় যোগ দেওয়ার আগে দীর্ঘদিন বিজেপির প্রমোদ মহাজন, নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেছেন। সে সময় উঠতি নেতা ফডণবীস তাঁর থেকে সাহায্য নিতেন। হর্ষলেরও মতে, ‘‘এ বার ফডণবীস ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইবেন। না হলে আগামী বছর বিজেপির জাতীয় সভাপতি হবেন।’’
দাদারের তিলক ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে বসে মহারাষ্ট্রের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নানা পাটোলে বলছেন, ‘‘শুধু মহা বিকাশ আঘাড়ির সরকার ফেলার জন্য পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পরেও ফডণবীস একনাথ শিন্দেকে মুখ্যমন্ত্রী করে নিজে উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ভোটের আগে মরাঠা শিন্দেকে সরিয়ে ব্রাহ্মণ ফডণবীসকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে বললে মরাঠারা বিজেপিকে ভোট দেবে না। তাই সময় বুঝে ফডণবীস শিন্দেকে ছুড়ে ফেলে দেবেন। যে ভাবে নিজের দলের অন্য নেতাদের ডানা ছেঁটে, কোণঠাসা করে ফেলেছেন।’’
এমনিতেই মেরিন ড্রাইভ থেকে মাহিম, সান্তাক্রুজ় থেকে সাকীনাকা— মুম্বইয়ের যেখানে যান, সেখানে বিজেপির হোর্ডিং ব্যানারে শুধু দু’জনের ছবি। মাথায় মরাঠি পাগড়ি পরা নরেন্দ্র মোদী ও দেবেন্দ্র ফডণবীস। মোদী ভারতের জিডিপি-কে ২০২৮-এর মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। ফডণবীসের প্রতিশ্রুতি, ২০২৮-এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের জিডিপি ১ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাবেন। এক বিজেপির নেতারমুচকি হেসে প্রশ্ন, ‘‘এর পরেও কি বলে দিতে হবে যে দেবেন্দ্র ভাউ ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন!”
আরএসএসের সদর দফতর নাগপুরে। সেই নাগপুরের ভূমিপুত্র ফডণবীস অল্প বয়স থেকেই আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত। মাত্র সাতাশ বছরে নাগপুরের মেয়র হয়েছিলেন। গত পঁচিশ বছর ধরে নাগপুরের বিধায়ক। রোজ সকালে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে প্রচার করছেন। তার পরে জেলায় জেলায় বিজেপি তথা মহায্যুতি জোটের হয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন। মহিলারা উপচে পড়ছেন মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখা ফডণবীসকে বরণ করতে। কারণ মহায্যুতি সরকার ‘লড়কি বহিন’ প্রকল্প চালু করে প্রতি মাসে মহিলাদের দেড় হাজার টাকা অনুদান চালু করেছে। তার পিছনে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে নয়, উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের মস্তিষ্ক বলেই বিজেপি প্রচার করছে। বিরোধী জোটের নেতারাও মানছেন, এই এক ‘লড়কি বহিন’ প্রকল্পই বিজেপি জোটকে মহারাষ্ট্রের হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। কারণ ৯.৬৪ কোটি ভোটারের মধ্যে ২.৩ কোটি মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ইতিমধ্যেই পাঁচ মাসের সাড়ে সাত হাজার টাকা জমা পড়েছে।আর হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিলে? নাগপুর থেকে মুম্বইয়ে বিজেপির রাজ্য দফতরে ভিড় জমানো ফডণবীসের ঘনিষ্ঠ নেতারা একটাই কথা বলছেন। একবার ‘দেবেন্দ্র ভাউ’ আত্মত্যাগ করে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এ বার জিতলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী, না হলে বিজেপির জাতীয় সভাপতি। নরেন্দ্র মোদীরই মতো আরএসএস থেকে উঠে আসা ‘দেবেন্দ্র ভাউ’ ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও দাবিদার বটে।অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথরা শুনতে পাচ্ছেন কি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy