ছবি: পিটিআই।
তেলেভাজা, রুহ আফজা, কাবাব, ভাল্লা পাপড়ি — সেই প্রাচীন গন্ধের রকমফের নেই। শীতের আধো রোদে একই ভাবে শান্ত হয়ে রয়েছে গালিবের পাড়া। চশমা, কাচের চুড়ি, চপ্পল আর বিয়ের কার্ডের দোকানগুলিও সবে খুলেছে। কিন্তু আজকের দুপুরটা যেন অন্য রকম। কাজে মন নেই কারও। উসখুস ভাব।
আসাদউল্লা খান বেগ তথা মির্জা গালিবের মহল্লা বল্লিমারানের চোখ সকাল থেকেই মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। আপ-এর লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে চলা দেখে বাহ্যিক উল্লাস কিছুটা গোপন করলেও এখানকার মানুষের চোখেমুখে উজ্জ্বলতা স্পষ্ট। গলির মুখেই বিসমিল্লাহ মার্কেটে মহম্মদ আখলাকের ৭০ বছরের প্রাচীন জুতোর দোকান। বলছেন, ‘‘আপ যে এখান থেকে জিতবে, তা যেন আগে থেকেই ঠিক হয়ে ছিল। ছ’মাস আমাদের বাড়িতে বিজলির বিল আসেনি। কম দামে চিকিৎসা পাচ্ছি। রাস্তা আগের থেকে অনেকটা ভাল হয়েছে। এ বার আরও হবে।’’
সকলের মুখেই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা স্থানীয় বিধায়ক ইমরান হুসেন-এর। তিনি এ বারেও জিতেছেন। ‘‘এমন রাজনৈতিক নেতা আগে এই মহল্লার মানুষ কখনও দেখেননি’’— বলছেন স্থানীয় চশমার দোকানের মালিক গুলাম ওসমানি। ‘‘শুধু ভোটের আগে বলে নয়। গত পাঁচ বছর যে কোনও দায়ে-দফায় ইমরান সোজা বাড়ি গিয়ে হাজির হন। তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে পাননি, এমন লোক এই তল্লাটে পাবেন না। এখানকার চশমা বিল্ডিং-এর একটি সরকারি স্কুল করা হবে বলে গত পঞ্চাশ বছর একটি জায়গা পড়ে ছিল। উনি উদ্যোগী হয়ে কাজ শুরু করায় গত পাঁচ বছরে কাজ প্রায় শেষ। এ বার আপ জিতে আসায় স্কুল শিগগিরই শুরু হবে।’’ এখানকার কাসিমজান গলিরই একটি ছোট গলিতে আপ-এর অফিস। যা আজকের এই বিপুল জয়ের পরেও শান্ত ও সংযত। বাইরের ঘরে কম্পিউটার খুলে বসে আছেন জনা দশেক নেতা-কর্মী। নজর ফলাফলের দিকে। সেখানে বসে এক আপ নেতা গিয়াসুদ্দিন খান বললেন, ‘‘আমরা পরে একটা বিজয় মিছিল করব। বিকেলে বিধায়ক এসে রোজকার মতো অফিসে বসে মহল্লার মানুষের সমস্যা, অভিযোগ শুনবেন। ব্যস! এর বেশি আর কী।’’
আস্থা আপে
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসনগুলিতে আপ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার (শতাংশে)
• ওখলা ৬৬.০৩
• বাল্লিমারান ৬৪.৬৫
• বাবরপুর ৫৯.৩৯
• চাঁদনি চক ৬৫.৯২
• সিমাপুরি ৬৫.৮২
• শাহদরা ৪৯.৫৩
• মাটিয়ামহল ৭৫.৯৬
• মুস্তাফাবাদ ৫৩.২
• সিলামপুর ৫৬.০৫
• রিঠালা ৫২.৬৩
উচ্চকিত না-হলেও নিঃসন্দেহে আনন্দ ম ম করছে, ‘বল্লিমারান কে মহল্লে কি ও পেচিদা ডালিয়োঁ কি সি গলিয়াঁ।’ জানা গেল, বিজেপি প্রার্থী অথবা কর্মী-প্রচারকেরা, ভোট বাজারে এই মহল্লা মাড়াননি। পুরনো দিল্লির এই সব এলাকায় একটি পদ্মও যে ফুটবে না, সেটা জেনেই সম্ভবত বৃথা পরিশ্রম করতে চাননি তাঁরা। তবে, ‘‘সে ভাবে কখনও সাম্প্রদায়িক অশান্তি না হওয়া এই এলাকায় বরং হিন্দুদের মধ্যে পাকিস্তানের নাম করে পরোক্ষে উস্কানি দিতেই ব্যস্ত থেকেছে এখানকার বিজেপি’’, জানাচ্ছেন রোদচশমার ব্যবসায়ী সলমন আতিক। শুধু সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ নয়, জিএসটি-র ধাক্কাতেও এখানকার ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ বেড়েছে। এক চিলতে একটি দোকান চালান আতিক। বললেন ‘‘আগে দিনে হাজার পাঁচেক টাকার ব্যবসা হত। জিএসটি-র পর গত দু’বছরে এতটাই মন্দা যে, লাভ ছেড়ে দিন, সংসার চালানোর অবস্থাও প্রায় থাকছে না।’’
আরও পড়ুন: মেরুকরণের ধার কি কমছে? আপ-ঝড়ে অমিত কোথায়
সিপাহি বিদ্রোহের পরে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া গালিব, দিল্লির ভাঙন দেখতে দেখতে এক দিনলিপি লিখেছিলেন (দস্তাম্বু)। দিল্লির পতনে বিষন্ন কবি বলেছিলেন, ‘কেল্লা, চাঁদনি চক, গিরিন্দা বাজার, জুম্মা মসজিদ, প্রতি বছর ফুলওয়ালাদের মেলা— এই পাঁচ পাঁচটি জিনিসই যখন নেই, তখন বল, দিল্লি শহরটা কোথায়?’
আপ-এর জয়ের দুপুরে গালিবের পাড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হল, এই কাশিমজান গলির বিষন্নতা সামান্য হলেও কেটেছে। তৈরি হয়েছে আশা। অন্য দিকে, শুধু বল্লিমারান নয়, গোটা দিল্লির সংখ্যালঘুদের উপুড়হস্ত ভোট পাওয়ার পরে দায়িত্ব বেড়ে গেল আম আদমি পার্টির— এমনটাও কিন্তু মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy