কাচের ঘেরাটোপের ও পারে সাদা সিংহ, তাকিয়ে আছে কাচের এ পাশে বসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে। কখনও প্রধানমন্ত্রী হাতে করে কখনও দুধ খাওয়াচ্ছেন চিতাশাবককে, কখনও একশৃঙ্গ গন্ডারকে। তাঁর কোলে চেপেছে ওরাং ওটাং। সম্প্রতি গুজরাতের বনতারায় শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর পুত্র অনন্ত অম্বানীর বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন এবং সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধনে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই বন্যপ্রাণের সঙ্গে এমন সব দৃশ্যে দেখা যায় তাঁকে। আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করলেন। তাঁর বক্তব্য, বাজেট বরাদ্দ কমানো থেকে বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণে উদাসীনতা— পরিবেশ সচেতনতা থেকে লুপ্তপ্রায় প্রাণী সংরক্ষণের প্রশ্নে চরম ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার।
বনতারা প্রসঙ্গ তুলে আজ ডেরেক বলেন, ‘‘বাজেট বরাদ্দ থেকেই বোঝা যায়, সরকারের অগ্রাধিকার কী। আগে ব্যাঘ্র এবং হাতি প্রকল্পকে আলাদা করে কেন্দ্রীয় অনুদান দেওয়া হত। এখন দু’টিকে একসঙ্গে করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে এ ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ কমেছে ২৩ শতংশ। ২০২২ অর্থবর্ষে প্রতি দশটি রাজ্যের সাতটি এই বাবদে কোনও টাকা পায়নি। ওই একই সময়ে আরও একটি প্রকল্প বন্যপ্রাণী উন্নয়নের খাতেও বরাদ্দ ২০ শাতংশ কমেছে।’’
প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাতের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘গত দু’বছরে ওই রাজ্যে ২৮৬টি সিংহ এবং ৪৫৬টি চিতাবাঘের মৃত্যু হয়েছে। গুজরাত সরকারই এই তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০২৩-২৪ এ গুজরাতের চিড়িয়াখানায় ৪৫টি প্রাণী মারা গিয়েছে। সেন্ট্রাল জ়ু অথরিটির বার্ষিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে গুজরাতের চিড়িয়াখানা।’’
কেন্দ্রের চিতা প্রকল্পের প্রসঙ্গ তুলে ডেরেকের বক্তব্য, সরকারের সাম্প্রতিক ১০০ কোটি টাকার চিতা নিয়ে আসার প্রকল্পে ৮টি চিতা এবং ৩টি শাবকের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালের সংসদে এ কথা স্বীকার করেছে খোদ কেন্দ্র। মেনে নিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সাফল্যের হার মাত্র ৫০ শতাংশ। তাঁর আরও দাবি, এই সরকারের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে যে সার্বিক ভাবে উদাসীন, এটি তার প্রমাণ। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ২০১১ সালে প্রবলভাবে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা ছিল সাতচল্লিশ। এখন সেই তালিকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিয়াত্তরে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)