Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Demonetisation

নোটবন্দির সিদ্ধান্ত ‘বেআইনি’, এতে উপকার হয়নি! সুপ্রিম কোর্টে ‘অন্য’ সুর মহিলা বিচারপতির

বিচারপতি বিভি নাগারত্না নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ বলে মন্তব্য করেন। যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়, সেগুলির অধিকা‌শই পূরণ করা যায়নি বলে জানান তিনি।

বিচারপতি বিভি নাগরত্না।

বিচারপতি বিভি নাগরত্না। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৫৫
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্ট নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে ‘নির্ভুল’ বলে রায় দিলেও, বিচারপতি বিভি নাগরত্না একে ‘বেআইনি’ বলে মন্তব্য করলেন। যে যে লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১৬ সালে নোটবন্দি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, সেগুলির অধিকাংশই পূরণ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বিচারপতি জানিয়েছেন, এত দিন পরে এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করার নির্দেশ দিতে পারে না আদালত। তাতে কোনও সুরাহা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যবিশিষ্ট সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি নাগরত্না সোমবার বলেন, “কালো টাকা উদ্ধার, সন্ত্রাসবাদে কালো টাকার ব্যবহার ইত্যাদি বন্ধের জন্যই নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইনগত দিক থেকে দেখতে গেলে এই সিদ্ধান্ত অবৈধ। আদালত কোনও সিদ্ধান্তের লক্ষ্যের দিকটি মাথায় রেখে নয়, আইনগত দিকটি পর্যালোচনা করেই রায় দিয়ে থাকে।”

বিরোধী দলগুলি বার বার অভিযোগ করেছিল, সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই সংক্রান্ত মামলার আবেদনকারীরাও জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের জন্য এক রাত্রের মধ্যে দেশের অর্থব্যবস্থা থেকে কয়েক লক্ষ কোটি থাকা স্রেফ উধাও হয়ে যায়। বিচারপতিও এই সিদ্ধান্তের পিছনে ক্ষমতার ‘অপপ্রয়োগ’কে লক্ষ করেছেন। বিচারপতি নাগরত্না তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরই সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সরকারই ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর চিঠি দিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নোটবন্দির কথা জানায়। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন স্তরে ‘প্রয়োজনীয়’ আলোচনাও হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, দেশের সংসদ নয়, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশের সরকার। তবে তাঁর বক্তব্য, এখন এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারীরা কাউকে সুরাহা দিতে পারবেন না। বিচারপতির এই ‘বিরুদ্ধ মত’কে স্বাগত জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা, তথা দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর মতে এটা কেন্দ্রীয় সরকারের গালে ‘সপাটে চড়’।

নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ৫৮টি হলফনামা দায়ের করা হয়েছিল। আবেদনকারীদের যুক্তি, সরকার সঠিক পরিকল্পনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত। সরকারের পাল্টা যুক্তি ছিল, বাস্তবে এই সিদ্ধান্তকে বাতিল করা সম্ভব নয়। নোটবন্দির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হলে ‘সময়ের পিছনে গিয়ে’ বাতিল করতে হবে বলেও দাবি করেন কেন্দ্রের আইনজীবী।

বিচারপতি এসএ নাজিরের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ শীতকালীন বিরতির আগে বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তি শুনেছিল এবং ৭ ডিসেম্বর রায়দান স্থগিত রেখেছিল। সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিভি নাগরত্না, এএস বোপান্না এবং ভি রামাসুব্রহ্মণ্যম। সোমবার এই বেঞ্চ জানায়, পুরনো ১০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিল করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, তাতে কোনও ভুল ছিল না। আর সেই জন্য কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক কোনও সিদ্ধান্তকে পাল্টে দেওয়া যায় না। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে পাল্টানো যায় না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে ছ’মাস ধরে আলোচনা করেই কেন্দ্র নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রায় ঘোষণার সময় এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পক্ষে ৪ জন বিচারপতি মত দিলেও, বিরুদ্ধে মত দেন বিচারপতি নাগরত্না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy