কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা। ছবি: পিটিআই।
নভেম্বরের শীতে দেশ জোড়া সাধারণ ধর্মঘটকে সামনে রেখে কৃষক বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠল হরিয়ানা। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে পঞ্জাব থেকে মিছিল করে ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছিলেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার সেই মিছিল হরিয়ানার সীমানায় পৌঁছতেই ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধে। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। তবে বহু চেষ্টা করেও কৃষকদের মিছিল আটকানো যায়নি। তাঁরা হরিয়ানায় ঢুকে পড়েছেন। পরবর্তী লক্ষ্য দিল্লি। এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
কৃষকদের মিছিল আটকাতে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল হরিয়ানা প্রশাসন। কারণ কৃষকদের ওই মিছিল গত কাল রাত থেকেই হরিয়ানা সীমানায় অপেক্ষা করছিল। এ দিন সকালেই পথে নামেন তাঁরা। তাই ৪৮ ঘণ্টা আগেই পাঞ্জাব-হরিয়ানার সীমানা মুড়ে ফেলা হয়েছিল নিরাপত্তার চাদরে। দিল্লি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে দুই রাজ্যের সীমানাবর্তী শাম্ভু এলাকায় তৈরি করা হয়েছিল ‘দুর্গ’। ঘাঘর নদীর উপর সরু সেতুতে গার্ড রেল দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়। তার পর সাজানো হয়ে ট্রাক। উল্টো দিক থেকে ট্রাক্টরে চড়ে আসতে শুরু করে কৃষকদের মিছিল। মিছিল আটকাতে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভকারীদের দমানো যায়নি। ব্যারিকেড তুলে নদীর জলে ফেলে দেন কৃষকরা। সাজিয়ে রাখা ট্রাক সরিয়ে তাঁরা রওনা দেন দিল্লির পথে। সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং অল ইন্ডিয়া কিসান সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, অন্তত ৫০ হাজার কৃষক দিল্লিতে ঢোকার জন্য হরিয়ানার সীমানায় রয়েছেন।
এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে হরিয়ানা এবং পঞ্জাবের রাজনৈতিক আবহ। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর আক্রমণ করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহকে। তাঁর অভিযোগ, অতিমারির সময়ে সস্তার রাজনীতি করা হচ্ছে। অমরিন্দর উস্কানি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ খট্টরের।
কৃষকদের মিছিলে দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগে প্রথম থেকেই সমালোচিত হচ্ছে খট্টরের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর ওই আক্রমণের জবাব দেন অমরিন্দর। কেন মিছিল আটকানো হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। মিছিলে পুলিশি অত্যাচার চালানোর অভিযোগও করেছেন অমরিন্দর। মিছিল আটকানো নিয়ে অকালি দলের নেতা সুখবীর সিংহ বাদল টুইট, ‘এটা পঞ্জাবের ২৬/১১। কী ভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদকে দমন করতে হয় আমরা তার সাক্ষী হলাম’।
কৃষকদের বিক্ষোভে শামিল হয়েছিল যোগেন্দ্র যাদবের সংগঠন স্বরাজ ইন্ডিয়া। ঘটনাস্থলে ছিলেন যোগেন্দ্র নিজেও। তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু যোগেন্দ্র প্রশ্ন তুলেছেন, বিহার নির্বাচনে কোভিড বিধিনিষেধ ছিল না। হরিয়ানার উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্য়ন্ত চৌটালা কয়েক দিন আগে মিছিল করেছেন। সেখানেও সে সব বিধিনিষেধ উধাও ছিল। তা হলে কোভিডের যুক্তি দেখিয়ে কেন দমানো হচ্ছে কৃষকদের আন্দোলন?’’
অন্য দিকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করেছেন রাহুল গাঁধী। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘পাখিদের ঘুম ভাঙার আগেই বিছানা ছেড়েছেন কৃষকরা। কালা কানুনের মেঘ গর্জন, অবিচারের বজ্রপাত, আর ঝড়বৃষ্টি থামছেই না। মোদী সরকারের নির্মমতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন দেশের কৃষকরা’।
নয়া কৃষক আইনের প্রতিবাদে বুধবার থেকে পথে নেমেছেন কৃষকরা। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লির শাসনভার আম আদমি পার্টির হাতে থাকলেও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে। বুধবারই দিল্লি পুলিশের তরফে টুইট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ‘বেশ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচির (২৬ এবং ২৭ নভেম্বর) আবেদন পেলেও তার কোনওটির অনুমতি দেওয়া হয়নি। সব আবেদন খারিজ করা হয়েছে এবং সংগঠনগুলিকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে’। পুলিশকে সহযোগিতার আর্জি জানিয়ে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের আন্দোলনের জেরে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে দিল্লির মেট্রো। টুইটারে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কৃষকদের প্রতিবাদ কর্মসূচি এবং কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সকাল থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
#WATCH Police use tear gas shells to disperse farmers who are gathered at Shambhu border, near Ambala (Haryana) to proceed to Delhi to stage a demonstration against the farm laws pic.twitter.com/ER0w4HPg77
— ANI (@ANI) November 26, 2020
আরও পড়ুন: লাইভ: রেল-পথ অবরোধ, বারাসতে বন্ধ সমর্থকদের পুলিশের লাঠি
আরও পড়ুন: মারাদোনা নেই, দুর্দান্ত-বিতর্কিত-ঘটনাবহুল অধ্যায়ের শেষ
অন্য দিকে, বদরপুরেও কার্যত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সিমেন্ট এবং লোহার অস্থায়ী ব্যারিকেড তৈরি করে গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে সিআরপিএফ। কৃষকরা যাতে রাজধানীতে ঢুকতে না পারেন, তার জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। হরিয়ানায় মনোহরলাল খট্টর সরকারের প্রশাসনও একাধিক বন্দোবস্ত করে রুখে দিতে চাইছে কৃষকদের। দু’দিনের জন্য পঞ্জাব সীমান্ত পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ দুই রাজ্যের মধ্যে বাস চলাচল। তার উপর বহু জায়গায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।সংসদের বিলম্বিত বাদল অধিবেশনে তিনটি কৃষক বিল পাশ হওয়া নিয়ে তুলকালাম হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে। সেই সময় প্রায় সারা দেশেই প্রতিবাদ হয়েছিল ওই তিন আইনের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হয়েছিল পঞ্জাব ও হরিয়ানায়। পঞ্জাব বিধানসভায় কেন্দ্রের ওই আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাবনাও পাশ হয়েছে। এর মধ্যেই সম্প্রতি ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের ডাক দেয় পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যের বেশ কয়েকটি কৃষক সংগঠন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সেই প্রতিবাদ আন্দোলন। পঞ্জাব থেকে হেঁটে দিল্লি আসছেন কৃষকরা। তবে মঙ্গলবার হরিয়ানায় একাধিক বার বাধা পেয়েছেন তাঁরা। জলকামান ছোড়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের উপর। হরিয়ানার বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে পঞ্জাবের সঙ্গে সব সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। তবে সে সব বাধা পেরিয়ে বুধবারই দিল্লির উপকণ্ঠে এসে পৌঁছন কৃষকরা।
#WATCH Drone camera deployed for security surveillance at Delhi-Faridabad (Haryana) border, in view of farmers' 'Delhi Chalo' protest march pic.twitter.com/gfoCTinFIe
— ANI (@ANI) November 26, 2020
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy