সাংবাদিক বৈঠকে কুলদীপ সিংহ। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রেম সিংহ
রাজ্যের শাসক তৃণমূল ভোটের কাজে রাজ্যে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সরব হলেও রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রশ্নে এখন পর্যন্ত কোনও তালমিলের অভাব হয়নি বলেই জানালেন সিআরপিএফের ডিজি কুলদীপ সিংহ। রাজ্যে প্রথম দফার আগে যে প্রায় ৭২৫ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী পাঠানো হচ্ছে, তার মধ্যে বড় অংশই হল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)। সেই বাহিনীর ডিজি কুলদীপ সিংহ পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইপিএস অফিসার হওয়ায় রাজ্যে ভোটের সময়ে হওয়া রাজনৈতিক হিংসা ঠেকাতে ওই আমলার উপরেই ভরসা রাখছে নির্বাচন কমিশন।
সাধারণত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই ভোটমুখী রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে থাকা দস্তুর। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসার কথা মাথায় রেখে কিছুটা নজিরবিহীন ভাবে ভোট ঘোষণার বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সিআরপিএফের শীর্ষ কর্তা হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া কুলদীপ জানান, মূলত স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে টহলদারি বাড়ানো, রাজনৈতিক সন্ত্রাস রোখা, ভোটারদের মনে আস্থা বাড়াতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আগে থাকতে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছে। অতীতে ভোটের সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলেও তাদের উপদ্রুত এলাকায় মোতায়েন না করে বসিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এ যাত্রায় অবশ্য তাঁর বাহিনীকে সে ধরনের কোনও সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি বলে দাবি করেছেন কুলদীপ। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় পুলিশ বা প্রশাসন সাহায্য করছে না, এমন ঘটনা এখনও ঘটেনি। সমন্বয় রেখেই কাজ হচ্ছে।’’
কোভিড অতিমারির কারণে এ যাত্রায় প্রায় ২৩ হাজারের কাছাকাছি বুথ বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। প্রায় লক্ষাধিক বুথের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অশান্তি ঠেকাতে এ যাত্রায় ভোট পর্বের গোড়া থেকেই বিপুল সংখ্যক আধা সেনা পশ্চিমবঙ্গে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কুলদীপ বলেন, ‘‘ভোটের আগেই ৭২৫ কোম্পানি আধা সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৪৯৫ কোম্পানি ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। বাকি বাহিনীও দ্রুত পৌঁছে যাবে। রাজ্যের আট দফা নির্বাচনে প্রতিটি বুথেই আধা সেনা মোতায়েন থাকবে। তাই এত সংখ্যক বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তবে রাজ্যের কোন প্রান্ত বা কোনও পর্বের ভোট বেশি সংবেদনশীল, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি। কুলদীপের কথায়, ‘‘কমিশন যে ভাবে নির্দেশ দেবে, সেই ভাবেই কাজ করবে আধা সেনা। আমাদের কাছে সব পর্বের ভোট সমান গুরুত্বপূর্ণ।’’ পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘‘এ সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পেট্রোল বোমা, সুতলি বোমা তৈরি বেড়ে যায়। সক্রিয়তা বাড়ে দুষ্কতীদের। ঝামেলার সুযোগে যেগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ বার স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ধরপাকড়ের কাজ আগে থেকেই শুরু হয়েছে।’’
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ১৩ জন ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে থাকে সিআরপিএফ। সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা দক্ষিণ ২৪ পরগণায় প্রচারে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন। সেই ঘটনার পরে ভিআইপি নিরাপত্তার বিভিন্ন ত্রুটিগুলি নিয়ে সমীক্ষায় বসে সিআরপিএফ। আজ কুলদীপ বলেন ‘‘ওই ঘটনার পরে প্রোটোকলে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশেষ করে জোর দেওয়া হয়েছে ‘এডভ্যান্স সিকিউরিটি লিয়াজ়ঁ’-র উপরে। কোনও ভিআইপি ব্যক্তির সফরের আগে গোটা পর্বটি আগেই ভাগেই মহড়া দিয়ে দেখে নেওয়া হচ্ছে কোথায় ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ অতীতের মতো এ বারও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গ্রাম বাংলার মানুষকে ভয় দেখানো, বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আজ সেই অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি ওই পুলিশ কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের মন্তব্যের ভিত্তিতে আমার কিছু বলা সাজে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy