কার্যত বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাচ্ছেন ডেঙ্গি আক্রান্তেরা। ছবি পিটিআই।
উত্তরপ্রদেশের একের পর এক জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গি। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাজেহাল দশা বিজেপি সরকারের। ফিরোজ়াবাদ জেলার অবস্থা সবচেয়ে করুণ। গত কাল পর্যন্ত সরকারি হিসেব অনুয়ায়ী, শুধু ফিরোজ়াবাদেই ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ১১৪ জনের। তার মধ্যে ৮৮টি শিশু। সরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যার হাহাকার। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালগুলিতে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। কার্যত বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাচ্ছেন ডেঙ্গি আক্রান্তেরা।
ফিরোজ়াবাদ জেলা হাসপাতালে আজ সকাল ৮টা নাগাদ নিয়ে যাওয়া হয় ডেঙ্গি আক্রান্ত পাঁচ বছরের সাওন্যা গুপ্তকে। তাকে ভর্তি করানোর জন্য হাসপাতালের কর্মী থেকে চিকিৎসক— সকলের কার্যত হাতে-পায়ে ধরেছেন মেয়েটির পরিজন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তখন ওই পাঁচ বছরের মেয়েটির প্রবল জ্বর। প্রায় তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা দৌড়দৌড়ি, আবেদন-নিবেদনের পর দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাওন্যাকে। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছু ক্ষণ পরে মারা যায় ডেঙ্গি আক্রান্ত নাবালিকা। তার দাদা বলেন, ‘‘সময় মতো যদি চিকিৎসা হত, বোনকে বাঁচানো যেত। হাসপাতালের কর্মীদের ওর অবস্থার কথা বারবার বলেছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের কথা কানে তুলল না।’’
কাপড়ে ঢাকা সন্তানের দেহের পাশে বসে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন মৃতার মা। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন এক মহিলা। তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা কিছুই করল না। ওরা শুধু টাকা চায়।’’ ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিজনের বক্তব্য, ফিরোজ়াবাদ হাসপাতালের এই ছবি রাজ্যের অন্য হাসপাতালগুলিতেও। শয্যার অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না অনেকেই। অল্পবয়সিদের কোলে নিয়ে হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরছেন তাদের মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনেরা। ফিরোজ়াবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, ডেঙ্গি রুখতে তাঁরা চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। ৯৫টি স্বাস্থ্য শিবির করা হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালে শয্যার অভাব, সেই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলি মোটা অঙ্কের টাকা চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভীম নগরের বাসিন্দা বীর পাল পেশায় দিনমজুর। ডেঙ্গি হয়েছিল তাঁর পাঁচ বছরের ছেলের। জানালেন, কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছে ছেলেটি। বীর পালের কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম, ৩০ হাজার টাকা চাইল। বলেছিলাম, ভর্তি করুন আমি টাকা জোগাড় করে আনছি। শুনল না। ছেলেকে নিয়ে গেলাম ফিরোজ়াবাদ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে তো হাসপাতালের কর্মীরা কথাই শুনতে চায় না। ছেলেকে ভর্তি নিল না। তখন ওর প্রবল জ্বর। ট্যাক্সি করে আগরার দিকে রওনা হলাম। যদি কোথাও ভর্তি করা যায়। পথেই মারা গেল ছেলেটা।’’ বিরোধীরা বলছেন, উত্তরপ্রদেশের জেলাগুলিতে ঘুরলে এমন উদাহরণ আরও পাওয়া যাবে।
শুধু ফিরোজ়াবাদে নয়, আগরা, মথুরা, মৈনপুরীর মতো জেলাগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গি। সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সর্বত্রই হাসপাতালগুলিতে শয্যার অভাব। নেই চিকিৎসা ব্যবস্থা। উদাসীন যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy