রাহুল গান্ধীর পদযাত্রা দেখতে ভিড়। ছবি: পিটিআই।
গত বছরের জানুয়ারির শেষে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ যখন কাশ্মীরে পৌঁছেছিল, হাজারে হাজারে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন। হাতে ছিল তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা। রাস্তার দু’ধারে রাহুল গান্ধীর পদযাত্রা দেখতে তাঁরা ভিড় জমিয়েছিলেন।
শুধু রাহুল গান্ধীকে দেখতে সেই ভিড় ছিল না। ২০১৯-এর অগস্টে জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ ও রাজ্যের বিভাজনের পরে গোটা কাশ্মীর কার্যত ঘরবন্দি ছিল। আজ কার্ফু, কাল ইন্টারনেট বন্ধ, পরশু হরতাল— তিন-চার বছর কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ হয়নি। রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ ছিল প্রথম কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি।
গত বছরের মে মাসে মণিপুরে কুকি-মেইতেই সংঘর্ষ শুরুর পরে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ২০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়ে ত্রাণ শিবিরে। গত আট মাস ধরে মণিপুরেও আজ কার্ফু, কাল গুলিগোলা, পরশু ইন্টারনেট বন্ধ চলছে। এই আট মাস রাজনৈতিক সমাবেশ দেখেনি ইম্ফল বা মণিপুর।
আট মাস কার্যত ঘরবন্দি মণিপুরের মানুষ রবিবার থৌবালে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র শুরুতে জনসমাবেশে হাজারে হাজারে ভিড় জমালেন। শ’য়ে শ’য়ে মণিপুরি মহিলা সকাল থেকে বসে রইলেন থৌবালের খংজোম ওয়ার মেমোরিয়ালের ময়দানের পাশের মাঠে। শুধু রাহুলকে দেখতে নন। অনেক দিন পর ভিড়, মেলামেশার স্বাদ নিতেও।
এই সুযোগ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে রাহুল গান্ধী মনে করিয়ে দিলেন, গত মে মাস থেকে মণিপুরে হিংসা চললেও আজ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুরে মানুষের চোখের জল মোছাতে আসেননি। পিতা-মাতা, ভাই-বোন হারানো মানুষকে বুকে টেনে নিয়ে, হাত ধরতে আসেননি। রাহুল বলেন, “লজ্জার কথা। বোধহয় নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি, আরএসএসের কাছে মণিপুর ভারতের অংশ নয়।”
থৌবালের ময়দানে অনেকেই এসেছিলেন মণিপুরের হিংসার আগুনের ছবি নিয়ে। ইম্ফলের কিছু সংগঠন মণিপুরের সঙ্কট নিয়ে পুস্তিকা বিলি করছিলেন। মণিপুরের প্রতি যে অবিচার চলছে, তার বিচারের দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই আবেগকে উস্কে দিয়ে রাহুল বললেন, “বিজেপি, আরএসএসের যে বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, মণিপুর তার চিহ্ন। যে শান্তি, স্নেহ, ভালবাসা মণিপুরের মানুষের কাছে বড় মূল্যবান ছিল, তা খোয়া গিয়েছে। আমরা তা খুঁজে ফেরত আনব।” তাঁর বক্তব্য, মণিপুরের মানুষের মধ্যে বিভাজন, বিদ্বেষ তৈরি করে অন্যায় করেছে। সেই বিভাজন ঘুচিয়ে, ন্যায়ের দাবিতে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ কেবল মাত্র মণিপুর থেকেই শুরু হতে পারত। আর কোথাও থেকে নয়।
মণিপুরে বিজেপি সরকার ইম্ফলের প্রাণকেন্দ্রে রাহুলকে জনসভা করার অনুমতি দেয়নি। বাসযাত্রা শুরুর পরে ইম্ফলের রাস্তায় নেমে রাহুল সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতেও তাঁকে পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হল। রাহুলকে বলা হল বাসে উঠে পড়তে। মণিপুরের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ প্রশ্ন তুললেন, এখন কি মণিপুরে জনসভা, পদযাত্রা করার পরিস্থিতি রয়েছে? মণিপুরের পরিস্থিতির যখন কিছুটা উন্নতি হচ্ছে, তখন রাহুল গান্ধী কি গণ্ডগোল পাকাতে এসেছেন?
সকাল থেকেই মুম্বইয়ের কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরার দলত্যাগ কংগ্রেস নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে রেখেছিল। মণিপুর থেকে যাত্রা শুরু হয়ে যে মুম্বইয়ে যাত্রা শেষ হবে, মিলিন্দ সেই মুম্বইয়ের নেতা। তা-ও আবার মিলিন্দ রাহুলের তরুণ ব্রিগেডের সদস্য বলে পরিচিত ছিলেন। কংগ্রেস অভিযোগ তুলল, রাহুলের কর্মসূচি থেকে নজর ঘোরাতেই বিজেপি মিলিন্দকে আজকের দিনে দলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।
ভারত জোড়ো যাত্রার শেষে শ্রীনগরে রাহুল গান্ধীর জনসভায় বাধা তৈরি করেছিল তুষারপাত। সেই তুষারপাতের মধ্যে দাঁড়িয়েই রাহুলকে শ্রীনগরে বক্তৃতা করতে হয়েছিল। রবিবার মণিপুরে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র শুরুতে বাধ সাধল দিল্লির ঘন কুয়াশা। সেই কুয়াশায় রাহুল-সহ কংগ্রেস নেতাদের বিমান প্রায় তিন ঘণ্টা দেরিতে উড়ল। থৌবালের জনসভাও শুরু হল প্রায় তিন ঘন্টা দেরিতে। বাসযাত্রা শুরু করতে করতে পশ্চিমে ঢলে পড়ল সূর্য।
রাতে রাহুলের বাস যখন গিয়ে পৌঁছল সেকমাইয়ে, তখন সেখানে রাত। তারই মধ্যে অসংখ্য মহিলা মশাল জ্বালিয়ে পৌঁছে গেলেন রাহুলকে স্বাগত জানাতে। রাতে সেকমাইয়েই বিশেষ ভাবে তৈরি কন্টেনারে রাত্রিবাস করবেন রাহুল ও তাঁর সঙ্গীরা। সকাল থেকে ফের শুরু হবে যাত্রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy