Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পথে উচ্চবর্ণের বাধা, দড়ি বেয়েই শ্মশানে দলিতের দেহ

স্থানীয় দলিতদের অভিযোগ, পালার নদীর উপরে আরাসলন্থপুরম-নারায়ণপুরম সেতুটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। নদীর ধারে শ্মশানে পৌঁছনোর যে রাস্তা, তার দু’পাশের জমি কিনে নিয়ে চাষবাস শুরু করেছেন উচ্চবর্ণের হিন্দুরা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে দেহ নামানোর এই ভিডিয়ো।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে দেহ নামানোর এই ভিডিয়ো।

সংবাদ সংস্থা 
চেন্নাই শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

শ্মশানে যেতে যে রাস্তাটুকু পেরোতে হয়, উচ্চবর্ণের নিষেধে সেখানে পা দেওয়ার অধিকার নেই দলিতদের। তাই ফুল দিয়ে সাজানো মৃতদেহ দড়ি দিয়ে বেঁধে সেতু থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে নীচে। নদীর ধারে সৎকার হচ্ছে তাঁর। তামিলনাড়ুর ভেলোর জেলার বানিয়ামবাড়ি এলাকার ঘটনা। গত কাল ভিডিয়োটি ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। দলিত সম্প্রদায়ের আলাদা শ্মশান তৈরির জন্য রাতারাতি জমি বরাদ্দ করেছে তারা।

স্থানীয় দলিতদের অভিযোগ, পালার নদীর উপরে আরাসলন্থপুরম-নারায়ণপুরম সেতুটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। নদীর ধারে শ্মশানে পৌঁছনোর যে রাস্তা, তার দু’পাশের জমি কিনে নিয়ে চাষবাস শুরু করেছেন উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। তার পর থেকেই তাঁদের চাষের জমির মধ্যে দিয়ে তাঁরা দলিতদের মৃতদেহ নিয়ে যেতে দেন না। অথচ পালার নদীর ধারের ওই শ্মশানই ব‌ংশপরম্পরায় ব্যবহার করে এসেছেন দলিতরা। গত শনিবার স্থানীয় নারায়ণপুরম দলিত কলোনির বাসিন্দা কুপ্পানের মৃত্যু হয় পথ দুর্ঘটনায়। মৃতের ভাইপো বিজয় জানিয়েছেন, গ্রামের শ্মশানটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় নদীর ধারের পুরনো শ্মশানে দেহ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু মূলত বেলালার ও বানিয়ার সম্প্রদায়ের হিন্দুরা তাঁদের ওই রাস্তায় যেতে বাধা দেন ও দেহটি অন্য পথে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। মৃতের এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই রাস্তা দিয়েই শ্মশানে দেহ নিয়ে যেতেন। সম্প্রতি বেড়া দিয়ে রাস্তাটি আটকে দিয়েছেন উচ্চবর্ণের লোকেরা। আমরা বেড়াটি খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাই। ওঁরা শোনেননি। ফলে বাধ্য হয়ে সেতু থেকে দড়ি বেঁধে দেহটি নদীর ধারে নামাতে হয়।’’

দলিত কলোনির এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে এ ভাবেই একাধিক দেহ সৎকার করেছেন তাঁরা। গত ১৭ অগস্ট কুপ্পানের দেহটি নামানোর সময়ে ভিডিয়ো করেন এক আত্মীয়। সেটি ছড়িয়ে পড়তেই টনক নড়ে জেলা প্রশাসনের। তার পরেই আজ দলিতদের শেষকৃত্যের জন্য আলাদা জমি বরাদ্দ করা হয়েছে তড়িঘড়ি। তিরুপত্তুরের সাব-কালেক্টর প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, ‘‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, শনিবার কিন্তু স্থানীয় উচ্চবর্ণ ও দলিত

সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের মধ্যে কোনও ঝঞ্ঝাট হয়নি। ওঁদের আলাদা জমির প্রয়োজন ছিল, আমাদের বললেই পারতেন। আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করতাম।’’ ওই দিন যে আলাদা করে কোনও অশান্তি হয়নি, তা স্বীকার করেছেন বিজয় নামে মৃতের এক আত্মীয়ও। তিনি বলেন, ‘‘বছর দশেক আগে যখন সেতুটি নতুন তৈরি হয়, সেই সময়ে এক বার শ্মশানে দেহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে উচ্চবর্ণের জমি মালিকদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। তার পর থেকেই আমরা সেতুর উপর থেকে মৃতদেহ দড়ি দিয়ে বেঁধে নদীর ধারে নামিয়ে দিই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dalit Man Tamil Nadu Vellore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy