মহেন্দ্র সিংহ
হিংসায় উন্মত্ত ২৪ ফেব্রুয়ারি দিনটাকে অনেক দিল্লিবাসীই কোনও দিনও ভুলতে পারবেন না। তেমনই ঈশ্বররূপী ওই প্রতিবেশী মানুষটাকেও ভুলতে পারবেন না দিল্লির গোকুলপুরী এলাকার অনেকেই। সিএএ নিয়ে বিরোধিতার মধ্যে হঠাৎই সে দিন আগুন জ্বলে উঠেছিল ওই এলাকায়। পুলিশ প্রশাসনের কোনও রকম সাহায্য ছাড়াই সে দিন নয় নয় করে অন্তত ৬০ জনের প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ও তাঁর ছেলে ইন্দ্রজিৎ। বেশ কয়েকটি মুসলিম পরিবারকে বিপদের থেকে বাঁচিয়ে এনেছিলেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
গোকুলপুরীর বাসিন্দা ৫৩ বছরের মহেন্দ্র সিংহ ও তাঁর ছেলে বছর আঠাশের ইন্দ্রজিৎ। মহেন্দ্রর স্মৃতিতে আজও হানা দেয় ১৯৮৪ সালের শিখ হিংসার সেই দিনগুলি। তখন বছর ষোলোর কিশোর তিনি। ওই সময়টাই তাঁকে বারবার মনে করিয়ে দেয় মানুষের জীবনের মূল্য কতটা। তাই সে দিন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি মহেন্দ্র। ২৪ ফেব্রুয়ারি শহরে যখন হিংসা ছড়ায়, মহেন্দ্র তখন বাড়ি সংলগ্ন নিজের দোকানে বসে। হঠাৎ দেখেন, এক দল লোক কাছেই এলাকায় ঢুকে পড়েছে। মুখে স্লোগান, হাতে তরোয়াল, অস্ত্রশস্ত্র। আর এক মুহূর্ত ভাবেননি। তিনি ও ইন্দ্রজিৎ মোটরবাইক আর স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আশপাশে সংঘর্ষে আটকে পড়া অন্তত ৬০ জন মানুষকে একা হাতেই বার করে আনেন তাঁরা।
মহেন্দ্র জানাচ্ছেন, বেরোতে চেয়েও হিংসার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন মুসলিম ব্যক্তি। ‘‘স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাঁদের ওই ভয়ার্ত মুখগুলো কোনও দিনও ভুলতে পারব না’’, বললেন মহেন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ক্ষমতা কতটুকু! তবু বাইক আর স্কুটি নিয়ে যত জনকে পারি, নিরাপদে বার করে আনার চেষ্টা শুরু করেছিলাম।’’
আরও পড়ুন: দিল্লিতে আত্মঘাতী জঙ্গি হানার ছক! আইএস-যোগ সন্দেহে গ্রেফতার দম্পতি
স্মৃতি হাতড়ে মহেন্দ্র বলে চলেন, ‘‘১৯৮৪-র হিংসার সময়ে কয়েকটা হিন্দু পরিবার এসে আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন বাইক নিয়ে ওঁদের সরিয়ে আনার সময় এটা দেখার সময় ছিল না যে ওঁরা কোন ধর্মের।’’
ছেলে ইন্দ্রজিতের অবশ্য কোনও সংঘর্ষ দেখার স্মৃতি নেই। তবু বাবার মতোই একই স্বর শোনা গেল তাঁর গলাতেও। জানালেন, সে দিন প্রতিবেশীদের উদ্ধার করতে যাওয়ার সময়ে এক বারের জন্যও ভয় করেনি তাঁর। ‘‘শুধু একটাই কথা ভেবেছিলাম যে, যাঁরা বিপদে পড়েছেন তাঁদের বাঁচাতেই হবে।’’
ইন্দ্রজিতদের বাড়ির পাশেই থাকেন বছর তিরিশের মহম্মদ নইম। সে দিন যাঁদের বাঁচিয়ে আনতে পেরেছিলেন মহেন্দ্ররা, নইম তাঁদেরই এক জন। তিনি জানান, অন্তত হাজার জনের একটা দল এসে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়। গয়নাগাটি, টাকাপয়সা লুট করা হয়। মহিলারা কোনও মতে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভেঙে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট। তাঁদের বাড়িতে যখন হামলা হয়, অন্তত দশটি গ্যাসের সিলিন্ডার রাখা ছিল। আগুনে সেগুলো ফেটে যে কত বড় বিস্ফোরণ হতে পারত! ইন্দ্রজিৎ গিয়ে বেশ কিছু সিলিন্ডার দ্রুত হাতে বের করে এনেছিলেন সে দিন। কাছের পাম্প থেকে জল নিয়ে যথাসম্ভব আগুন নেভানোরও চেষ্টা করেন। নইমের কথায়, ‘‘শুধু মহেন্দ্র-ইন্দ্রজিতের জন্যই প্রাণে বেঁচেছি। ওরাই সে দিন আমাদের স্কুটিতে করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy