দিল্লির মেয়র নির্বাচনে জয়ী আপ। ছবি: পিটিআই।
নির্বাচন মিটে গিয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসেই। তারপর তিন বার মেয়র নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষিত হলেও আপ-বিজেপি বিবাদের জেরে তা ভন্ডুল হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে চতুর্থ বারের চেষ্টায় দিল্লির নতুন মেয়র হলেন আপের শেলি ওবেরয়। শেলি পেয়েছেন ১৫০টি ভোট। বিজেপির মেয়র পদপ্রার্থী রেখা গুপ্ত পেয়েছেন ১১৬টি ভোট। পুনর্গণনার পর মেয়র নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক জানান, ৩৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন আপ প্রার্থী শেলি। এই ঘোষণার পরেই পুরসভার ভিতর উচ্ছ্বাসে মাতেন আপ কাউন্সিলররা। পদ্ম শিবিরকে হারিয়ে আবির খেলতে শুরু ঝাড়়ু শিবিরের পুরসদস্যরা। নির্বাচনের আগেই অবশ্য জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল আপ শিবির। পুর নির্বাচনের ফলাফল তাদের অনুকূলে থাকলেও উপরাজ্যপাল মনোনীত সদস্যদের ভোটাধিকার দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় আপ। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, উপরাজ্যপাল মনোনীত সদস্যরা মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। তারপর সংখ্যার জোরেই আপের জয় এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। জয়ের পর শেলিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল, উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। কেজরীবাল তাঁর টুইট-বার্তায় বিজেপি কটাক্ষ করে লেখেন, “গুন্ডারা পরাস্ত হয়েছে।”
অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে জয়ের পরই অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ) আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, তাঁদের প্রার্থীকে মেয়র করতে অসুবিধা হবে না। অন্য দিকে, শেষ মুহূর্তে চমক দেওয়ার পরিকল্পনায় ছিল গেরুয়া শিবিরও। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিজেপি দাবি করে এসেছিল, দিল্লিতে ‘খেলা হবে’!
গত বছর ডিসেম্বরে হয়েছিল দিল্লি পুরসভার ভোট। তার পর থেকে তিন-তিন বার মেয়র নির্বাচনের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রতি বারই হাঙ্গামার জেরে বন্ধ করে দিতে হয় মেয়র বাছাই। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়ে জানিয়েছিল, উপরাজ্যপাল মনোনীত সদস্যদের মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটাধিকার থাকবে না। ফলে মেয়র বাছাই হবে কেবলমাত্র পুর নির্বাচনে জয়ীদের ভোটের উপর ভিত্তি করেই।
ঘটনা হল, আপের মেয়র পদপ্রার্থী শেলিই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর আবেদন ছিল, দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অর্থাৎ উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনা, যে মনোনীত ১০ সদস্যের ভোটাধিকার রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা খারিজের। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধানী বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, মনোনীত সদস্যেরা মেয়র নির্বাচনের ভোটে অংশ নিতে পারবেন না। এর ফলে আপের মেয়র প্রার্থীই যে জিততে চলেছেন তা এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। এ দিকে বিজেপি শিবির থেকে চমকের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। কী সেই চমক, তা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি। যদিও অঙ্কের বিচারে বিজেপির কোনও সম্ভবনাই ছিল না। তাই শেষ অঙ্কের ‘খেলা’র দিকে তাকিয়ে ছিল রাজধানীর গেরুয়া শিবির।
ডিসেম্বরের গোড়ায় পুরভোটে ২৫০ আসনের দিল্লি পুরনিগমে ১৩৪টি ওয়ার্ডে জিতেছিল কেজরীওয়ালের আপ। ক্ষমতাসীন বিজেপি নেমে আসে ১০৪-এ। ৯টি ওয়ার্ডে জেতেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। দিল্লির মেয়র নির্বাচনে সেখানকার রাজ্যসভার ৩ জন ও লোকসভার ৭ জন সাংসদ এবং ১৪ জন বিধায়কেরও ভোটাধিকার রয়েছে। যার অর্থ, মোট ২৭৪টি ভোটের মধ্যে যে দল ১৩৮টি ভোট পাবে, সেই দলের প্রার্থীই মেয়র পদে জয়ী হবেন। অঙ্কের হিসাবে জয় অসম্ভব হলেও পদ্মশিবির মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ায় নতুন করে অশান্তি তৈরি হয় দিল্লিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy