নরেন্দ্র মোদীর উপর আস্থা ধরে রাখতে ভোট প্রচারকেই নোট-প্রচারে বদলের নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের আশঙ্কা, নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তে যে ভোটযুদ্ধে বাজিমাতের কথা ভেবেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, সেটিই বুমেরাং হতে পারে যদি ভোগান্তি আরও বাড়ে। নোটের আকালে বড়সড় ধাক্কা খাচ্ছে অসংগঠিত ক্ষেত্র। রোজগার হারাচ্ছে গরিব জনতা। ভিন্-রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরাও নিজেদের গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই অসন্তোষ মাথাচাড়া দেওয়ার আগেই গ্রামের মানুষদের কাছে প্রচারকে আরও তীব্র মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে ইতিমধ্যেই চার প্রান্ত থেকে চারটি রথ ঘুরছে। সেই রথযাত্রায় প্রচারের অভিমুখকেও নোট-প্রচারে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর উপরে আস্থা ধরে রাখার জন্য গরিব মানুষকে বোঝাতে বলা হয়েছে, ধনীদের থেকে কালো টাকা নিয়ে গরিবদেরই কল্যাণ করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্রকল্প চালু করেছেন।
ঘরোয়া মহলে বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, সরকার যতই আশ্বাস দিক, কাল থেকে বেতন ও ভাতা দিতেই নাভিশ্বাস উঠবে। ৩০ ডিসেম্বরের পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। বাজারে টাকার পর্যাপ্ত যোগান আসতে ঢের সময় লাগবে। কারণ, টাকা ছাপা শুরু থেকে তা বাজারে আসতে কম করে ২১ দিন সময় লাগে। এর উপর সরকার ব্যাঙ্কে পড়ে থাকা নিজের টাকা তোলার উপরেই নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বসে আছে। ফলে সরকার যতই ডিজিটাল লেনদেনের কথা বলুক না কেন, উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে ব্যাঙ্কে টাকা ঢুকলেও তা বের করতে বিস্তর ঝক্কি।
কংগ্রেসের নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, কোনও কারখানার শ্রমিক ন্যূনতম ৯ হাজার টাকা বেতন বা ভাতা পান। যদি কোনও কারখানায় ন্যূনতম ১০০ জন শ্রমিক কাজ করেন, তাহলে কাল থেকে কারখানার মালিককে ৯ লক্ষ টাকা তুলতে হবে। অথচ কারখানায় মাসে ২ লক্ষ টাকার বেশি তোলা যাবে না। সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকার বেশি তোলার নিয়ম নেই। এ তো আর কর্পোরেট সংস্থা নয়, যে চেকে বেতন যাবে। যার ফলে টাকার অভাবে মাঠে মারা যাবেন শ্রমিকরা। ইতিমধ্যেই খবর এসেছে, দশ লক্ষ মানুষ রোজগার হারিয়েছেন। পরিস্থিতি আরও কত ভয়াবহ হবে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই।
এই আশঙ্কা করেই প্রধানমন্ত্রী গতকাল দলের সব সাংসদকে নির্দেশ দিয়েছেন, নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়ে পঞ্চায়েত স্তরে গরিব মানুষকে বোঝাতে। তাঁদের ডিজিটাল লেনদেনে প্রশিক্ষিত করতে। এর পরেই মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ কথা বলেন সঙ্ঘের নেতৃত্বের সঙ্গেও। মানুষকে বোঝানো ও ডিজিটাল প্রশিক্ষণের কাজে সঙ্ঘকেও সমানভাবে সামিল করা হচ্ছে। আর দলকে নির্দেশ দিয়েছেন, ভোট প্রচারে এই কাজেই বেশি জোর দিতে। দলের নেতাদের অমিত শাহ জানিয়েছেন, ‘‘বিরোধী নেতারা ইতিমধ্যেই মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গ্রামে-গঞ্জে অপপ্রচার শুরু করেছে। সংসদে হল্লা তো চলছেই। কিন্তু শহরের মানুষকে বিভ্রান্ত করা যতটা না সহজ, গ্রামে সেটি অনেক বেশি সহজ। ফলে গ্রামে গিয়ে বিরোধীদের অপপ্রচারকে মোকাবিলা করতে হবে জোরকদমে।’’
এর আগে সেনা অভিযানকে পুঁজি করে উত্তরপ্রদেশের ভোট-বৈতরীণী পেরোতে চেয়েছিলেন মোদী। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়েছে। তার আগে ‘অচ্ছে দিন’ আনা থেকে আর্থিক ক্ষেত্রেও একের পর এক ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়েছে মোদী সরকারকে। এ বারে মোদীর কালো টাকা নিয়ে সিদ্ধান্তও যদি ভোটের আগে মুখ থুবড়ে পড়ে, তাহলে বিজেপির হাত থেকে আরও একটি অস্ত্রও হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy