ইদ ও রামনবমীর আগে দেশের রাজধানী দিল্লিতে শুরু হল আমিষ বনাম নিরামিষ বিবাদ।
পূর্ব দিল্লির পটপরগঞ্জের বিধায়ক রবীন্দ্র সিংহ নেগি আগেই তাঁর এলাকার ব্যবসায়ীদের মঙ্গলবার করে মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বার তাঁর দাবি, রামনবমীর আগে চৈত্র নবরাত্রিতে ন’দিন ধরে গোটা দিল্লিতে সমস্ত মাংসের দোকান বন্ধ রাখতে হবে। বিজেপি বিধায়কের এই দাবির পরে আজ আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘দিল্লিতে সমস্ত দেশের দূতাবাস রয়েছে। দিল্লিতে এত দেশের অতিথিশালা রয়েছে। বিজেপি নেতাদের মালিকানাধীন রেস্তরাঁ, কেএফসি-র দোকান খোলা থাকে। সাহস থাকলে, সে সব বন্ধ করে দেখান।’’
নবরাত্রি শুরু হচ্ছে ৩০ মার্চ। ৩১ মার্চ ইদ। বিজেপি বিধায়কের দাবি অনুযায়ী রমজানের শেষে ইদের সময়ও দিল্লি জুড়ে মাংসের দোকান বন্ধ রাখা হবে। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে একই ভাবে মাছ-মাংস বন্ধ করবে। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ির প্রশ্ন, ‘‘বিজেপি কি ঠিক করবে, কে কোন মাসে কী খাবে, কী পড়বে? নবরাত্রির সময় দিল্লিতে কোনও বিদেশি অতিথি এলে তাঁকেও কি নিরামিষ খেতে হবে?’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মোদী সরকার কি শেখ হাসিনাকেও ইদের দিনে শুধু মিষ্টি সেমুই খেয়ে থাকতে বলবেন?’’ নরেন্দ্র মোদী, জে পি নড্ডারা দলের বিধায়কদের এ সব কথা শুনতে পান না?— প্রশ্ন তাঁর।
বিজেপি বিধায়ক নেগি অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি নবরাত্রি জুড়ে গোটা দিল্লিতে মাংসের দোকান বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়ে পুরসভা, জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখবেন। পুলিশ-প্রশাসন কিছু না করলে তিনি রাস্তায় নেমে নিজের বিধানসভা এলাকায় সমস্ত মাংসের দোকান বন্ধ করবেন। দিল্লির ভোটের সময়ে প্রচারে নেমে নেগি হিন্দু দোকানদারদের ঠেলাগাড়িতে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা ঝাণ্ডা এবং মুসলমান দোকানদারদের ঠেলায় নিজেদের নাম লাগিয়ে রাখতে বলেছিলেন। এ বার নেগির যুক্তি, ‘‘বছরে দু’বার নবরাত্রি আসে। সনাতনীদের জন্য নবরাত্রি পবিত্র উৎসব। আমরা তাই সবাইকে মাংসের দোকান বন্ধ রাখার অনুরোধ করছি।” দিল্লিতে দুর্গাপুজোর সময় নবরাত্রিতে অধিকাংশ রেস্তরাঁয় মাছ-মাংস বিক্রি করা হয় না। ব্যতিক্রম কনট প্লেস বা বাঙালিপাড়া চিত্তরঞ্জন পার্কের মতো কিছু এলাকা।
বিজেপির আর এক বিধায়ক কর্নেল সিংহ দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে রাস্তায় নমাজ পড়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কটাক্ষ, ‘‘দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেই বিজেপি মেরুকরণের রাস্তা নিয়েছে। দিল্লি উন্নয়ন চায়, বিদ্বেষ-বিভাজন নয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)