রাহুল গাঁধীর বাবা-মায়ের নাম কী? তাঁর গায়ের রং ফর্সা না উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ? কোন মাপের জুতো পরেন?
তুঘলক লেনে রাহুলের বাসভবনে এই সব আপাত সাদামাটা প্রশ্ন নিয়েই হাজির হয়েছিল দিল্লি পুলিশ। আজ তা নিয়েই তুলকালাম হল রাজধানীতে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, রাহুলের উপর ‘গোয়েন্দাগিরি’ ও ‘রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি’ চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। গুজরাতে মোদী জমানায় এই ধরনের গোয়েন্দাগিরি চলত। আড়ি পাতা হতো টেলিফোনে। এখন তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে দিল্লিতেও। শুধু অভিযোগেই থেমে না থেকে যুবরাজের উপর ‘গোয়েন্দাগিরি’-র প্রতিবাদে যুব কংগ্রেস আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের বাড়ির সামনে গিয়ে হল্লাও করেছে জোরদার।
তাঁঁদের ‘রুটিন’ কাজ নিয়ে রাজধানীর রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হওয়ায় শেষে মাঠে নামতে হয় দিল্লি পুলিশের কমিশনার বি এস বাস্সিকে। তাঁর দাবি, রাজধানীর ভিভিআইপিদের জন্যই এই সব তথ্য জোগাড় করতে হয়। ১৬ বছর ধরেই এ ব্যবস্থা চলছে। লালকৃষ্ণ আডবাণীই হোন বা বীরাপ্পা মইলি, রাহুল কিংবা তাঁর পড়শি, সকলের কাছেই ওই একই প্রশ্নপত্র পৌঁছেছে। এক কদম এগিয়ে বিজেপি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকেও এই সব প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। তা হলে গাঁধী পরিবারের সমস্যাটা কোথায়?
যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, তিনি কোথায়? কংগ্রেসের ঘোষণা মোতাবেক, তিনি এখন ছুটিতে। আত্মসমীক্ষা করছেন। কোথায় তিনি? কেউ দেখেননি। ছুটি শেষ হয়েছে কি না কিংবা কবে ছুটি শেষ হবে, তা-ও কেউ জানেন না। ফের কবে প্রকাশ্যে আসবেন? ধোঁয়াশায় কংগ্রেসের তাবড় নেতারাও। তাঁদের কেউ কেউ মনে করছেন, সোমবার জমি অধিগ্রহণ বিলের প্রতিবাদে সংসদ ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে কংগ্রেস। হয়তো ‘অজ্ঞাতবাস’ থেকে বেরিয়ে সেখানেই ঘটবে রাহুলের পুনরাবির্ভাব, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন ওই অভিযানে। সেই সংসদ ঘেরাওয়ের আগেই কংগ্রেস অবশ্য মাঠে নামল দলের সহসভাপতির বাড়িতে পুলিশি নজরদারি নিয়ে।
কী হয়েছিল রাহুলের বাড়িতে?
কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের এএসআই শামশের সিংহ ও বিট কনস্টেবল রামেশ্বর দয়াল গত বৃহস্পতিবার রাহুলের বাসভবনে ঢুকে নানা রকম খোঁজখবর করতে শুরু করেন। রাহুলকে কেমন দেখতে, তাঁর চুল ও চোখের মণির রং কী, কী ধরনের জুতো পরেন, কোথায় কোথায় যান রাহুলের অফিসের কর্মীদের এই সব প্রশ্ন করা হয়। রাহুলের বাড়ির চারপাশে ঘোরাঘুরিও করতে দেখা যায় ওই দু’জনকে। রাহুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজি জওয়ানরা ওই পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে শামশের একটি প্রশ্নপত্রও এগিয়ে দেন তাঁদের দিকে। সন্দেহ হওয়ার ওই পুলিশকর্মীদের ছবি তুলে রাখেন রাহুলের অফিসের কর্মীরা। এর পরে আজ দুপুরে কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্র রাহুলের উপরে ‘গোয়েন্দাগিরি’ চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশকে দিয়ে।
মোদী জমানায় গুজরাত সরকারের বিরুদ্ধে এক তরুণীর উপর গোয়েন্দাগিরির অভিযোগ উঠেছিল। ওই রাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অমিত শাহই পুলিশকে গোয়েন্দাগিরির নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সে দিকে ইঙ্গিত করে সিঙ্ঘভি বলেন, “গোয়েন্দাগিরি ও গুপ্তচরবৃত্তি গুজরাত মডেল হতে পারে। ভারতের মডেল নয়। গুজরাতেও বিরোধীদের উপর গোয়েন্দাগিরির ইতিহাস রয়েছে।”
পরিস্থিতি সামলাতে এর পরে আসরে নামেন দিল্লি পুলিশের কমিশনার। তাঁর নির্দেশে অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার যতীন নরওয়াল রাহুলের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে আসেন, ঠিক কী হয়েছিল। কংগ্রেস কর্মীদের মোবাইলে তোলা ছবিও দেখে আসেন তিনি। এর পরেই পুলিশ কমিশনার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা ঘটেনি। দিল্লিতে যে ভিভিআইপি-রা থাকেন, তাঁদের নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা। কারণ, এলাকার দায়িত্বে থাকা বিট কনস্টেবলদের সেখানকার বাসিন্দাদের সম্পর্কে সব রকম তথ্য জানা দরকার। অথচ এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার সুযোগ নেই তাঁদের। তাই ১৯৯৯ সাল থেকেই এই ধরনের একটি প্রশ্নপত্র চালু রয়েছে। সকলকেই ওই সব প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। ওই পুলিশকর্মী বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেই কাজটিই করছিলেন। লালকৃষ্ণ আডবাণী, বীরাপ্পা মইলি, নরেশ অগ্রবালদের মতো সাংসদদের বাড়িতেও এই প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছে। বাস্সি বলেন, “দিল্লি পুলিশ কোনও রাজনৈতিক চাপে কাজ করেনি, এখনও করছে না। যা হয়েছে তার সবটাই রুটিন প্রক্রিয়া।” সমাজবাদী পার্টির সাংসদ নরেশও আজ জানান, তাঁর বাসভবনের কর্মীরাও এই প্রশ্নপত্র পেয়েছেন।
পুলিশ কমিশনারের এই বক্তব্যের পরেই বিজেপি পাল্টা আক্রমণে নেমে পড়ে। দলের নেতা সুধাংশু ত্রিবেদী প্রশ্ন তোলেন, “গাঁধী পরিবার কি সব আইনের ঊর্ধ্বে? প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপি সভাপতির তথ্যও নেওয়া হয়েছে। বহু দিন ধরে এই ব্যবস্থা চলছে। অথচ কংগ্রেস একে গুপ্তচরবৃত্তি বলছে। এ থেকেই ওঁদের মানসিকতা বোঝা যায়।”
কংগ্রেস অবশ্য সহজে পিছু হটতে নারাজ। লোকসভায় তাদের দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “এটা ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে, কার নির্দেশে এটা হয়েছে।” বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের জবাব, “বলার মতো কোনও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নেই কংগ্রেসের। তাই তুচ্ছ নিয়মমাফিক কাজ নিয়েই রাজনীতি করছে।”
রাজনীতির রসিকজনেরা বিঁধছেন কটাক্ষে। বলছেন, কংগ্রেস নেতারাই রাহুলকে খুঁজে দিতে দিল্লি পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন। তাই কংগ্রেস সহসভাপতির ‘সন্ধান চাই’ এই বিজ্ঞাপন দিতেই এত খোঁজখবর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy