খোদ ‘রাম-রাজ্য’ অযোধ্যায় বৃহস্পতিবার রাতে ‘ভাগবত কথা’ শুনতে গিয়েছিলেন দলিত তরুণী। আর ফেরেননি। শনিবার একটি নালা থেকে তাঁর নগ্ন, ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে। সারা শরীরে অজস্র আঘাতের চিহ্ন, উপড়ে নেওয়া হয়েছে চোখ। সেই মৃত্যুকে ঘিরে ভোটের আগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। কেউ হাউ হাউ করে কাঁদছেন, কেউ বলছেন ‘নাটক’, কেউ আবার দুষছেন প্রশাসনকে। এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।
রবিবার এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কপাল চাপড়ে কাঁদতে শুরু করে দেন ফৈজ়াবাদের সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সাংসদ অবধেশ প্রসাদ। রবিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে কাঁদতে কাঁদতে অবধেশ বলেন, ‘‘হে রাম, হে সীতা, আপনারা কোথায়? অযোধ্যায় এই দিনও দেখতে হল?’’ তাঁকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন দলেরই আর এক নেতা। হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে অবধেশ বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে দিল্লি যেতে দিন। লোকসভায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উত্থাপন করব। যদি বিচার না পাই, তা হলে সাংসদপদ ছেড়ে দেব।’’
তবে এর পরেই অবধেশকে নিশানা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রবিবারই মিল্কিপুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে যোগী বলেন, ‘‘সব নাটক! মনে আছে, অযোধ্যার আর এক দলিত কন্যার সঙ্গে একই রকম ঘটনা ঘটিয়েছিল সমাজবাদী দলের এক নেতা? এ বারও তলিয়ে দেখলে হয়তো দেখা যাবে সমাজবাদী দলেরই কোনও ঘৃণ্য জন্তু এই অপরাধ করেছে।’’ রবিবার রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরাও নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরাও ‘নাটক’ করার জন্য বিঁধেছেন সাংসদ অবধেশকে।
আরও পড়ুন:
যদিও ঘটনার পরেই মুখ খুলেছেন সমাজবাদী দলের প্রধান অখিলেশ যাদব। অবধেশের সমর্থনেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই ‘অমানবিক ঘটনায়’ প্রকৃতই আঘাত পেয়েছে তাঁর দল। সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, পিডিএ (পিছড়া, দলিত এবং সংখ্যালঘু)-দের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বিজেপির মদতেই।
একই সুর রায়বরেলীর কংগ্রেস সাংসদ তথা বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর গলাতেও। সঙ্গে অকর্মণ্যতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকেও দুষেছেন তিনি। রাহুল বলেন, ‘‘যদি প্রশাসন আগেই নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ শুনত, তা হলে হয়তো মেয়েটির প্রাণ বেঁচে যেত। এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য আরও এক মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেল। আর কত পরিবারকে এ ভাবে যন্ত্রণা পেতে হবে?’’ রাহুলের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের ‘বহুজন-বিরোধী’ বিজেপি সরকারের মদতেই দলিতদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। ঘটনায় অবিলম্বে তদন্ত দাবি করে দোষীদের কড়া শাস্তি চেয়েছেন রাহুল। রাহুল-ভগিনী কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘বিজেপির জঙ্গলরাজে দলিত, আদিবাসী, গরিব এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণির আর্তনাদ শোনার কেউ নেই! এখন দলিতদের উপর অত্যাচারের আর এক নাম উত্তরপ্রদেশ সরকার!’’
উল্লেখ্য, বুধবার মিল্কিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন রয়েছে। গত লোকসভা ভোটে মিল্কিপুরের বিধায়কপদ ছেড়ে ফৈজ়াবাদের সাংসদ হয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদ। ফলে শূন্য হয়ে যায় মিল্কিপুরের বিধানসভা আসন। তাই আসন্ন নির্বাচনের শেষ লগ্নে এই আসনে জেতার জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টি, দু’পক্ষই। অবধেশেরই ছেলে অজিত প্রসাদ এ বার সমাজবাদী পার্টির হয়ে লড়ছেন। বিজেপির টিকিটে লড়ছেন চন্দ্রভান পাসওয়ান। গত ৩৩ বছরে মিল্কিপুর কেন্দ্রে মাত্র এক বার জয়ের মুখ দেখেছে বিজেপি। উপনির্বাচনের আগে তাই উত্তেজনা তুঙ্গে। গত এক মাসে পাঁচ বার সেখানে ভোটপ্রচারে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী।