প্রতীকী ছবি
শুধু তীর্থযাত্রীরাই নন, এ বারের চারধাম যাত্রার বলি তাঁদের চতুষ্পদ বাহনেরাও।
যাত্রী, পশুপ্রেমী সংগঠন এবং পশুমালিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর যাত্রা শুরুর প্রথম চার সপ্তাহের মধ্যেই যাত্রী এবং পণ্য বহন করতে গিয়ে অন্তত ৮০টি খচ্চর পথে মারা গিয়েছে। একাধিক খচ্চর আহত হয়েছে। বর্ষা নামার আগে পর্যন্ত যাত্রার এখনও বেশ কয়েক দিন বাকি। পরিস্থিতি যা, তাতে আরও মৃত্যুর আশঙ্কা করছে পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি।
চারধাম যাত্রার মধ্যে কেবল মাত্র কেদারনাথে যাত্রাপথেই মূলত খচ্চর ব্যবহার করা হয়। যাত্রীর পাশাপাশি পণ্যও পরিবহণ করে সেগুলি। এ বারের যাত্রায় এত প্রাণীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে সরাসরি পশুমালিকদের দিকেই আঙুল তুলেছে সরকার এবং পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি। দিন কয়েক আগেই রাজ্যের পশুকল্যাণমন্ত্রী সৌরভ বহুগুণা খচ্চর মালিকদের আবেদন করেছিলেন, পশুগুলিকে যাতে কোনও ভাবে বেশি খাটানো না হয়। কিন্তু অভিযোগ, মন্ত্রীর সেই আবেদনে কান দেননি খচ্চর মালিকেরা। নিয়ম মতো, কেদারনাথে একটি খচ্চর একবারই নীচ থেকে কোনও যাত্রীকে নিয়ে উপরে মন্দির পর্যন্ত পৌঁছে দেবে এবং পরে তাঁকে নিয়ে নীচে নামবে। পরের দিন পর্যন্ত বিশ্রাম পাওয়ার কথা প্রাণীটির। কারণ, কেদার যাত্রার খাড়াই রাস্তায় একবারের বেশি ওঠানামা করা কার্যত দুঃসাধ্য।
যাত্রী এবং স্থানীয়দের অনেকেরই অভিযোগ, সরকারি নিয়ম মেনে একবারের বদলে একাধিক বার যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে খচ্চরগুলিকে। ফলে সেগুলি বিশ্রাম পাচ্ছে না। ক্লান্তি কাটাতে প্রাণীগুলিকে উত্তেজনা বাড়ানোর ওষুধও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তা ছাড়া তাদের ঠিক মতো খেতেও দেওয়া হয় না। ফলে রাস্তার মধ্যেই প্রাণীদের মৃত্যু হচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়। ২০১৩ সালে কেদারে বিপর্যয়ের পরে যে নতুন রাস্তা হয়েছে, তাতে পথের দৈর্ঘ্য বেড়েছে। আগে গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথের মন্দির পর্যন্ত পথে চারটি জায়গায় বিশ্রাম করতে পারতেন যাত্রীরা। বিশ্রাম পেত প্রাণীগুলিও। নতুন যাত্রাপথে প্রাণীগুলির বিশ্রামের জন্য জায়গা রাখা হয়নি বলে অভিযোগ।
গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী এবং বদ্রীনাথে মন্দির পর্যন্ত সরাসরি গাড়ি যাতায়াতের পথ থাকলেও কেদারনাথে যেতে হলে ১৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে বা খচ্চরের পিঠে বা ডুলিতে যেতে হয়। আরও এক ভাবে যাওয়া যায়, কপ্টারে। কিন্তু খরচের কারণে অনেকেই কপ্টারে কেদারনাথে যান না। করোনার কারণে গত দু’বছর চারধাম যাত্রা না হওয়ায় এ বছর রেকর্ড ভাঙা ভিড় হয়েছে সেখানে। এ বছর তাই বহু গুণ চাপ বেড়েছে খচ্চরদের। অতিরিক্ত খাটনি এবং উচ্চতার কারণে বিশ্রাম না পাওয়া প্রাণীদের মৃত্যুও তাই বেড়েছে একলাফে অনেকটাই।
গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রী-কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথ, গাঢ়োয়াল হিমালয়ের এই এই চারটি ধামে প্রতি বছর যাত্রা শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়া থেকে। বর্ষার জন্য মাঝে কয়েক দিন বন্ধ থাকার পরে ফের পুজোর মরসুমে চলে যাত্রা। চারধাম যাত্রায় এ বছর রেকর্ড সংখ্যক তীর্থযাত্রীর মৃত্যুতে এমনিতেই উদ্বিগ্ন উত্তরাখণ্ড সরকার এবং মন্দির কমিটিগুলি। সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত একশোর কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে মন্দির দর্শনে গিয়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশেষে যাত্রীদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালু করেছে প্রশাসন। তাতে কিছুটা হলেও কমেছে মৃত্যুর হার। এ বারে এতগুলি প্রাণীর মৃত্যুর পরে নড়ে বসেছে সরকার। সূত্রের খবর, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষী পশুমালিকদের শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy