নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র যখন নামকরণ হয়নি তখন তা গড়তে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। সেই নীতীশেরই গতিবিধি নিয়ে এ বার সন্দেহ বাড়ছে ‘ইন্ডিয়া’য়। শনিবার ‘ইন্ডিয়া’র ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে যোগ দেননি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিবসেনা (ইউ)-র উদ্ধব ঠাকরে। কংগ্রেসের তরফেই নীতীশকে জোটের আহ্বায়ক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন জেডি (ইউ)-এর জাতীয় সভাপতি নীতীশ। পাল্টা প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের কারও এই পদ নেওয়া উচিত। কংগ্রেসের কোনও নেতাকেই এই দায়িত্ব দেওয়া হোক।’’ এর পরেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে জোটের চেয়ারপার্সন হিসাবে মনোনীত করা হয়।
তবে আহ্বায়ক পদ প্রত্যাখ্যান করার ঘটনায় জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে নীতীশের বেরিয়ে যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। একই সঙ্গে তাঁদের ধারণা, নীতীশকে জোটে ফিরিয়ে বিহারে নিজেদের জোট এনডিএ-কে আরও মজবুত করতে চায় বিজেপি। পৌষ মাস শেষ হলেই নীতীশ বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিতে পারেন বলেও ওই অংশের অনুমান।
জেডি (ইউ) সূত্রে খবর, জোট ‘ইন্ডিয়া’র উপর ‘বেজায় খাপ্পা’ নীতীশ। কারণ হিসাবে ওই সূত্রের ব্যাখ্যা, দেশের সব রাজ্যে ঘুরে ঘুরে জোটের পটভূমিকা তৈরি করেছিলেন তিনি। জোটের প্রথম বৈঠকও হয়েছিল পটনায়। কিন্তু পরে বেঙ্গালুরু, মুম্বই ও দিল্লিতে জোটের বৈঠকে তাঁকে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ করাতেও তাঁর আপত্তিকে অগ্রাহ্য করা হয়। একই সঙ্গে নীতীশ নিজেই বিরোধী জোটের চেয়ারপার্সন হতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, জোট গঠনে প্রত্যেক রাজ্যে আসন ভাগাভাগির আলোচনা অনেক আগে থেকেই শুরু করা হোক। কিন্তু তাঁর মত জোটের বৈঠকগুলিতে প্রাধান্য পায়নি বলেই ‘ইন্ডিয়া’ থেকে মুক্ত হতে চাইছেন নীতীশ। ওই সূত্রের দাবি এমনই।
আর সে কারণেই শনিবার কংগ্রেস প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও জোটের আহ্বায়ক হতে চাননি নীতীশ। দাবি ওই সূত্রের। দিল্লিতে জোটের বৈঠকে তাঁর নাম বাদ দিয়ে মমতা ও আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসাবে খড়্গের নাম প্রস্তাব করায় তা ভাল ভাবে নেননি নীতীশ। সেই কারণেই শনিবার কংগ্রেসের প্রস্তাব পত্রপাট খারিজ করে দিয়েছেন। এমনটাই দাবি করছে জেডি (ইউ)-এর ওই সূত্র।
বিহারের রাজনীতির কারবারিদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব চাপ তৈরি করে নীতীশকে সরিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর পুত্র তেজস্বীকে বসাতে চাইছেন। লালুর পরিবারের তরফে পৌষের শেষেই তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি জানানো হয়েছিল নীতীশের কাছে। যা বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ছিল শাখের করাতের মতোই। বিহারে লোকসভা ভোটে বিরোধী জোটে লড়াই করতে জেডি (ইউ) ১৭টি আসন দাবি করছিল। কারণ, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোটে ১৭টি আসনে লড়াই করে ১৬টিতে জয় পেয়েছিলেন নীতীশ। স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের দখলে থাকা ১৬টি আসন ছাড়তে চাননি তিনি। কিন্তু সেই ১৬টির মধ্যে এমন ৪-৫টি আসন রয়েছে, যা দাবি করছে লালুর দল।
সম্প্রতি দিল্লিতে জেডি (ইউ)-এর জাতীয় সভাপতি পদে লালু ও তেজস্বী-ঘনিষ্ঠ নেতা ললন সিংহকে সরিয়ে নিজে ওই পদে এসেছেন নীতীশ নিজে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর কাজের প্রচার করছে না কংগ্রেস। জোট সরকারে থেকেও শরিকদল প্রসঙ্গে নীতীশের এমন মন্তব্য ও পদক্ষেপে বিহারের রাজনীতিতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তা ছাড়া ১৩ জানুয়ারি বিহার সফরে আসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। পাল্টা ২১ তারিখ থেকে ঝাড়খণ্ড থেকে লোকসভা ভোটের আগে একটি যাত্রা শুরু করার কথা ছিল নীতীশের। কিন্তু আপাতত দু’টি কর্মসূচিই পিছিয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধনেও নীতীশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই আমন্ত্রণ নিয়ে তিনি চুপ থাকায় ‘সাসপেন্স’ আরও বেড়েছে। তাই জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, নিজের হাতে গড়া জোট ছেড়ে ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয় বার মসনদে বসানোর জন্য এনডিএ জোটেই ফিরতে পারেন বিহারের রাজনীতির ‘পল্টুবাবু’। কারণ ২০১৩ সাল থেকে তিন বার শিবির বদল করার পর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে আবারও শিবির বদল করতেই পারেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy