Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
China Policy

চিন-নীতিতে বাইডেনে স্বস্তিরই আশা দিল্লির

তবে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে অতীতে পাকিস্তানের মধুর সম্পর্কের দিকটিও আতসকাচের তলায় থাকছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

ট্রাম্প জমানার শেষার্ধে যে ভাবে চিনের নাম করে তোপ দেগেছে হোয়াইট হাউস, জো বাইডেন প্রশাসন তা করবে না। কিন্তু রিপাবলিকানদের মতো কড়া হাতেই তারা চিনের মোকাবিলা করবে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এমনটাই জানিয়ে বলছেন, কৌশলগতভাবে ভারতের কাছে এই নীতি স্বস্তিদায়ক। এমনকি তাঁদের মতে, যেটা ট্রাম্প করেননি, চিনের মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত অভিযোগের দিকটিকেও (উইঘুর মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় নিগ্রহ) সামনে এনে কড়া সমালোচনার রাস্তায় হাঁটবে বাইডেন প্রশাসন। আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট কী ভাবে তাঁর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক এবং ভূকৌশলগত ঘুঁটি সাজান, সে দিকে নজর রাখছে সাউথ ব্লক।

চিনের সঙ্গে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বেজিং সংক্রান্ত বিষয় এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে ভারতের কাছে। পাশাপাশি ইরান থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া থেকে দামি সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে আমেরিকার আইন, ভিসা নীতি, আফ-পাক নীতির ক্ষেত্রেও বাইডেন কী ভাবে পদক্ষেপ করেন, তার একটা আগাম আঁচ পাওয়ার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। কারণ ভারতের জাতীয় স্বার্থ এর প্রত্যেকটির সঙ্গে জড়িয়ে।

বাইডেন ভোটের আগে একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে ভারত এবং আমেরিকা কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়াই করবে।’ ভারত- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উন্মুক্ত এবং উদার নীতির কথাও তুলে ধরেছিলেন। প্রাক্তন বিদেশসচিব কানওয়াল সিব্বলের বক্তব্য, ‘‘চিন এখন আমেরিকার কৌশলগত শত্রু। আমেরিকার বিদেশনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে চিন-বিরোধিতা। ফলে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনকে রুখতে ভারতকে প্রয়োজন হবে বাইডেনেরও। বাইডেনের নেতৃত্বে ভারত এবং আমেরিকাকে একত্রে চিনের তরফ থেকে আসা ফাইভ জি-সহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতেও দেখা যেতে পারে। সীমান্তে চিনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য আমেরিকার পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি সহযোগিতা বাড়বে আগামী দিনে।’’ আর এক প্রাক্তন বিদেশসচিব নিরুপমা রাও-ও বলছেন, ‘‘আমেরিকার রাজনীতিতে জো বাইডেনকে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং স্থায়ী বন্ধু হিসাবেই দেখা হয়।’’

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, বাইডেন যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক কূটনীতির পথে চলেন, তাঁকে বা তাঁর সচিবদের আগ বাড়িয়ে কোনও দেশের (চিন) নাম করে তোপ দাগতে দেখা যাবে না। বিষয়টি ভারতের জন্য স্বস্তিদায়ক বলেই মনে করা হচ্ছে। সীমান্তে চিনের সঙ্গে অশান্তি কমানোর জন্য ভারত এবং চিনের দফায় দফায় সামরিক ও কূটনৈতিক বৈঠক চলছে। এর মধ্যে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন চিন-বিরোধী মঞ্চের সদস্য হতে চাইছে না মোদী সরকার। টোকিয়োর কোয়াড এবং দিল্লির টু প্লাস টু বৈঠকের পর মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োকে চিনের নাম করে সমালোচনা করতে দেখা গেলেও বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে সাউথ ব্লক।

তবে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে অতীতে পাকিস্তানের মধুর সম্পর্কের দিকটিও আতসকাচের তলায় থাকছে। তবে কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভূকৌশলগত অক্ষ গত কয়েক বছরে অনেকটাই পাল্টেছে। অতীতে ইসলামাবাদের প্রতি যে নিঃশর্ত নির্ভরতা আমেরিকার ছিল, ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানে খুঁজে পাওয়ার পর থেকে তা ক্রমশ নিম্নগামী। ওয়াশিংটনের মতে, সাপ ও বেজি দু’গালেই চুমু খেযে চলেছে ইমরান সরকার। তারা আমেরিকার কাছ থেকে তালিবান দমনের জন্য বিপুল অর্থ ও অস্ত্র নিয়েছে। আবার আফগানিস্তানে তালিবানের মধ্যে প্রভাব বাড়িয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাসের কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে। পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান বেজিং-ঘনিষ্ঠতাও নজরে আছে ডেমোক্র্যাটদের।

অন্য দিকে ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ট্রাম্প। এই মুহূর্তে বাইডেন চাইলেও চটজলদি ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা মুশকিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রণেন সেনের কথায়, ‘এখনই ইরানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক শোধরানোর সম্ভাবনা নেই। আগামী বছর জুনে ইরানে নির্বাচন। তাদেরও ঘরোয়া রাজনীতিতে আমেরিকার-বিরোধিতার তাস খেলার দরকার রয়েছে।’’ অর্থাৎ ইরান থেকে তেল আমদানির দরজা অন্তত এখনই খোলার আশা দেখছে না কূটনৈতিক শিবির।

অন্য বিষয়গুলি:

China Policy India Joe Biden America
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy